“যদি তুমি নারী হতে তাহলে অবশ্যই মেহেদি দ্বারা তোমার হাতের নখগুলো পরিবর্তন করে নিতে।” হাদিসটি কি সহিহ? নারীদের হাতে মেহেদি ব্যবহারের বিধান।
▬▬▬▬ ❂❂❂▬▬▬▬
প্রশ্ন: নিম্নোক্ত হাদিসটি কি সহিহ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনও এক মহিলা সাহাবিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তুমি যদি নারী হতে তাহলে অবশ্যই মেহেদি দ্বারা তোমার হাতের নখগুলো পরিবর্তন করে নিতে।” ইসলামে নারীদের হাতে মেহেদি ব্যবহারের বিধান কি?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:
নিম্নে উক্ত হাদিসটির মান এবং মহিলাদের হাতে মেহেদি ব্যবহারের ব্যাপারে ইসলামের বিধান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:
❑ হাদিসটির মান:
উপরোক্ত হাদিসটি এবং এ সংক্রান্ত বর্ণিত হাদিসগুলো সবই জইফ (দুর্বল)। যেমন:
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أَنَّ امْرَأَةً مَدَّتْ يَدَهَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكِتَابٍ فَقَبَضَ يَدَهُ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَدَدْتُ يَدِي إِلَيْكَ بِكِتَابٍ فَلَمْ تَأْخُذْهُ فَقَالَ إِنِّي لَمْ أَدْرِ أَيَدُ امْرَأَةٍ هِيَ أَوْ رَجُلٍ قَالَتْ بَلْ يَدُ امْرَأَةٍ قَالَ لَوْ كُنْتِ امْرَأَةً لَغَيَّرْتِ أَظْفَارَكِ بِالْحِنَّاءِ
“একদিন জনৈকা মহিলা হাতে চিঠি নিয়ে পর্দার আড়াল হতে হাত বের করে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে ইশারা করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাতটি গুটিয়ে ফেলে বললেন, “আমি বুঝতে পারলাম না, এটা কি কোন পুরুষের হাত না কোন নারীর হাত!”
তখন মহিলাটি বলল: এটা মহিলার হাত।
তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “যদি তুমি নারী হতে তাহলে অবশ্যই মেহেদি দ্বারা তোমার হাতের নখগুলো পরিবর্তন করে নিতে।” [আবু দাউদ ৪১৬৬, নাসায়ী ৫০৮৯]
◯ উপরোক্ত হাদিসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের অভিমত:
◈ ইবনুল জাওযি রাহ. বলেন, এটি منكر মুনকার (মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল) [আল ইলালুল মুতানাহিয়াহ ২/৬২৮]
◈ ইবনে হাজারও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেন। [আত তালখিসুল হাবির, ৩/৮৫৭]
◈ শুয়াইব আরনাবুত বলেন, إسناده ضعيف হাদিসটির সনদ দুর্বল। [তাখরিজ সুনানে আবু দাউদ/৪১৬৬ ও তাখরিজ মুসনাদে ইমাম আহমদ, ২৬২৫৮]
◈ শাইখ আলবানি বলেন, ضعيف বা দুর্বল। [হেদায়াতুর রুওয়াহ, ৪৩৯৩]
◈ মুসনাদে আহমদ-এর তাহকিক কারীগণ বলেন, إسناده ضعيف لضعف مطيع بن ميمون العنبري
“মুতি বিন মাইমুন আল আম্বরি নামক দুর্বল বর্ণনাকারীর কারণে উক্ত হাদিসটি সনদ দুর্বল।” এই ব্যক্তি সম্পর্কে ইমাম জাহাবি এবং ইবনে হাজার বলেন, সে মাজহুল বা অজ্ঞাত পরিচয়।
➤ উল্লেখ্য যে, এ জাতীয় আরও কিছু হাদিস এসেছে। কিন্তু কোনটাই সহিহ নয়।
● যেমন: এক হাদিসে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেহেদি দ্বারা হাতের তালু রঙ্গানো ছাড়া নারীর বয়াত নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, মেহেদি বিহীন নারীর হাত হিংস্র জন্তুর মত।” [ত্বাবারানী ও আবু দাউদ]
عن عائشة أن هندا بنت عتبة قالت: يا نبي الله بايعني، قال: “لا أبايعك حتى تغيري كفيك، كأنهما كفا سبع
● অন্য একটি হাদিসে এসেছে যে, তিনি হলুদ দ্বারা হাতের তালু রং না করা পর্যন্ত নারীর বয়াত নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। [বাযযার, ত্বারারানি কাবির ওয়া আওসাত]
رأيت رسول الله يبايع النساء عام الفتح على الصفا، فجاءت امرأة كأن يدها يد رجل، فأبى أن يبايعها حتى غيرت يدها بصفرة
● অন্য এক হাদিসে এসেছে, তিনি খিজাব (কলপ) দ্বারা হাতের তালু না রঙ্গানো পর্যন্ত বয়াত গ্রহণের অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। [ত্বাবারানি কাবির ওয়াল আওসাত]
أتيت رسول الله لأبايعه، فقال”:اذهبي فاختضبي، ثم تعالي حتى أبايعك
❑ মহিলাদের হাতে মেহেদি ব্যবহারের বিধান কী?
