আল্লাহর নবী ইদরিস, খিজির, ইলিয়াস এবং ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) কি এখনো জীবিত আছেন?

প্রশ্ন: “হযরত ইদরিস, খিজির, ইলিয়াস এবং ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) এখনো জীবিত আছেন।” এ কথাটা কি সঠিক?
উত্তর:
নিম্নে এ বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহ ও মুহাক্কিক আলেমদের অভিমত অনুযায়ী একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা পরিবেশন করা হল:

◍◍ ১. ঈসা আলাইহি সালাম:

ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা সশরীরে জীবিত অবস্থায় আসমানে উত্তোলন করেছেন। তিনি সেখানে জীবিত আছেন। কিয়ামতের পূর্বে মাহদীর জামানায় পুনরায় উম্মতে মুহাম্মদি হিসেবে দুনিয়াতে আগমন করবেন। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত এর আকিদা (বিশ্বাস)।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا بَل رَّفَعَهُ اللَّـهُ إِلَيْهِ
“আর নিশ্চয়ই তাঁকে (ঈসা আলাইহিস সালাম কে) তারা হত্যা করেনি। বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে।” (সূরা নিসা: ১৫৭ ও ৫৮) তিনি আল্লাহর অপার কুদরতে অদ্যবধী ১ম আসমানে জীবিত অবস্থায় আছেন। কিয়ামতের পূর্বে পুনরায় তার আগমন ঘটবে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
ইবনে মুসাইয়িব রা. হতে বর্ণিত যে, তিনি হযরত আবু হুরায়রা রা. কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে,
«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ»
‘‘ঐ আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। অচিরেই ন্যায়-পরায়ণ শাসক হিসাবে ঈসা বিন মরিয়ম তোমাদের মাঝে আগমন করবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিজিয়া রহিত করবেন।” [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: নবীদের সম্পর্কে হাদিস, মুসলিম, অধ্যায়: ঈসা (আ.) এর অবতরণ।]

◍◍ ২. খিজির আলাইহিস সালাম:

খিজির আ. জীবিত থাকার‍ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে দ্বিমত দেখা যায়। তবে অধিক বিশুদ্ধ মতে তিনও মৃত্যু বরণ করেছেন।

ইবনুল জাওযি রহঃ খিজির জীবিত থাকা-না থাকা প্রসঙ্গে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। যার নাম: عجالة المنتظر في شرح حال الخضر (উজালাতুল মুনতাযির ফী শারহি হালিল খাযির) এখানে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, খিজির জীবিত থাকার পক্ষে যে সকল হাদিস মারফু সূত্রে পেশ করা হয়ে থাকে সেগুলোকে বানোয়াট এবং সাহাবি-তাবেঈদের থেকে বর্ণিত উক্তিগুলো জইফ বা দুর্বল।

এ ব্যাপারে শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. বলেন,
أما الخضر فالصحيح أنه مات من دهر طويل قبل مبعث النبي عليه الصلاة والسلام، وليس لوجوده حقيقة، بل هذا كله باطل وليس له وجود، وهذا هو الصحيح الذي عليه المحققون من أهل العلم، فالخضر عليه السلام مات قبل مبعث النبي عليه الصلاة والسلام، بل قبل مبعث عيسى عليه السلام.
“আর খিজির এর ব্যাপারে সঠিক কথা হল, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়ত প্রাপ্তির দীর্ঘকাল পূর্বেই মারা গেছেন। তার বেঁচে থাকা সংক্রান্ত কথা-বার্তার কোন বাস্তবতা নেই বরং এগুলো সব বাতিল ও ভিত্তিহীন। এটিই মুহাক্কিক আহলুল ইলমদের অভিমত। সুতরাং খিজির আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বরং ঈসা আ. এর নবী হওয়ার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করেছেন।”

◍◍ ৩. ইদরিস ও ইলিয়াস (আলাইহিমাস সালাম):

এ দু জন সম্মানিত নবীর জীবিত থাকার কথা ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়।

