জান্নাত বাসীগণ জাহান্নাম বাসীদেরকে দেখতে পাবে এবং তাদের মাঝে কথোপকথন হবে

কুরআনের বহু আয়াত, হাদিস এবং মুফাসসিরদের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত যে, জান্নাত বাসীগণ জাহান্নাম বাসীদেরকে দেখতে পাবে এবং তাদের মধ্যে কথোপকথন হবে।
নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষপে কুরআনের একটি চিত্র উপস্থাপন করা হল:

◈ জাহান্নাম বাসীরা জান্নাত বাসীদের কাছে আর্তনাদ করবে একটু পানি ও খাবারের জন্য। কিন্তু তারা জবাবে বলবে যে, আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম বাসীদের জন্য তা হারাম করে দিয়েছেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَنَادَىٰ أَصْحَابُ النَّارِ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا عَلَيْنَا مِنَ الْمَاءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ ۚ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ
“আর জাহান্নামিরা জান্নাতিদেরকে ডেকে বলবে, আমাদের উপর সামান্য পানি নিক্ষেপ কর অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রুজি দিয়েছেন তা থেকেই কিছু দাও।” “তারা (জান্নাত বাসীগণ) বলবে, আল্লাহ এই উভয় বস্তু কাফেরদের জন্যে নিষিদ্ধ করেছেন।” [সূরা আরাফ: ৫০]

◈ জান্নাত বাসীগণ জাহান্নাম বাসীদের ভয়ানক আজাব দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে যে, আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করেছেন। আর জাহান্নাম বাসীরা জান্নাত বাসীদের সুখ ও আনন্দ দেখে শুধুই আফসোস করবে এবং পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে এসে ঈমানদার হওয়ার প্রত্যাশা করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَسَاءَلُونَ -‏ قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ إِنِّي كَانَ لِي قَرِينٌ- يَقُولُ أَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُصَدِّقِينَ ‎- أَإِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَإِنَّا لَمَدِينُونَ – قَالَ هَلْ أَنتُم مُّطَّلِعُونَ – فَاطَّلَعَ فَرَآهُ فِي سَوَاءِ الْجَحِيمِ – قَالَ تَاللَّهِ إِن كِدتَّ لَتُرْدِينِ -‏ وَلَوْلَا نِعْمَةُ رَبِّي لَكُنتُ مِنَ الْمُحْضَرِينَ -‏ أَفَمَا نَحْنُ بِمَيِّتِينَ ‎-إِلَّا مَوْتَتَنَا الْأُولَىٰ وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ ‎- إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ‎-‏ لِمِثْلِ هَٰذَا فَلْيَعْمَلِ الْعَامِلُونَ
অতঃপর তারা (জান্নাত বাসীগণ) একে অপরের দিকে মুখ করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তাদের একজন বলবে, আমার এক সঙ্গী ছিল। সে বলত, তুমি কি বিশ্বাস কর যে, আমরা যখন মরে যাব এবং মাটি ও হাড়ে পরিণত হব, তখনও কি আমরা প্রতিফল প্রাপ্ত হব?
আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি তাকে উকি দিয়ে দেখতে চাও? অতঃপর সে উঁকি দিয়ে দেখবে এবং তাকে জাহান্নামের মাঝখানে দেখতে পাবে। সে বলবে, আল্লাহর কসম, তুমি তো আমাকে প্রায় ধ্বংসই করে দিয়েছিলে। আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ না হলে আমিও যে গ্রেফতারকৃতদের সাথেই উপস্থিত হতাম। এখন আমাদের আর মৃত্যু হবে না। আমাদের প্রথম মৃত্যু ছাড়া এবং আমরা শাস্তি প্রাপ্তও হব না। নিশ্চয় এই মহা সাফল্য। এমন সাফল্যের জন্যে পরিশ্রমীদের পরিশ্রম করা উচিত।” [সূরা সাফফাত: ৫০/৬১]

◈ জাহান্নাম বাসীদের আফসোস:
আল্লাহ বলেন,
فَقَالُوا يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
“তারা (জাহান্নাম বাসীরা) বলবে, কতই না ভাল হত, যদি আমরা পুনরায় দুনিয়ায় প্রেরিত হতাম; তা হলে আমরা আমাদের পালনকর্তার নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম।” [সূরা আনআম: ২৭]

◈ দুনিয়াতে যেসব পাপিষ্ঠ মুমিনদেরকে নিয়ে নানা উপহাস, তিরস্কার ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত এবং নানাভাবে নির্যাতন করতো তারা জাহান্নামের আগুনে যখন পুড়বে তা দেখে ইমানদারদের চক্ষু শীতল হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَنَادَىٰ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابَ النَّارِ أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ۖ قَالُوا نَعَمْ ۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ ‎-‏ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُم بِالْآخِرَةِ كَافِرُونَ-‏ وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌ ۚ
“জান্নাতিরা জাহান্নাম বাসীদেরকে ডেকে বলবে, আমাদের সাথে আমাদের প্রতিপালক যে ওয়াদা করেছিলেন, তা আমরা সত্য পেয়েছি। কিন্তু তোমরাও কি তোমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা বলবে, হ্যাঁ। অতঃপর একজন ঘোষক উভয়ের মাঝখানে ঘোষণা করবে, “আল্লাহর অভিসম্পাত জালেমদের উপর। যারা আল্লাহর পথে বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করত। তারা পরকালের বিষয়েও অবিশ্বাসী ছিল। উভয়ের মাঝখানে একটি প্রাচীর থাকবে।” [সূরা আরাফ: ৪৪, ৪৫ ও ৪৬]
ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
السور بين أهل الجنة والنار ، فيفتح لأهل الجنة أبواب ، فينظرون وهم على السُّرر إلى أهل النار كيف يعذّبون ، فيضحكون منهم ، ويكون ذلك مما أقرّ الله به أعينهم ، كيف ينتقم الله منهم ” .
“تفسير الطبري” (24 / 304) .
“জান্নাত বাসী ও জাহান্নাম বাসীদের মাঝে প্রাচীর থাকবে। জান্নাত বাসীদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ফলে তারা খাট-পালঙ্কের উপরে উপবেশন গত অবস্থায় জাহান্নাম বাসীদেরকে দেখবে কীভাবে তাদেরকে আজাব দেওয়া হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তারা হাসাহাসি করবে। মহান আল্লাহ কীভাবে তাদের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছেন, তা দেখানোর মাধ্যমে তিনি তাদের চক্ষু শীতল করবেন।” [তাফসিরে ত্ববারি-২৪/৩০৪]

❑ কারা সেই জাহান্নামের অধিবাসী জালেম সম্প্রদায়?
আল্লাহ তাআলা এদের সম্পর্কে বলছেন,
الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَهْوًا وَلَعِبًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۚ فَالْيَوْمَ نَنسَاهُمْ كَمَا نَسُوا لِقَاءَ يَوْمِهِمْ هَـٰذَا وَمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَجْحَدُونَ
“তারা তাদের দীনকে তামাশা ও খেলনার বস্তু বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদের কে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল (অর্থাৎ দুনিয়ার জীবন নিয়ে এতই ব্যস্ত থাকত যে তারা আখিরাতের কথা বেমালুম ভুলে থাকত) অতএব, আমি আজকে তাদেরকে ভুলে যাব যেমন তারা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল এবং যেমন তারা আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করত।” [সূরা আরাফ: ৫১]
যাদের কাছে দীন-ধর্ম হল, হাসি-তামাশা বা খেলনার বস্তু কিংবা যাদের কাছে, টাকা-পয়সা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক স্ট্যাটাস, পড়া-শোনা, পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, স্ত্রী-সন্তান তথা এই দুনিয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ-যারা এ সবের ধোঁকায় পড়ে আখিরাতকে ভুলে বসেছে উপরের আয়াতগুলোতে তাদের পরিণতি বর্ণিত হয়েছে। হে ক্ষমাশীল, করুণার আধার, তুমি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। আর আমাদেরকে সর্বদা পরিচালিত কর তোমার সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর। নিশ্চয় তুমি দুআ কবুল কারী। আমিন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।