শাইখ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয় যে, মহিলাদের জন্য হাতে মেহেদি ব্যবহার করা কি ওয়াজিব? কারণ কেউ কেউ বলে থাকে যে, কোনও মহিলা যদি হাতে মেহেদি ব্যবহার না করে তাহলে তা পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়।
তিনি উত্তরে বলেন, “এতে কোনও সন্দেহ নাই যে, মেহেদি দ্বারা তাদের হাতের রং পরিবর্তন করা মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে একাধিক হাদিসে এসেছে যদিও সেগুলো দুর্বলতা মুক্ত নয়।
উত্তম হল, মেহেদি দ্বারা হাতের রং পরিবর্তন করা। কিন্তু ওয়াজিব বলা বা হাত সাদা রেখে দেওয়া হারাম বলার কোনও ভিত্তি আছে বলে জানি না। কিন্তু উত্তম হল, মেহেদি দ্বারা হাত পরিবর্তন করা যেন তা পুরুষদের হাতের মত না হয়। এটাই উত্তম। কারণ এ ব্যাপারে একাধিক হাদিসে এসেছে। তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগ এবং তৎপরবর্তী সব যুগের নারীদের মাঝে এটি একটি প্রচলিত রীতি। এটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। সুতরাং মহিলাদের ক্ষেত্রে এটিই উত্তম।” [binbaz]
➤ পূর্বোল্লিখিত হাদিসগুলো সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের সনদ বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:
أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ مَنْصُورٍ قَالَ حَدَّثَنَا الْمُعَلَّى بْنُ أَسَدٍ قَالَ حَدَّثَنَا مُطِيعُ بْنُ مَيْمُونٍ حَدَّثَتْنَا صَفِيَّةُ بِنْتُ عِصْمَةَ عَنْ عَائِشَةَ
أَنَّ امْرَأَةً مَدَّتْ يَدَهَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكِتَابٍ فَقَبَضَ يَدَهُ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَدَدْتُ يَدِي إِلَيْكَ بِكِتَابٍ فَلَمْ تَأْخُذْهُ فَقَالَ إِنِّي لَمْ أَدْرِ أَيَدُ امْرَأَةٍ هِيَ أَوْ رَجُلٍ قَالَتْ بَلْ يَدُ امْرَأَةٍ قَالَ لَوْ كُنْتِ امْرَأَةً لَغَيَّرْتِ أَظْفَارَكِ بِالْحِنَّاءِ
قال محققو مسند أحمد:
إسناده ضعيف لضعف مطيع بن ميمون العنبري، وقال ابن عدي: له حديثان غير محفوظين. قلنا: وعد هذا أحدهما، وصفية بنت عصمة انفرد بالرواية عنها مطيع بن ميمون، وجهلها الحافظان الذهبي وابن حجر.
وأخرجه البيهقي في “السنن” 7/86-87، والمزي في “تهذيب الكمال” (في ترجمة مطيع بن ميمون) من طريق الإمام أحمد، بهذا الإسناد.
وأخرجه أبو داود (4166) – ومن طريقه البيهقي في “الشعب” (6419) -، والنسائي في “المجتبى” 8/142، وفي “الكبرى” (9364) ، والطبراني في “الأوسط” (3777) و (6702) ، وابن عدي 6/2454-2455 و2455، والبيهقي 7/86 من طرق عن مطيع بن ميمون، به.
وجاء في رواية الطبراني (6702) إن صفية هي أم مطيع بن ميمون.وأخرجه أبو داود (4165) من طريق غبطة بنت عمرو المجاشعية، عن عمتها أم الحسن، عن جدتها، عن عائشة أن هندا بنت عتبة قالت: يا نبي الله بايعني، قال: “لا أبايعك حتى تغيري كفيك، كأنهما كفا سبع”. وإسناده ضعيف مسلسل بالمجاهيل: غبطة وعمتها أم الحسن وجدتها.
وانظر ما سلف برقم (24861) .
وفي الباب عن مسلم بن عبد الرحمن، عند البزار (2993) ، والطبراني في “الكبير” 19/ (1054) ، وفي “الأوسط” (1118) .ولفظه: رأيت رسول الله يبايع النساء عام الفتح على الصفا، فجاءت امرأة كأن يدها يد رجل، فأبى أن يبايعها حتى غيرت يدها بصفرة.
قال ابن حبان في “الثقات” 3/382: ما أراه محفوظا. قلنا: وفي إسناده عباد بن كثير الرملي، وهو ضعيف، وشميسة بنت نبهان لم نقع لها على ترجمة.
وعن السوداء، عند الطبراني في “الكبير” 24/ (771) ، وفي “الأوسط” (716) ولفظه: أتيت رسول الله لأبايعه، فقال”:اذهبي فاختضبي، ثم تعالي حتى أبايعك. “وفي إسناده نائلة عن أم عاصم. ولم نقع لنائلة على ترجمة.
وعن ابن عباس، عند البزار (3013) . ولفظه نحو حديث السوداء. وفي إسناده عبد الله بن عبد الملك الفهري قال ابن حبان: لا يشبه حديثه الثقات، يروي العجائب، وقال العقيلي: منكر الحديث
أهـ. وفيه أيضا ليث بن أبي سليم وهو ضعيف
[majles.alukah] আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬ ❂❂❂▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।