পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ যদি ছাত্রীদের চেহারা খুলতে বাধ্য করে

প্রশ্ন: আমাদের দেশের ভার্সিটির এক্সামগুলোতে স্যারেরা মেয়েদেরকে নিকাব খুলতে এক রকম বাধ্য করে। কেউ না খুলতে চাইলে তাকে অপমানও করে। এডমিট কার্ডের ফটোর সাথে পরীক্ষার্থীর চেহারা মিলানোর অজুহাতে তারা এমনটি করে থাকে।এমন অবস্থায় পরিপূর্ণ পর্দানশীন কোন মেয়ে কি তা করতে পারে? ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তার কী করা উচিত? মুখ খোলা? নাকি না খুলে থাকা যদি স্যার পরীক্ষা না দিতে দেয় তবুও?

উত্তর:

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি মুসলিম পর্দানশীন মেয়েদেরকে একান্তই নিকাব খুলতে বাধ্য করে এবং প্রতিবাদ করার মত সামর্থ না থাকে তাহলে নিরুপায় হয়ে তা খোলা জায়েয আছে ইনশাআল্লাহ। তবে এডমিট কার্ডের ফটোর সাথে চেহারা মিলানোর পর পূণরায় তা ঢেকে ফেলার চেষ্টা করবে। অনুরূপভাবে পরীক্ষা চলাকালীন সময় চেহারা খোলা রাখা যদি আবশ্যক হয় তাহলে যতটুকু না হলেই নয় ততটুকু খোলা রাখবে আর বাকিটুকু ঢেকে রাখবে।

তবে অন্তরে এ কাজটির প্রতি ঘৃণা পোষণ করবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ গুনাহ হবে না। কারণ, এখানে তাকে বাধ্য করা হচ্ছে এবং এই নিয়ম লঙ্ঘন করতেও সে অপারগ।

◉ আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
“অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যতটুকু তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে।” (সূরা তাগাবুন: ১৬)

◉ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী :

إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের অজ্ঞতাজনিত ভুল, স্মৃতিভ্রমজনিত ভুল ও জোরজবরদস্তির শিকার হয়ে কৃত অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছেন।” [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম ইবনে মাজাহ্ (২০৪৩)।শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ ইবনে মাজাহ’ তে সহীহ হিসেবে চি‎হ্নিত করেছেন]
অর্থাৎ এই সব ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা কাউকে পাপ বা গুনাহ দিবেন না এবং ইসলামী শরীয়াতে তার কাজ পাপ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

সুতরাং যদি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করলে তার এত দিনের কষ্ট ও পরিশ্রম বৃথা যাওয়ার এবং এটা তার জীবনের ক্ষতির আশঙ্কা করে তাহলে একান্ত বাধ্য হয়ে এমনটি করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ গুনাহ লিখবেন না।

অবশ্য কারো নিকট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করাটা যদি গুরুত্বপূর্ণ না হয় তাহলে এই পরিস্থিতিতে সে বিরত থাকবে।

পরীক্ষা কর্তৃপক্ষের জন্য তো অপরিহার্য ছিল, মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পুরুষদের থেকে আলাদা পরীক্ষা হল নির্ধারণ করা এবং মহিলা দ্বারা এডমিট কার্ডের সাথে চেহারা মিলানোর বিষয়টি সম্পন্ন করা। এ নিয়ম করলে এই ধরণের পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না।

প্রকৃতপক্ষে একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশে একজন পর্দানশীল মুসলিম নারীকে বাধ্য করে পর্দাহীন করার অধিকার তাদের নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আমাদেরকে তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে অনিচ্ছা সত্বেও এই অন্যায়ের শিকার হতে হচ্ছে!

দুআ করি, আল্লাহ তাআলা যেন এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করেন।
আমীন।
▰▰▱▰▱▰▱▰▱▰▱
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।