কুরআনে জান্নাতি হুর এর বিবরণ:
জান্নাতে পুরুষদেরকে হুর দেয়া হবে কিন্তু মহিলাদের জন্য কী আছে?
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
প্রশ্ন: কুরআনে হুর দ্বারা কী উদ্দেশ্যে? হুর দ্বারা কি কেবল জান্নাতি নারী উদ্দেশ্য, না কি পুরুষ সঙ্গীও বুঝায়?
উত্তর:
হুর (حور ) শব্দটি একবচন। এর বহুবচন হল, حوراء (হাওরা)। এর দ্বারা উদ্দেশ্যে হল: সুন্দরী তরুণী জান্নাতি নারী। কুরআন ও হাদিসে এ কথা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। যুগে যুগে মুফাসসিরগণ এ অর্থই করেছেন। কুরআন ও হাদিসে হুর শব্দটি নারীর জন্য ‘পুরুষ সঙ্গী’ অর্থে কখনো ব্যবহৃত হয় নি।
নিম্নে কুরআন থেকে এর স্বপক্ষে কিছু প্রমাণ উপস্থাপনা করা হল:
◈ ১) আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ
“আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিব।” (সূরা দুখান: ৫৪ ও সূরা তুর: ২০)
এ আয়াতরে তাফসীরে তাফসীর কারকগণ কী বলেন?
– ক) ইমাম ত্ববারী রহঃ বলেন, “আমি ঐ সকল মুত্তাকি-পরহেজগার পুরুষদের সাথে আয়তলোচনা হুর তথা জান্নাতি নারীদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করব।” (দেখুন: তাফসির ত্ববারী, সূরা দুখান ৫৪ নং আয়াত এবং তূরের ২০ নং আয়াতের তাফসির।)
– খ) ইমাম ইবনে কাসির রহ. বলেন, “আমি জান্নাতি হুরদেরকে তাদের সৎ সঙ্গিনী এবং সুন্দরী স্ত্রী হিসেবে নির্ধারণ করে দিব।” (দেখুন: তাফসিরে ইবনে কাসিরের উক্ত আয়াত দ্বয়ের তাফসির)
◈ ২) এই হুরদের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এভাবে বর্ণনা করেন:
إِنَّ لِلْمُتَّقِينَ مَفَازًا – حَدَائِقَ وَأَعْنَابًا – وَكَوَاعِبَ أَتْرَابًا
“পরহেজগারদের জন্য রয়েছে সাফল্য: উদ্যান, আঙ্গুর, সমবয়স্কা, র্পূণ যৗবনা তরুণী। (সূরা নাবা: ৩১, ৩২ ও ৩৩)
◈ ৩) তিনি আরও বলেন,
فِيهِنَّ قَاصِرَاتُ الطَّرْفِ لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلَا جَانٌّ
“তথায় থাকবে আনত নয়না রমণীগন-কোন জিন ও মানব ইতোপূর্বে যাদের ব্যবহার করে নি” (সূরা আর রহমান: ৫৬) ইমাম ত্ববারী উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: “মুজাহিদ রহ. ও কাতাদা রহ. বলেন, “তারা হবেন এমন মহিলা যারা তাদরে স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষদের দিকে দৃষ্টি দিবে না।” (দেখুন: তাফসীর ত্ববারী, সূরা আর রাহমান ৫৭ নং আয়াতরে তাফসীর)
◈ ৪) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
كَأَنَّهُنَّ الْيَاقُوتُ وَالْمَرْجَانُ
“প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগণ।” (সূরা আর রাহমান: ৫৮)
◈ ৫) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
فِيهِنَّ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ
“সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ।” (সূরা আর রাহমান: ৭০)
◈ ৬) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ
“তাঁবুতে অবস্থান কারীনী হুরগণ।” (সূরা আর রহমান:৭২) এখানে حُورٌ مَّقْصُورَاتٌ শব্দটি স্ত্রী লিঙ্গ।
◈ ৭) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
وَحُورٌ عِينٌ- كَأَمْثَالِ اللُّؤْلُؤِ الْمَكْنُونِ
“তথায় থাকবে আনত নয়না হুরগণ আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়। (সূরা ওয়াকয়িাহ: ২২ ও ২৩) অর্থাৎ হুরগণ সংরক্ষিত মনি-মুক্তার মত চিত্তাকর্ষক ও আকর্ষণীয় হবে। কোন হাত তাদেরকে স্পর্শ করে নি।
◈ ৮) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
إِنَّا أَنشَأْنَاهُنَّ إِنشَاءً – فَجَعَلْنَاهُنَّ أَبْكَارًا – عُرُبًا أَتْرَابًا
“অতঃপর তাদেরকে করছি চির কুমারী, কামিনী, সমবয়স্কা।” (সূরা ওয়াকয়িাহ: ৩৫, ৩৬ ও ৩৭)
উপরোক্ত আয়াত সহ আরও বহু আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, ‘হুর’ হল জান্নাতের সুদর্শনা তরুণী নারী। এ সম্পর্কে বহু হাদিসও রয়েছে । সুতরাং পুরুষকে হুর বলা সরাসরি কুরানের সাথে সাংঘর্ষিক। আমার জনা মতে পূর্ববর্তী কোন মুফাসসির হুরকে পুরুষ অর্থে উল্লেখ করেন নি। কেউ করলেও কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী ঠিক নয়। আল্লাহ ভাল জানেন।
তবে এখন প্রশ্ন হল, আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে জান্নাতে হুর দিবেন কিন্তু নারীদেরকে কী দিবেন? এ ব্যাপারে আল্লামা মোহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমিন (রহঃ:) কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি চমৎকার উত্তর দিয়েছেন। নিম্নে প্রশ্ন এবং উত্তরটি তুলে ধরা হল:
❑ প্রশ্ন: জান্নাতে পুরুষদের জন্য হুর থাকার কথা বলা হয়েছে। প্রশ্ন হল মহিলাদের জন্য কী আছে?
উত্তর:
জান্নাতিদের নেয়ামত বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ
“সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমরা দাবী কর। (সূরা হা-মীম সিজদাহ: ৩১-৩২)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ وَأَنْتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
“এবং তথায় রয়েছে মন যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়। তোমরা সেখানে চিরকাল থাকবে” (সূরা যুখরুফঃ ৭১)
এটা জানা কথা যে, মন যা চায়, তার মধ্যে সর্বোত্তম হল বিবাহ করার মনোবাসনা। তা জান্নাতিদের জন্য অর্জিত হবে। চাই পুরুষ হোক কিংবা মহিলা হোক। মহিলাকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তাঁকে তাঁর দুনিয়ার স্বামীর সাথে বিবাহ দিয়ে দিবেন।
যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন,
رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدْتَهُم وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
“হে আমাদের পালনকর্তা, আর তাদেরকে প্রবেশ করাও জান্নাতে আদন (চিরকাল বসবাসের জান্নাত) এ যার ওয়াদা আপনি তাদরেকে দিয়েছেন এবং তাদের বাপ-দাদা, পত্নী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।” (সূরা মুমিন: ৮)
আর দুনিয়াতে যদি অবিবাহিত থাকে তাহলে জান্নাতে তার নয়ন জুড়ানো কোন পুরুষের সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করবেন।
[ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম: প্রশ্ন নং ৫৮, আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রহ.]
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।