ইসলামের দৃষ্টিতে পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে লাভের সর্বোচ্চ সীমা

প্রশ্ন: ইসলামে ব্যাবসায় সর্বাধিক কত পার্সেন্ট লাভে পণ্য বিক্রয় করা উচিত? এ ধরণের কোন নির্দেশনা আছে কি?

উত্তর:
আল্লাহ তাআলা ব্যবসাকে হালাল করেছেন। কুরআনে এসেছে,
وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰاْۚ
“আর আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সূদকে হারাম করেছেন।” (সূরা বাকারা: ২৭৫)
আর ব্যবসা-বাণিজ্য সংঘটিত হয় ক্রেতা ও বিক্রেতার পারস্পারিক সম্মতির ভিত্তিতে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٖ مِّنكُمۡۚ
“হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; তবে যদি তা তোমাদের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসার মাধ্যমে হয় তাহলে ভিন্ন কথা।” (সূরা নিসা: ২৯)
অর্থাৎ ব্যবসা হবে ক্রেতা ও বিক্রেতার পারস্পারিক সম্মতির ভিত্তিতে। সে কারণে ইসলাম লাভ এর পার্সেন্টেজ নির্ধারণ করে দেয় নি। বরং তা ক্রেতা ও বিক্রেতার উপর ছেড়ে দিয়েছে। বিক্রেতা তার লাভ-লোকসান বিবেচনায় পণ্যের দাম চাইবে আর ক্রেতা আর দশটা দোকান ঘুরে এবং বাজার দেখেশুনে তার আর্থিক সঙ্গতি ও সুবিধা অনুযায়ী দাম বলবে। অতঃপর তারা উভয়ে যে দামে একমত হবে সে দামে ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবি উরওয়া ইবনে জাদ আর বারেকী রা. দুটি ছাগল এক দিনার দিয়ে ক্রয় করার পর একটি ছাগল এক দিনার দিয়ে বিক্রয় করেছিলেন। এটি নবী সালল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা জানানো পর তিনি তার ব্যবসায় বরকতের জন্য দুআ করেছেন। (সহিহ বুখারী)
হাদিসটি নিম্নরূপ:
أنَّ النبيَّ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ أعْطَاهُ دِينَارًا يَشْتَرِي له به شَاةً، فَاشْتَرَى له به شَاتَيْنِ، فَبَاعَ إحْدَاهُما بدِينَارٍ، وجَاءَهُ بدِينَارٍ وشَاةٍ، فَدَعَا له بالبَرَكَةِ في بَيْعِهِ، وكانَ لَوِ اشْتَرَى التُّرَابَ لَرَبِحَ فِيهِ (صحيح البخاري)
তার মানে উক্ত সাহাবী একটি ছাগলে ১০০% লাভ করার পরও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন আপত্তি করেন নি বরং তার জন্য দুআ করেছেন।

এ থেকে বুঝা গেল, বিক্রেতা কত পার্সেন্ট লাভ করবে তা তার ইচ্ছা ও স্বাধীনতা। ক্রেতার পণ্য পছন্দ হলে বাজার দর যাচাই-বাছাই করে সে দামে ক্রয় করবে অথবা করবে না।
অবশ্য ফকিহগণ বলেছেন, প্রচণ্ড অভাব-অনটন, দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও সংকটময় মূহুর্তে জীবন ধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে সীমাতিরিক্ত লাভ করা বৈধ নয়। (যেমন পানি, খাদ্যদ্রব্য, ঔষধ ইত্যাদি) বরং তা যথাসম্ভ কম লাভে বিক্রয় করবে এবং মানুষের জীবন রক্ষার চেষ্টা করবে।

🌐 একজন মুসলিম ব্যবসায়ীর জন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু নীতি-নৈতিকতা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি। যেমন:
✔️ ১) দাম চাওয়ার ক্ষেত্রে মিথ্যা বলবে না। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, কতিপয় ব্যবসায়ী ক্রেতাকে নানা মিথ্যা কথা বলে প্রলুব্ধ করে। যেমন: ওমুককে যে দামে দিয়েছি আপনাকেও সে দামে দিচ্ছি, কেনার দামেই আপনার কাছে বিক্রয় করলাম, বিনা লাভে বিক্রয় করলাম, এই দামে বিক্রয় করলে লস হয়ে যাবে ইত্যাদি (যদি বাস্তবে এসব কথা সত্য না হয়।)
✔️ ২) অতিরিক্ত অর্থলিপ্সা থেকে দূরে থাকা।
✔️ ৩) বাজারদর থেকে সীমাতিরিক্ত দাম না চাওয়া।
✔️ ৪) ক্রেতার সরলতা বা পণ্যের দাম সম্পর্কে অজ্ঞতার সুযোগে তাকে না ঠকানো।
✔️ ৫) মিথ্যা কসম খাওয়ার মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় থেকে বিরত থাকা।
✔️ ৬) বেচা-কেনার ক্ষেত্রে নম্রতা ও উদারতার পরিচয় দেয়া। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দরকষাকষি, কৃপনতার পরিচয় দেওয়া, দরদামের ক্ষেত্রে সামান্য কমবেশি হলে হইচই, চিৎকার, গালাগালি ও ঝগড়াঝাঁটিতে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি মুসলিম চরিত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
رحم الله رجلًا سمحًا إذا باع، وإذا اشترى، وإذا اقتضى
“আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যে বক্তি ক্রয়-বিক্রয় ও পাওনা ফিরে পেতে বিনম্র ও ক্ষমাশীল হয়।” (বুখারী : ২/৭৩৩)
আল্লাহু আলাম।
——————–
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।

Share: