মহামারী রোগের সম্প্রসারণ ও তার আশঙ্কা জনক অবস্থায় জুমা ও জামাতে সালাতে অংশগ্রহণ বিষয়ক জরুরি ফতোয়া

সৌদি কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারর্স (সৌদি আরব সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ) এর সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত নং ২৪৬। তারিখ: ১৬/৭/১৪৪১ হিজরি [১০/০২/২০২০ খৃষ্টাব্দ]

গত ১৬/৭/১৪৪১ হি: তারিখ বুধবার রিয়াদে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত ২৪তম বিশেষ অধিবেষণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মহামারী রোগের সম্প্রসারণ ও তার আশঙ্কা জনক অবস্থায় জুমা ও জামাতে সালাতে অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারটি উপস্থাপিত হলে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তারা ইসলামী শরীয়তের দলিল-প্রমাণ, লক্ষ্য- উদ্দেশ্য, মূলনীতি এবং এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মতামত গবেষণা ও পর্যালোচনা করেন।

এরপর সে আলোকে ওলামা পরিষদ নিম্নলিখিত বিবরণ পেশ করে:

◯ প্রথমত:

“মহামারী রোগে আক্রান্ত” ব্যক্তির জুমআ ও জামাআতে উপস্থিত হওয়া হারাম।
কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ
“অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির কাছে উপস্থিত করা যাবে না”। (বুখারী হা/৫৩২৮ ও মুসলিম হা/৪১১৭)
ইমাম নববী বলেন, কেননা এতে যদি আল্লাহর হুকুমে সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত হয়, তাহলে সে তার তকদ্বীরের প্রতি বিশ্বাস না করে ঐ ব্যক্তিকে দোষারোপ করবে, ফলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। (শরহে মুসলিম ৭/৩৭৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
إِذَا سَمِعْتُمْ بِالطَّاعُونِ بِأَرْضٍ فَلَا تَدْخُلُوهَا وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلَا تَخْرُجُوا مِنْهَا
“কোন এলাকায় তোমরা মহামারীর সংবাদ শ্রবণ করলে সেখানে প্রবেশ করবে
না। আর কোন এলাকায় থাকা অবস্থায় যদি মহামারী শুরু হয়, তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না”। (বুখারী হা/৫২৮৭ ও মুসলিম হা/৪১১১)

◯ দ্বিতীয়তঃ

যে লোকের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাকে আলাদা থাকতে হবে বা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ যাদেরকে কোয়ারেন্টাইন করেছে তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে, এ সিদ্ধান্ত মেনে চলা এবং ও জামাআত বর্জন করা এবং নিজস্ব ঠিকানা বা আবাসস্থলে ওই সালাতগুলো যথাসময়ে আদায় করা।

শারীদ বিন সুওয়াইদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ
ছাক্বীফ গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট বায়াত করতে এল। তখন তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল যে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তাঁর কাছে না ডেকে বরং লোক পাঠিয়ে জানিয়ে দিলেন যে, “আমি তোমার বায়াত নিয়ে নিয়েছি, অতএব তুমি ফিরে যাও।” (সহীহ মুসলিম হা/৪১৩৮)

◯ তৃতীয়তঃ

যে ব্যক্তি এই আশঙ্কা করবে যে, সে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অথবা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তার জন্য এই অনুমতি রয়েছে যে সে জুমআ ও জামাআতে অনুপস্থিত থাকবে।
কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ “
“নিজের ক্ষতি করা যাবে না অন্যের ক্ষতি করা যাবে না”। (ইবনে মাজাহ হা/২৩৩১)
উল্লিখিত অবস্থায় যে ব্যক্তি জুম’আর সালাতে উপস্থিত হবে না, সে নিজগৃহে যোহরের সালাত চার রাকাত আদায় করবে।

উচ্চ উলামা পরিষদ সকলকে উপদেশ দিচ্ছে যে, যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেই নিয়ম-শৃঙ্খলা ও নির্দেশনা দিয়েছে তা আপনারা যথাযথ ভাবে মেনে চলবেন।
আরও উপদেশ দিচ্ছে যে, সবাই আল্লাহকে ভয় করে চলবেন, দোয়ার মাধ্যমে তাঁর শরণাপন্ন হবেন।
এই বিপদ ও মহামারী থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন করবেন তাঁর সামনে বিনায়বনত হয়ে কাকুতি-মিনতি করবেন।

আল্লাহ বলেন,
وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
“আল্লাহ যদি তোমাকে বিপদে ফেলেন তবে তিনি ব্যতীত তা থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা কারো নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তবে তাঁর অনুগ্রহ প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো নেই। তাঁর বান্দাদের মধ্যে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে কল্যাণ দান করেন, আর তিনি অধিক ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়।” (সূরা ইউনুস: ১০৭)

আল্লাহ আরও বলেন,
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“আর তোমাদের পালনকর্তা বলেছেন তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো’ (সূরা গাফের: ৬০)
وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.

http://bit.ly/2U4MIEy
▬▬▬▬●●●▬▬▬▬
অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী
(দাঈ, জেদ্দাহ দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব)
সম্পদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব)