জাতির পিতা কে? ইবরাহিম (আ.) না কি আদম (আ.)

প্রশ্ন: জাতির পিতা কে? ইবরাহিম (আ.) না কি আদম (আ.)?
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর:
নিম্নে আদম আলাইহিস সালাম ও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম প্রসঙ্গে কুরআন-হাদিস ও সম্মানিত মুফাসসিরগণের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

🌀 ১) আদম আলাইহিস সালাম:

আদম (আলাইহিস সালাম) প্রথম মানুষ এবং সমগ্র মানব জাতির আদি পিতা। মহান আল্লাহ তাঁকে নিজ হাতে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করার পর তাঁর বাম পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী প্রথম মানবী মা হাওয়া (আলাইহাস সালাম) কে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাদের দু জনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ ছড়িয়ে দিয়েছেন। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً
“হে মানব মণ্ডলী, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একজন মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। ” (সূরা নিসা: ১)
এখানে ‘একজন মানুষ’ দ্বারা উদ্দেশ্য, আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম আর ‘তাঁর সঙ্গিনী’ দ্বারা উদ্দেশ্য মা হাওয়া (আলাইহাস সালাম।

◍ এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত হাদিসটি উল্লেখযোগ্য:

কিয়ামত দিবসে যখন সূর্য নিকটবর্তী হবে এবং মানুষ অসহনীয় দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত হবে তখন বিচার-ফয়সালার জন্য সর্ব প্রথম প্রথম মানুষ আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম এর নিকট ছুটে গিয়ে এভাবে আবেদন পেশ করবে:

يَا آدَمُ أَنْتَ أَبُو الْبَشَرِ خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ وَأَمَرَ الْمَلاَئِكَةَ فَسَجَدُوا لَكَ اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا قَدْ بَلَغَنَا
হে আদম! আপনি মানবকুলের পিতা, আল্লাহ স্বহস্তে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার দেহে রুহ ফুঁকে দিয়েছেন।
আপনাকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁরা আপনাকে সিজদাও করেছে।
অত:এব আপনি রবের নিকট গিয়ে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি দেখছেন না আমরা কি কষ্টে আছি?
আপনি দেখছেন না আমরা কষ্টের কোন সীমায় পৌছেছি?…। (সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বরঃ ৩৭৬ অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান (كتاب الإيمان) ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

———————————-

🌀 ২) ইবরাহীম আলাহিস সালাম:

আল্লাহ তাআলা বলেন:
مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ۚ
“তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের আদর্শকে (মজবুত ভাবে ধারণ করো)।” (সূরা আল হজ্জ: ৭৮)

আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কে “তোমাদের পিতা” হিসেবে সম্বোধন করেছেন। এর অর্থ কি?
হ্যাঁ, তিনি আরবদের বংশগত পিতৃপুরুষ ছিলেন। অর্থাৎ আরবদের বংশ পরম্পরা ইবরাহীম আলাইহি সালাম পর্যন্ত গিয়ে মিলিত হয়েছে। কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের পিতৃব্যেরে আসনে আসীন। অর্থাৎ তিনি যদিও বংশ পরম্পরায় সকল মুসলিমের পিতা নন কিন্তু সম্মানের দিক দিয়ে সকলের নিকট পিতৃতুল্য।

◍ তাফসিরে কুরতুবীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা এসেছে এভাবে:
وإبراهيم هو أبو العرب قاطبة . وقيل : الخطاب لجميع المسلمين ، وإن لم يكن الكل من ولده ؛ لأن حرمة إبراهيم على المسلمين كحرمة الوالد على الولد .
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সমগ্র আরব জাতীর পিতা।
আর কোন কোনো মুফাসসির বলেন: “সকল মুসলিমকে উদ্দেশ্য করেই তাঁকে ‘পিতা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে যদিও সকল মুসলিম তার সন্তান নয়। এর কারণ হল, মুসলিমদের নিকট ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর মর্যাদা পুত্রের নিকট পিতার মর্যাদা সমতুল্য।” (তাফসীরে কুরতুবী)

◍ তাফসীরে বাগাভীতে বলা হয়েছে:
فإن قيل : فما وجه قوله : ( ملة أبيكم ) وليس كل المسلمين يرجع نسبهم إلى إبراهيم؟ .

قيل : خاطب به العرب وهم كانوا من نسل إبراهيم . وقيل : خاطب به جميع المسلمين ، وإبراهيم أب لهم ، على معنى وجوب احترامه وحفظ حقه كما يجب احترام الأب ، وهو كقوله تعالى : ( وأزواجه أمهاتهم ) ( الأحزاب : 6 ) [ ص: 404 ] ، وقال النبي صلى الله عليه وسلم : ” إنما أنا لكم مثل الوالد [ لوالده ] ”

যদি প্রশ্ন করা হয় যে, এই আয়াতে “তোমাদের পিতা” বলার কারণ কি অথচ সকল মুসলিমের বংশ পরম্পরা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পর্যন্ত পৌঁছে না?

এর উত্তরে বলা হয়েছে, “তোমাদের পিতা” এ বাক্যটি দ্বারা আল্লাহ তাআলা আরবদেরকে উদ্দেশ্য করেছেন । কারণ তারাই ছিল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর বংশধর।

অথবা এ কথা দ্বারা সকল মুসলিমই উদ্দেশ্য। তিনি মুসলিম জাতির পিতা এই অর্থে যে, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তার হক সংরক্ষণ করা অপরিহার্য যেভাবে পিতার সম্মান রক্ষা করা অপরিহার্য।

উক্ত আয়াতটি আল্লাহর এই বাণীর মত: وأزواجه أمهاتهم “আর তাঁর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণ তাদের (মুসলিমদের) মা।” (সূরা আহযাব, ৬ নং আয়াত)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إنَّما أنا لكم مِثْلُ الوالدِ
“আমি তো তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য।” (মুসনাদে আহমদ, বাযযার, সহিহ ইবনে হিব্বান প্রমুখ। সনদ সহিহ) (তাফসিরে বাগাভী)
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানি)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।