টিকটক ব্যবহারের বিধান এবং তার সঠিক পদ্ধতি

প্রশ্ন: Tiktok Apps ব্যবহার কি হারাম? ইসলামিক উপায়ে এর সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি জানতে‌ চাই।
[বি:দ্র: আমি মূলত টেকনোলজি নিয়ে কাজ করি। তাই টেকনিক্যাল ভিডিও আপলোড দিতে চাই]

উত্তর:
বর্তমান যুগ ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। এই ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়াকে যথার্থ ভাবে কাজে লাগিয়ে যেমন নানাভাবে উপকৃত হওয়া যায় বা অবারিত সওয়াব অর্জন করা যায় ঠিক তেমনি এর অপব্যবহার এর ফলে মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে অধঃপতনের অতল তলায় হারিয়ে যায় এবং নিত্য নতুন পাপ-পঙ্কিলতা দ্বারা নিজের আমলনামাকে পঙ্কিল ও নিকষ অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে।

যাহোক, বর্তমান সময় Tiktok app এমনই একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া। এখানে মানুষ নিজেরা ইচ্ছে মত ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে পাবলিশ করতে‌ পারে।

অতএব কেউ যদি এতে এমন ভিডিও শেয়ার করে বা এর মাধ্যমে এমন কন্টেন্ট তৈরি ও প্রচার-প্রসার করে
– যা মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহিত করে,
– অন্যায়ের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে,
– সচ্চরিত্র ও নীতি নৈতিকতা শেখায়,
– মানব কল্যাণ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে,
– হালাল ব্যবসার অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করা হয়,
– বা এর মাধ্যমে উপকারী টেননিক্যাল বিষয়, উপদেশ মূলক কথাবার্তা ও শিক্ষণীয় বিষয়াদি প্রকাশ করা হয় তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ।
– অনুরূপভাবে এর মাধ্যমে যদি কুরআন-সুন্নাহ ও বিশুদ্ধ আকিদা নির্ভর ওয়াজ,
– বিজ্ঞ আলেমদের বক্তৃতার অডিও-ভিডিও ক্লিপ,
-কারীদের কুরআন তিলাওয়াত ও তরজমা,
– অমুসলিম, নাস্তিক ও অজ্ঞেয়বাদীদের পক্ষ থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা প্রশ্ন ও অভিযোগের উত্তর ইত্যাদি বিষয় ছড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে তা দাওয়াতি কাজ ও দীন প্রচারে অংশ গ্রহণের শামিল হিসেবে গণ্য হবে-যাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া যাবে অবারিত সওয়াব
ইনশাআল্লাহ।

পক্ষান্তরে টিকটিক, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব সহ আধুনিক কোন সোশ্যাল মিডিয়া বা অনলাইন প্লাটফর্ম এ যদি অশ্লীলতা, নাটক, সিনেমা ও গান-বাজনার ভিডিও ক্লিপ প্রচার করা হয়, মানুষকে হেয় ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য মূলক পোস্ট করা হয়, ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড, দেশ ও মানবতা বিরোধী প্রচারণা, সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা করা হয় এবং মিথ্যা, প্রতারণা ও প্রোপাগান্ডা মূলক কিছু প্রচার ও শেয়ার করা হয় তাহলে তা নি:সন্দেহে হারাম।

আমাদের অজানা‌ নয় যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কিছু প্রকাশ করা হলে যেহেতু তা খুব সহজে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে অসংখ্য-অগণিত মানুষের কাছে পৌঁছে যায় এবং ইন্টারনেটের এই মহাযজ্ঞের মাঝে তা স্থায়ী রূপ লাভ করে। তাই এখানে কিছু প্রকাশ করার আগে শতবার চিন্তা করা দরকার।

এখানে ভালো, কল্যাণকর ও ইসলামের পক্ষে কোনো কিছু প্রকাশ করা হলে তা যেমন সদকায়ে জারিয়া এবং স্থায়ী সওয়াব অর্জন এর কারণ হতে পারে ঠিক তেমনি খারাপ, ক্ষতিকর ও শরিয়ত বিরোধী কোন কিছু প্রকাশ করা হলে তা গুনাহে জারিয়া ও স্থায়ী গুনাহ অর্জনের কারণে পরিণত হতে পারে। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

من سن فى الإسلام سنة حسنة فله أجرها وأجر من عمل بها بعده من غير أن ينقص من أجورهم شيء، ومن سن في الإسلام سنة سيئة فله وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير أن ينقص من أوزارهم شيء. (رواه مسلم عن جرير بن عبد الله رضي الله عنهما.

“যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতি প্রচলন করল, সে তার সওয়াব পাবে এবং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে। তাতে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে তার পাপ বহন করবে এবং যারা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে। তাতে তাদের পাপের কোন কমতি হবে না।” [সহিহ‌ মুসলিম]
আল্লাহ আমাদেরকে সর্বাধুনিক ও সুন্দরতম পন্থায় ইসলামের পক্ষে এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করার তৌফিক দিন করুন‌ এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ ও পাপ-পঙ্কিলতা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
—————-
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।