সোশ্যাল মিডিয়ায় এডমিন-মডারেটর হিসেবে কাজ করা কখন জায়েজ ও কখন জায়েজ নয়

প্রশ্ন: সোশ্যাল মিডিয়ায় এডমিন-মডারেটর হিসেবে কাজ করার বিধান কী? অর্থের বিনিময়ে অর্গানিক পদ্ধতিতে ফেসবুক গ্রুপের মেম্বার বৃদ্ধির কাজ করা কি জায়েজ যদি সে গ্রুপ বা পেজে ভালো জিনিসের পাশাপাশি বিদআতি বিষয় পোস্ট করা হয়?
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: Facebook, Whatsapp, Telegram ইত্যাদি যে সব পেজ বা গ্রুপে অথবা YouTube চ্যানেলে শিরক, বিদআত, কুসংস্কার, দলিল বহির্ভূত কথাবার্তা, মেয়েদের বেপর্দা ছবি-ভিডিও, নাটক-সিনেমার খবরাখবর, গান-বাজনা, নোংরা ফানি ভিডিও, ভ্রান্ত বক্তাদের ওয়াজ, ক্ষতিকর বা হারাম কিছু প্রচার ও প্রসার করা হয় সে সব গ্রুপে কোনভাবেই সদস্য এড করা অথবা এডমিন-মোডারেটর হয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করা জায়েজ নয়। চাই অর্থের বিনিময়ে হোক অথবা বিনামূল্যে হোক। কেননা তা হারাম কাজে সহযোগিতার শামিল-যা ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

“আর তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা মায়িদা: ২]।

কেউ যদি তা করে তাহলে তার কারণে যত মানুষ গুনাহ অর্জন করবে, হারাম কোন কিছু শিখবে বা চারিত্রিক স্খলনের শিকার হবে তাদের গুনাহর অংশ তাকেও বহন করতে হবে। আর এসব গুনাহের ধারাবাহিকতা স্থায়ীভাবে চালু হয়ে যাবে যতদিন পর্যন্ত নেট জগতে ওই হারাম কন্টেন্ট বিদ্যমান থাকবে। এমনকি মানুষ মারা যাওয়ার পরেও তার পোস্ট কৃত বা তার সহযোগিতায় হারাম কাজের কারণে তার আমলনামায় গুনাহ অবিরত ভাবে জমা হতেই থাকবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন, আমিন)।

◍ জারির রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ سَنَّ فِيْ الإِسْلاَمِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَ وِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُّنْقَصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْئٌ

“যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতি-নীতি চালু করবে তার উপরই তার গুনাহ বর্তাবে। আর ঐ মন্দ কাজ করে যত মানুষ যে পরিমাণ গুনাহ অর্জন করবে সবার সমপরিমাণ গুনাহ তার আমলনামায় লেখা হবে। কিন্তু তাদের কারও গুনাহ এতটুকুও কম করা হবে না” [সহিহ মুসলিম]।

তবে এইসব গ্রুপে মানুষকে বিশুদ্ধ দ্বীনের‌ দিকে দাওয়াত দেওয়া এবং শিরক-বিদআত ও সব ধরনের অপসংস্কৃতি থেকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ আকিদা ও কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামিক ভিডিও, লেখনী, পোস্টার ইত্যাদি পোস্ট করতে কোন আপত্তি নেই যদি সুযোগ থাকে। কেননা এটিও আল্লাহর পথে দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এতে সওয়াব অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।

অনুরূপভাবে কুরআন-সুন্নাহ ও বিশুদ্ধ আকিদা ভিত্তিক প্রচলিত গ্রুপ সমূহে এডমিন-মোডারেটর হিসেবে কাজ করা, গ্রুপে সদস্য এড করা (অর্থের বিনিময়ে হোক বা বিনমূল্যে হোক) দাওয়াতি কর্মে সহযোগিতার শামিল। এতেও অবারিত সওয়াব রয়েছে ইনশাআল্লাহ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করে।

◍ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَن سَنَّ سُنَّةً حَسنةً فعمِلَ بِها ، كانَ لَهُ أجرُها وَمِثْلُ أجرِ مَن عملَ بِها ، لا يَنقُصُ مِن أجورِهِم شيئًا

“যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভালো রীতি-নীতি প্রচলন করল এবং তদ অনুযায়ী আমল করল সে তার সওয়াব পাবে এবং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে। তাতে তাদের সওয়াবের কোন কমতি হবে না।” [সহিহ‌ মুসলিম]

তবে যে সব গ্রুপে সাধারণ সদস্য বা এডমিন-মোডারেটর হিসেবে থাকার কারণে কোন ধরনের গুনাহ বা ফেতনা-ফ্যাসাদের দিকে ধাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনতিবিলম্বে সেখান থেকে বের হয়ে আসা আবশ্যক।

কেউ যদি দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে ইতোপূর্বে এই ধরনের হারাম কিছু করে থাকে তার জন্য তওবা করা আবশ্যক। সে যদি লজ্জিত অন্তরে অতীত পাপকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করে এবং ভবিষ্যতে আর কখনো এমনটি না করার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়। নিশ্চয় আল্লাহ পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।