কাফের-মুশরিকদের কবর জিয়ারত করা কি জায়েজ

প্রশ্ন: অমুসলিমদের কবর দেখতে যাওয়ার বিধান কি? এতে কোন পাপ আছে কি? জানতে চাই।

উত্তর:
মানুষ মাত্রই মরণশীল। সকলেই পরকালের যাত্রী। চাই সে মুসলিম হোক অথবা কাফির হোক। তাই মৃত্যু ও আখিরাতের কথা স্বরণ করার উদ্দেশ্যে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে যে কোন মানুষের করব জিয়ারত করা জায়েজ। তবে কাফির-মুশরিকদের কবরে সালাম দেয়া এবং কবর জিয়ারতের দোয়া পাঠ করা কিংবা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া ও ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা করা) করা বৈধ নয়।

এ ব্যাপারে দলিল হল, আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত,

زَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ ، ثُمَّ قَالَ : “ اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأَذِنَ لِي ، وَاسْتَأْذَنْتُهُ أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي فَزُورُوا الْقُبُورَ ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করতে গিয়ে কাঁদলেন এবং তাঁর সাথে যে সাহাবীগণ ছিলেন তারাও কাঁদলেন। অতঃপর তিনি বললেন,“আমি আমার মায়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন জানিয়েছিলাম কিন্তু আমাকে সে অনুমতি প্রদান করা হয়নি। তবে আমি মায়ের কবর যিয়ারতের জন্যে আবেদন জানালে তিনি তা মঞ্জুর করেন। অতএব, তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা কবর যিয়ারত করলে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়।” [সহীহ মুসলিম, হা/৯৭৬, মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন, অধ্যায়: কিতাবুল জানায়েয, অনুচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করা। হা/১৪৩০]

অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
أَلا فَزُورُوهَا ، فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ
“সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা এতে আখিরাতের কথা স্বরণ হয়।”

এই হাদিস থেকে শিক্ষণীয় হল,
✔️১) কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্য হলো মৃত্যু এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করা।
✔️২) কাফির-মুশরিকদের কবর জিয়ারত করাও জায়েজ।
✔️ ৩) মৃত কাফের-মুশরিকদের জন্য দোয়া করা বা ক্ষমা প্রার্থনা করা জায়েজ নয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মা মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁকে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি দেন নি কিন্তু শুধু কবর জিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন।

কুরআনে কাফির-মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن يَسۡتَغۡفِرُواْ لِلۡمُشۡرِكِينَ وَلَوۡ كَانُوٓاْ أُوْلِي قُرۡبَىٰ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمۡ أَنَّهُمۡ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَحِيمِ
“আত্মীয়-স্বজন হলেও মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য সংগত নয় যখন এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, নিশ্চিতই তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী।” [সূরা তাওবা: ১১৩]

🔶🔷 সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি প্রখ্যাত ফকিহ শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. কে প্রশ্ন করা হয়,
هل تجوز زيارة قبور الكفار؟
কাফেরদের কবর জিয়ারত করা কি জায়েজ?
উত্তরে তিনি বলেন,
إذا كان ذلك للعبرة فلا بأس به؛ لأن النبي ﷺ قد زار قبر أمه واستأذن ربه أن يستغفر لها فلم يؤذن له، وإنما أذن له بالزيارة [مجموع فتاوى ومقالات الشيخ ابن باز 13/ 337]
“শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য হলে এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করেছেন। তিনি তাঁর রবের কাছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলে অনুমতি দেন নি। তবে কেবল কবর জিয়ারত করার অনুমতি দিয়েছেন।”
[সূত্র: মাজমু ফাতাওয়া ওয়া মাকালাত, ১৩/৩৩৭-শাইখ বিন বায horse: binbaz. Org.sa]

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ঈমানের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
والله أعلم
———————-
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।