খালা মায়ের সমতুল্য এবং খালার হক ও এ সংক্রান্ত জরুরি জ্ঞাতব্য বিষয়

প্রশ্ন: হাদিসে এসেছে, “খালা মায়ের সমতুল্য।” এর ব্যাখ্যা জানতে চাই।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে খালা, মায়ের সমতুল্য আর চাচা, বাবার সমতুল্য। এ বিষয়ে একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে।
খালা মায়ের সমতুল্য-সংক্রান্ত একটি হাদিস:
◈ আলি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,
الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الْأُمِّ -صححه الألباني في “صحيح أبي داود
“খালা মায়ের মর্যাদার।” [শাইখ আলবানি এটিকে সহিহ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: সহিহ আবু দাউদ]
এর অর্থের ব্যাপারে ইমাম যাহাবি বলেন,
“أي : في البر والإكرام والصلة” انتهى
“অর্থাৎ সদাচরণ, সম্মান এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে মা খালার সমতুল্য।”

◈ এই অর্থটি প্রকাশিত হয় অপর একটি হাদিস থেকে। তা হল:

عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَصَبْتُ ذَنْبًا عَظِيمًا فَهَلْ لِي تَوْبَةٌ؟ قَالَ: (هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ؟) قَالَ: لَا، قَالَ: (هَلْ لَكَ مِنْ خَالَةٍ؟) قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: (فَبِرَّهَا).
وصححه الألباني في “صحيح الترغيب” (2504)
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এসে বললেন, ‌ হে আল্লাহর রাসূল, আমি অনেক বড় একটি পাপ করে ফেলেছি। আমার কি তওবার সুযোগ আছে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি মা আছে? লোকটি বলল, না। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি খালা আছে? লোকটি বললো, হ্যাঁ। তিনি তাকে বললেন, তাহলে তার সাথে সদাচরণ করো।” (অর্থাৎ মায়ের মত খালার খেদমত ও সেবা-শুশ্রূষা করো, তাকে সম্মান করো, তাকে সাহায্য সহযোগিতা কর এবং বিভিন্নভাবে তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করো ইত্যাদি) [তিরমিজি, সহিহ তারগিব/২৫০৪]

এ হাদিস দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, খালার প্রতি ইহসান সুলভ আচরণ করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল এবং গুনাহ মোচনের মাধ্যম।

◈ উম্মুল মুমিনিন মা-জননী আয়েশা রা. এর কোন সন্তান ছিল না। কিন্তু তিনি তার বোন আসমা রা. এর ছেলে আব্দুল্লাহ (বিন জুবায়ের)-এর দিকে সম্বন্ধ করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উম্মে আব্দুল্লাহ বা আব্দুল্লাহর মা নামে নিজের কুনিয়ত (উপনাম) রাখার অনুরোধ করায় তিনি তা করেছিলেন। তাই তাকে উম্মে আব্দুল্লাহ (আব্দুল্লাহর মা) বলে সম্বোধন করা হতো।
وروى أبو داود (4970) عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، أَنَّهَا قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كُلُّ صَوَاحِبِي لَهُنَّ كُنًى، قَالَ: (فَاكْتَنِي بِابْنِكِ عَبْدِ اللَّهِ) يَعْنِي ابْن اخْتُهَا ، فَكَانَتْ تُكَنَّى بِأُمِّ عَبْدِ اللَّهِ
[সুনানে আবু দাউদ/৪৯৭০]
এতেও বুঝা যায়, খালা মায়ের সমতুল্য। আলহামদুলিল্লাহ।

🔹এ বিষয়ে কতিপয় জরুরি জ্ঞাতব্য:

✪ ১. সম্মান, মর্যাদা ও সদাচরণের ক্ষেত্রে খালা মায়ের সমতুল্য হলেও মায়ের জীবদ্দশায় মা বেশি অগ্রাধিকার যোগ্য।
✪ ২. মা মারা যাওয়ার পর খালাদেরকে সম্মান করা, তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া, তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা, তাদের সেবা-শুশ্রূষা করা, যথাসাধ্য তাদের অভাব মোচন করা ও কষ্ট দূর করা, তাদেরকে মাঝেমাধ্যে উপহার দেওয়া, তাদের জন্য দুআ করা, সর্বোপরি সর্বদা সুখে-দুখে তাদের পাশে থাকা মায়ের সাথে সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত। কারণ খালা হল, মায়ের সব থেকে বেশি ঘনিষ্টজনদের অন্তর্ভুক্ত।
✪ ৩. মায়ের মত খালাদেরকে কষ্ট দেওয়াও হারাম।
✪ ৪. খালার প্রতি ইহসান সুলভ আচরণ করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল এবং গুনাহ মোচনের মাধ্যম।
✪ ৫. খালার সন্তান-সন্ততিগণ (খালাতো ভাই-বোনেরা) নন মাহারাম। অর্থাৎ তাদের সাথে বিবাহ বৈধ। অতএব তাদের সামনে পর্দা করা ফরজ।
✪ ৬. অনুরূপভাবে খালুও নন মহরাম। অতএব মহিলার জন্য তার সামনেও পর্দা করা ফরজ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।