আমি অবৈধ রিলেশন থেকে তওবা করে বের হয়ে এসেছি কিন্তু আমার এক্স বয় ফ্রেন্ড আমাকে রিলেশন অব্যাহত রাখতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে

প্রশ্ন: আমার একজন ছেলের সাথে রিলেশন ছিল প্রায় তিন বছর ধরে। আমি ছোটবেলা থেকেই নামাজ-রোজা করি কিন্তু আমি এ ব্যাপারে জানতাম না যে, বিয়ের আগে এমন সম্পর্ক হারাম আর এর ভয়াবহতা এত বিশাল। আমি পরে জানতে পেরেছি। আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন! আল হামদুলিল্লাহ।
তারপর আমি এ হারাম সম্পর্ক থেকে বের হয়ে গিয়েছি। কিন্তু সেই ছেলে আমাকে ছাড়বে না। সে আমাকে বিয়ে করবে। কিন্তু আমার পরিবার কোনদিনই এ সম্পর্ক মানে নি। তারা জানতো যে, আমার সাথে একটা ছেলের সম্পর্ক। তবে একরকম চুরি করে সম্পর্কটা এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি যখনি এ বিষয়ে জানতে পেরেছি তখনই সরে আসতে চেয়েছি। কিন্তু সে আমাকে ছাড়ছে না। বিভিন্ন অপবাদ দিচ্ছে।
পরে না পেরে তাকে ভালোভাবে বুঝালাম যে, আল্লাহর জন্য এ সম্পর্ক ছাড়তেই হবে। নয় তো জেনার গুনাহ আমল নামায় উঠতে থাকবে। তাকে আরও বললাম যে, তাহলে আমাকে বিয়ে করে ফেলো। তোমার ফ্যামিলিকে আমাদের বাড়িতে পাঠাও।
সে বলল, আমি এখন বেকার। সময় লাগবে।
আমি বললাম, তাহলে আমার পক্ষে সম্ভব না এভাবে এ রিলেশন কনটিনিউ করা।
সে বলল, আচ্ছা সব মানছি। কথা দিচ্ছি, এতদিন পরেই তোমাকে বিয়ে করবো কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক। (সে কয়েক মাস টাইম নিয়েছে।) কিন্তু যোগাযোগ অফ করতে পারবা না। যদি করো তো আমি মানবো না। তোমার সম্পর্কে খারাপ কিছু ভাববো। সন্দেহ তো করবই যে, তুমি অন্য কারো জন্য এমন করছ।
সে বলল, দরকার হলে খারাপ কিছু হবে। যোগাযোগ অফ করতে পারবা না।
এ পরিস্থিতি আমার করণীয় কি? আমি আল্লাহর জন্য সব করতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি তো মেয়ে। বদনামের ভয় হয়। আমার পরিবারের যথেষ্ট সম্মান আছে।
আমি এসব থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। নিজেকে আল্লাহর দেয়া বিধানের ওপর পুরোপুরি সমর্পণ করতে চাই। এতটুকুও খাঁদ রাখতে চাই না। প্লিজ হেল্প মি।

উত্তর:

আল হামদুলিল্লাহ অবশেষে আপনি নিজের ভুল বুঝতে পরে হেদায়েতের পথে এসেছেন এজন্য আপনাকে অভিনন্দন। দুআ করি, মহান আল্লাহ আপনাকে ঈমান ও তাকওয়ার উপর অবিচল রাখুন মৃত্যু পর্যন্ত। আমীন।

অত:পর, বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত হল, কেউ যদি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তাকে অবশ্যই সকল সমস্যা ও সঙ্কট থেকে মুক্তির পথ বের করে দেন আর কেউ আল্লাহর নাফরমানী বা পাপাচার থেকে ফিরে আসতে চাইলে তিনি তাকে সাহায্য করেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مِنۡ أَمۡرِهِ
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” [সূরা তালাক: ৪]
তিনি আরও বলেন:
وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا – وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য (বিপদ-সঙ্কট থেকে) উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন ‎যা সে কল্পনাও করতে পারে না।” (সূরা তালাক: ২ ও ৩ নং আয়াত)‎
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللَّهُ ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ، وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللَّهُ

“যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে চাইবে আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন, যে ব্যক্তি অন্যের দিকে অমুখাপেক্ষী থাকতে চাইবে আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চাইবে আল্লাহ তাকে ধৈর্যধারণের ক্ষমতা দিবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)

সুতরাং
আপনি যেহেতু গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অবৈধ সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেহেতু আল্লাহর উপর ভরসা করে আপনার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকুন। কারণ এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত এবং এটাই আবশ্যক।
তারপরও শয়তান আপনার মনে নানা কুমন্ত্রণা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন তথা বেশি বেশি আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম অর্থ: “বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি” পাঠ করুন।
অতীতের গুনাহের জন্য লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে আল্লাহর নিকট তওবা করার পাশাপাশি জেনে বুঝে আর কখনো এ পথে পা বাড়াবেন না মর্মে তাঁর দরবারে দৃঢ় অঙ্গীকার করা অপরিহার্য। (এগুলো তওবার শর্ত।)
আল্লাহর নিকট বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য দুআ করুন। আর এজন্য বিশেষ করে সেজদা অবস্থায়, ভোররাতে এবং অন্যান্য দুআ কবুলের সময়গুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।
সে ছেলে যদি আপনাকে হুমকি-ধমকি দেয় তাহলে অনতি বিলম্বে বিষয়টি আপনার অভিভাবককে জানান।
সে সীমালঙ্ঘন করবে বলে আশঙ্কা করলে থানায় জিডি করার ব্যবস্থা করুন।
এবং নিজে পরিপূর্ণ হিজাব সহকারে সতর্কভাবে চলাফেরা করুন। যথাসাধ্য একাকী কোথাও যাবেন না।
আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন এবং যে ছেলের সাথে আপনার রিলেশন ছিল তাকেও হেদায়েত করুন। আমীন।
▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।