কুরআন তিলাওয়াত ও তেলাওয়াতে সেজদা সম্পর্কিত কতিপয় প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্ন:
ক. মুসহাফ (গ্রন্থ) থেকে কুরআন মাজীদ পড়লে যে নেকি হয় কুরআনের অ্যাপস থেকে পড়লে একই নেকি হবে?
খ. কুরআন তিলাওয়াতের সেজদার দোয়া মুখস্থ না থাকলে সাধারণ সেজদার দুআ ‘সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা’ পড়লে কি যথেষ্ট হবে?
গ. তেলাওয়াতের সেজদার জন্য কি ওজু করা জরুরি?
ঘ. সেজদা দিতে ভুলে গেলে কি গুনাহ হবে?

উত্তর:

◉◉ ক. মুসহাফ (গ্রন্থ) থেকে কোরআন মাজীদ পড়লে যে নেকি হয় কুরআনের অ্যাপস থেকে পড়লে একই নেকি হবে?

উত্তর: হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, কুরআন তিলাওয়াত করলে প্রতিটি অক্ষরে একটি করে নেকি হয়-যা দশটি নেকির সমপরিমাণ। সুতরাং আল্লাহ যদি কবুল করেন তাহলে কুরআনে কারীম তেলাওয়াতের উক্ত সওয়াব পাওয়া যাবে- চাই মুসহাফ (গ্রন্থ) দেখে পড়া হোক বা মোবাইল ডিভাইস, কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা অন্য কিছু দেখে পড়া হোক। এমনকি মুখস্থ পড়লেও সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

◉◉ খ. কুরআন তিলাওয়াতের সেজদার দোয়া মুখস্থ না থাকলে সাধারণ সেজদার দুআ ‘সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা’ পড়লে কি যথেষ্ট হবে?

উত্তর:

সেজদার আয়াত তেলাওয়াত করলে সেজদা দেয়ার পদ্ধতি হল, ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সেজদায় যাওয়া এবং সেজদার দুআ ও তাসবীহ সমূহের মধ্য থেকে যে কোনও এক বা একাধিক দুআ পাঠ করা। অত:পর তেলাওয়াতে সেজদার বিখ্যাত দুআটি পাঠ করা।

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা তেলাওয়াতের সেজদাতে এই দু‘আ পাঠ করতেন:

‏ سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ

উচ্চারণ: সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাকাহু ওয়া শাক্কা সাম’আহু ওয়া বাসারাহু বিহাওলিহী ওয়া কুওয়াতিহ।

অর্থ: “আমার চেহারা সেই মহান সত্তার জন্য সিজদা করলো যিনি নিজ শক্তি ও সামর্থ্যে একে সৃষ্টি করেছেন এবং এতে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন।” (সহীহ। সহীহ আবু দাউদ/১২৭৩)

নিম্নোক্ত দুটিও পড়া হাদিস সম্মত:

اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ أَجْرًا وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ

‘‘হে আল্লাহ! এর মাধ্যমে আপনার নিকট আমার জন্য সওয়াব লিখে নিন। এর মাধ্যমে আমার পাপ দূরীভূত করুন, এটিকে আমার সঞ্চয় বলে গ্রহণ করুন এবং আমার থেকে এটিকে এভাবে কবুল করুন যেভাবে আপনি আপনার বান্দা দাউদ (আলাইহিস সালাম) থেকে কবুল করেছিলেন।’’
(হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে ইবনে আব্বার রা. হতে। সুনান তিরমিযী (ইফাঃ)অধ্যায়ঃ ৬/ সফর (أَبْوَابُ السَّفَرِ) পরিচ্ছদ: সিজদা-এ কুরআনের দু’আ। এ হাদিসটিকে কোন কোন মুহাদ্দিস জঈফ বলেছেন। তবে ইবনে খুযাইমা, হাকিম ও ইবনে হিব্বান প্রমুখ সহীহ বলেছেন এবং আলবানী হাসান বলেছেন।)

তারপর আল্লাহু আকবার বলে সেজদা থেকে উঠে পুনরায় সালাতের জন্য উঠে দাঁড়ানো।

তবে কারো যদি উক্ত দুআটি মুখস্থ না থাকে তাহলে সেজদার দুআ সমূহ থেকে যে কোনও একটি দুআ পড়াই যথেষ্ট ইনশাআল্লাহ। কিন্তু পরবর্তীতে সুন্নত পালনার্থে সেজদার দুআ মুখস্থ করার চেষ্টা করা কর্তব্য।

◉◉ গ. তেলাওয়াতের সেজদার জন্য কি ওজু করা জরুরি?
উত্তর: না, এর জন্য ওজু করা জরুরি নয়।

◉◉ ঘ. সেজদা দিতে ভুলে গেলে কি গুনাহ হবে?

উত্তর: তেলাওয়াতের সেজদা অধিক বিশুদ্ধ অভিমত অনুযায়ী সুন্নত; ওয়াজিব নয়। সুতরাং কেউ যদি ভুল বশত: সেজদা না দেয় তাহলে গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। এমনকি ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো সেজদা না দেয়া হলেও গুনাহ হবে না তবে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ না করাই ভালো।
আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানি)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।