পিতামাতা যদি সন্তানের প্রতি অসন্তুষ্ট অবস্থায় দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করে তাহলে সন্তান কিভাবে আল্লাহর নিকট ক্ষমা অর্জন করবে?

প্রশ্ন: কেউ যদি তার বাবা-মা’র জীবদ্দশায় ভুল বশত: বা দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকার কারণে তাদের সাথে কোন বেয়াবদি মূলক আচরণ করে ফেলে আর তাদের মৃত্যুর পূর্বে যদি মাফ চেয়ে নিতে না পারে তাহলে এখন তার করণীয় কি? কিভাবে পিতামাতার সাথে কৃত অন্যায়ের জন্য ক্ষমা পেতে পারে?

উত্তর:
এ কথা সর্বজন বিদিত যে, ইসলামে পিতামাতাকে যে সম্মান দেয়া হয়েছে তা এক কথায় নজির বিহীন। এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় অসংখ্য বক্তব্য এসেছে। তন্মধ্যে অন্যতম হল, নিম্নোক্ত আয়াতটি:

❂ আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلاً كَرِيماً

“আর তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং ধমক দিও না এবং তাদের সাথে বলো সম্মান জনক কথা।” (সূরা ইসরা/ বনী ইসরাঈলঃ ২৩)

এই আয়াতে আল্লাহর ইবাদতের পরক্ষণেই পিতামাতার প্রতি সম্মান ও দয়াসুলভ সদ্ব্যাবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, হাদিসে পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জনকে স্বয়ং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ কেউ তার পিতামাতাকে অসন্তুষ্ট রেখে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। যেমন:

❂ হাদিসে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:رَضَىَ الرَّبِّ فِىْ رِضَى الْوَالِدِ وَسُخْطُ الرَّبِّ فِىْ سُخْطِ الْوَالِدِ

আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে।”
(তিরমিযী ১৮৯৯, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৫১৫, মুসনাদুল বাযযার ২৩৯৪, আল মুসতাদরাক ৭২৪৯)

অত:এব প্রত্যেক সন্তানের কর্তব্য, তার পিতামাতার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান বজায় রেখে আচরণ করা এবং তাদেরকে কোনোভাবে কষ্ট না দেয়া।
কেননা, তাদেরকে কষ্ট দেয়া বা তাদের সাথে অসদাচরণ করা কবিরা গুনাহ এবং জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ। (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন)

কখনো কোনও কারণে তাদের প্রতি বেআদবি বা কষ্টদায়ক আচরণ করে ফেললে কর্তব্য হল, তৎক্ষণাৎ তাদেরকে নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাদেরকে খুশি করার চেষ্টা করা।

কিন্তু কেউ যদি পিতা-মাতার জীবদ্দশায় তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে ফেলে কিন্তু তাদের নিকট ক্ষমা চাওয়ার পূর্বেই তারা দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করে চলে যায় তাহলে কীভাবে এই ভয়ানক গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে?

◈ নিম্নে এ ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর নির্যাস থেকে কয়েকটি করণীয় সংক্ষেপে তুলে ধরা হল:

■ ১) অতীত অন্যায় আচরণের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন:
«وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ»
“তিনি তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন,‌ পাপসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমরা যা কিছু করো তিনি সে সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।” (সূরা শুরা: ২৫)
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«الْإِسْلَامُ يُجبُّ مَا قَبْلَهُ وَالتَّوْبَةُ تجبُّ مَا كَانَ قَبْلَهَا»
“ইসলাম পূর্বের সকল গুনাহ মিটিয়ে দেয় এবং তওবা তার পূর্বের সকল গুনাহ মোচন করে”। (মুসনাদে আহমদ: ১৯৮/৭ আল্লামা হাইসামী বলেন, হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আহমদ ও তাবরানী। উভয়ের বর্ণনা কারীগণ বিশুদ্ধ।)
■ ২) সেই সাথে কর্তব্য হল, পিতা-মাতার জন্য অধিক পরিমাণে দোয়া করা।
■ ৩) তারা ঋণ রেখে গেলে সম্পদ বণ্টনের পূর্বে তাদের পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে ঋণ পরিশোধ করা।
■ ৪) তারা কিছু ওসিয়ত করে গেলে তাদের বৈধ ওসিয়ত পূর্ণ করা।
■ ৫) তাদের উদ্দেশ্যে সন্তানের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য দান-সদকা করা।
■ ৬) তাদের পক্ষ থেকে হজ ও ওমরা আদায় করা (যদি নিজের হজ উমরা আদায় করা হয়ে থাকে)।
■ ৭) তাদের আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করা, তাদের সাথে সদাচরণ করা, তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া, তাদেরকে যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতা করা ইত্যাদি।
উপরোক্ত কাজগুলোর মাধ্যমে আশা করা যায় দয়াময় আল্লাহ তার উক্ত গুনাহ মোচন করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA

Share: