বিয়ের আগে হজ

প্রশ্ন: বিয়ের আগে কি হজ করা জায়েজ?
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: হজের সাথে বিয়ে করা বা না করার কোনও সম্পর্ক নাই। বরং যদি কোনও প্রাপ্ত বয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্ক মুসলিম ব্যক্তির মক্কায় এসে হজ করার মত শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতা থাকে আর মহিলা হলে যদি এগুলোর পাশাপাশি তার সাথে স্বামী বা মাহরাম পুরুষ সঙ্গী থাকে তাহলে তার জন্য অনতিবিলম্বে হজ পালন করা ফরজ। চাই বিয়ে করুক অথবা না করুক।আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗا
“আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য।”] সূরা আলে ইমরান: ৯৭]।
ইচ্ছাকৃত ভাবে বিলম্ব করা জায়েজ নাই। কারণ হতে পারে পরবর্তীতে কোন রোগ-ব্যাধি, সমস্যা, সংকট বা বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে হজ আদায় করা সম্ভব হবে না। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«تَعَجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ – يَعْنِي : الْفَرِيضَةَ – فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ».
“তোমরা কাল বিলম্ব না করে ফরজ হজ আদায় করে নাও। কারণ তোমাদের কেউ জানে না, কী বিপদাপদ বা সমস্যা তার সামনে আসবে।” [মুসনাদে আহমদ‌ও ইবনে মাজাহ। হাদিসটি হাসান। দ্রষ্টব্য: শায়খ আলবানির ইরওয়াউল গালিল, হা/৯৯০]।
তবে বিয়ে করাটা যদি অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে, অন্যথায় পাপাচারের দিকে পা বাড়ানোর আশঙ্কা থাকে তাহলে বিয়েটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। অন্যথায় আগে হজ আদায় করবে তারপরে বিয়ে করবে।

– কেউ যদি শারীরিক ও আর্থিকভাবে হজ করার ক্ষমতা রাখে এবং হজ ফরজের শর্তাবলী পূর্ণ হয় তারপরও “এখনো বিয়ে করিনি, বাবা-মা হজ করেনি, ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়নি, ঋণ পরিশোধ বাকি আছে (ঋণ পরিশোধ করার মত অন্যান্য অর্থ-সম্পদ থাকার পরও) এখনো যুবক বয়স, সৌদিতে চাকরি, লেখাপড়া বা কাজ করতে এসে হজ করলে হজ হবে না..”এ সকল উদ্ভট ও শরিয়ত বহির্ভূত কথাবার্তা ও ওজুহাতে ফরজ হজ আদায় না করে এবং এই অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নেয় তাহলে হজের ফরজিয়াত কাঁধে নিয়ে গুনাহগার অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিল। আল্লাহ ক্ষমা করুন।

মনে রাখতে হবে, যৌবন ও শারীরিক শক্তিমত্তা থাকা অবস্থায় হজ আদায় করা শেষ বয়সে দুর্বল অবস্থায় হজ পালনের চেয়ে অধিক উত্তম।

🔹সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি, বিশ্বনন্দিত আলেম আল্লামা শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. কে প্রশ্ন করা হয়, (প্রশ্ন কারী বলেন) কিছু মানুষকে বলতে শুনেছি যে, বিয়ের আগে হজ করলে ফরজ আদায় হবে না।‌ বরং অবশ্যই বিয়ের পরেই ফরজ হজ আদায় করতে হবে।‌ একথা কি সঠিক?

তিনি বলেন,

ليس بصحيح، الحج يجوز قبل الزواج وبعد الزواج، إذا كان قد بلغ الحلم حجه صحيح ويؤدي عنه الفريضة، أما إذا حج قبل أن يبلغ فإنه يكون نافلة، ومتى حج بعد هذا وأدى الحج على وجهه الشرعي حجه صحيح، ويؤدى عنه الفريضة ولو لم يتزوج

“এ কথা সঠিক নয়। বিয়ের আগে এবং পরে হজ করা জায়েজ। যদি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় হজ করে তাহলে হজ বিশুদ্ধ হবে এবং তার হজের ফরজিয়াত আদায় হয়ে যাবে‌। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে হজ করলে সেটি নফল হিসেবে গণ্য হবে। এরপরে (প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে) যখনই হজ করবে তা যদি শরিয়ত সম্মত পদ্ধতিতে করে থাকে তাহলে তার হজ সহিহ হবে এবং তার ফরজিয়াত আদায় হয়ে যাবে যদিও বিয়ে না করে।” [Binbaz]

🔹 বর্তমান শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফকিহ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেন,

يجوز للشاب أن يحج قبل أن يتزوج، ولا حرج عليه في ذلك، ولكن إذا كان محتاجاً إلى الزواج ويخاف العنت والمشقة في تركه فإنه يقدمه على الحج؛ لأن الله تبارك وتعالى اشترط في وجوب الحج أن يكون الإنسان مستطيعاً، وكفاية الإنسان نفسه بالزواج من الأمور الضرورية، فإذا كان الرجل أو الشاب لا يهمه إذا حج وأخر الزواج فإنه يحج ويتزوج بعد، وأما إذا كان يشق عليه تأخير الزواج فإنه يقدم الزواج

“যুবকদের জন্য বিয়ের পূর্বে হজ করা জায়েজ। এতে কোন সমস্যা নেই। ‌কিন্তু যদি বিয়ে করাটা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়ে এবং বিয়ে ছাড়া থাকাটা কঠিন হয় ও কষ্টের আশঙ্কা করে তাহলে হজের পূর্বে বিয়েকে অগ্রাধিকার দিবে। ‌কেননা আল্লাহ হজ ফরজ হওয়ার জন্য সামর্থ্যবান হওয়ার শর্তারোপ করেছেন। আর একজন মানুষের বিয়ে করাটা তার জরুরি প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত।

অতএব কোন ব্যক্তি বা যুবকের যদি এখন হজ করায় বা তা বিলম্বিত করায় কোন সমস্যা না হয় তাহলে আগে হজ করে তারপর বিয়ে করবে। কিন্তু যদি বিয়ে বিলম্ব করাটা তার জন্য কষ্টকর হয় তাহলে আগে বিয়ে করবে।”
[binothaimeen] আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।