ইবনে কাসির রহ. বলেন,
وقد قدمنا قول من ذكر أن إلياس والخضر يجتمعان في كل عام من شهر رمضان ببيت المقدس وأنهما يحجان كل سنة ويشربان من زمزم شربة تكفيهما إلى مثلها من العام المقبل، وأوردنا الحديث الذي فيه أنهما يجتمعان بعرفات كل سنة، وبينا أنه لم يصح شيء من ذلك، وأن الذي يقوم عليه الدليل أن الخضر مات، وكذلك إلياس عليهما السلام. انتهى
والله أعلم.
“আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি যে, “ইলিয়াস এবং খিজির প্রতি বছর রমজান মাসে বায়তুল মাকদিসে সম্মিলিত হন, প্রতিবছর হজ করে এবং জমজম পানি এমনভাবে পান করে যা তাদের জন্য আগামী বছর পর্যন্ত যথেষ্ট হয়ে যায়” এবং আমরা যে হাদিসটি উল্লেখ করেছি যে, “তারা প্রতিবছর আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হয় এবং এটাও বলেছি যে, এগুলোর কোনটাই সঠিক নয় বরং যে ব্যাপারটি দলিল দ্বারা প্রমাণিত যে, খিজির আ. মৃত্যুবরণ করেছেন। অনুরূপভাবে ইলিয়াস আ. ও।” (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ)

➧➧ মিরাজের রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চতুর্থ আসমানে আল্লাহর নবী ইদরিসের সাক্ষাত পেয়েছিলেন। এর ব্যাখ্যা কি?

মিরাজের রাতে চতুর্থ আসমানে ইদরিস আ. কে (এবং অন্যান্য আসমানে অন্য নবীদেরকে) দেখার ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন, তা ছিল তাদের আত্মাগুলোকে তাদের দেহের আকৃতিতে প্রদত্ত রূপ। তিনি বলেন,
وَأَمَّا رُؤْيَتُهُ وَرُؤْيَةُ غَيْرِهِ مِنْ الْأَنْبِيَاءِ لَيْلَةَ الْمِعْرَاجِ فِي السَّمَاءِ لَمَّا رَأَى آدَمَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَرَأَى يَحْيَى وَعِيسَى فِي السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ وَيُوسُفَ فِي الثَّالِثَةِ وَإِدْرِيسَ فِي الرَّابِعَةِ وَهَارُونَ فِي الْخَامِسَةِ وَمُوسَى فِي السَّادِسَةِ وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّابِعَةِ أَوْ بِالْعَكْسِ فَهَذَا رَأَى أَرْوَاحَهُمْ مُصَوَّرَةً فِي صُوَرِ أَبْدَانِهِمْ .

◯◯ নিম্নোক্ত হাদিসটি এসব বিতর্ক অবসানের জন্য যথেষ্ট:

যদি বিতর্কের স্বার্থে ধরেও নেয়া হয় যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ পর্যন্ত কোন নবী-রাসূল বা পূর্ববর্তী কোনও কোন পুণ্যবান ব্যক্তি ভূপৃষ্ঠে জীবিত ছিলেন কিন্তু নিম্নোক্ত হাদিসের আলোকে প্রমাণিত হয়ে, তাঁর যুগ থেকে ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তাদের সকলের মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে। হাদিসটি নিম্নরূপ:

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর শেষ জীবনে ইশার সালাত আদায় করে সালাম ফিরানোর পর বললেন,
أَرَأَيْتَكُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ فَإِنَّ رَأْسَ مِائَةٍ لاَ يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ الْيَوْمَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ أَحَدٌ
“আজকের এ রাত সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? আজ থেকে নিয়ে একশ বছরের মাথায় আজ যারা ভূপৃষ্ঠে আছে তাদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।” [সহিহ বুখারি, ৯/ সালাতের ওয়াক্তসমূহ, পরিচ্ছেদ: ৩৯১। ইশার পর জ্ঞানচর্চা ও কল্যাণকর বিষয়ের আলোচনা।]

এখান থেকে বুঝা গেল, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে রাতে এ কথা বলেছিলেন সে রাত থেকে নিয়ে ১০০ বছরের মধ্যে এই ভূপৃষ্ঠে কোন মানুষ বেঁচে নেই। তবে ঈসা আ. এর ব্যাপারটি ভিন্ন। তিনি ভূপৃষ্ঠে অবস্থান করেন না বরং একদল ইহুদি পাপিষ্ঠ যখন তাকে হত্যা করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এঁটেছিল তখন মহান আল্লাহ তাঁকে সশরীরে জীবিত অবস্থায় আসমানে উত্তোলন করে নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জীবিত আছেন। কিয়ামতের পূর্বে পুনর্বার তার আগমন ঘটবে। এটি কিয়ামতের বড় আলামত সমূহের অন্যতম। (নিশ্চয় আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী)।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।