কাজা সালাতে আজান ও ইকামতের বিধান

প্রশ্ন: “কাজা সালাতে ইকামতের প্রয়োজন নেই” একথা কি হাদিস সম্মত? দলিল সহ জানতে চাই।
উত্তর:
“কাজা সালাতে ইকামত এর প্রয়োজন নেই” এ কথা হাদিস সম্মত নয়। বরং একাধিক বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কাজা সালাতেও ইকামত দেওয়া সুন্নত।
কোন সালাত যথাসময়ে পড়তে না পারলে অনতিবিলম্বে তা কাজা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুন্নত হল, ইকামত দেওয়ার পর ফরজ সালাতগুলো যথা নিয়মে আদায় করা। (পাশাপাশি যেসকল সালাতের আগে ও পরে সুন্নত সালাত রয়েছে সেগুলোও আদায় করা।)

এই মর্মে দুটি হাদিস এবং একটি ফতোয়া পেশ করা হল: وبالله التوفيق

🟢 হাদিসে এসেছে:
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ إِنَّ الْمُشْرِكِينَ شَغَلُوا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَرْبَعِ صَلَوَاتٍ يَوْمَ الْخَنْدَقِ حَتَّى ذَهَبَ مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللَّهُ فَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَذَّنَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعَصْرَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْمَغْرِبَ ثُمَّ أَقَامَ فَصَلَّى الْعِشَاءَ ‏”.
আবূ উবাইদা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ রা. বলেছেন, খন্দক যুদ্ধে মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে চার ওয়াক্ত সালাত হতে ব্যতিব্যস্ত করে দেয়।
পরিশেষে আল্লাহর ইচ্ছায় যখন রাতের কিয়দংশ অতিবাহিত হয়ে গেল তখন তিনি বিলাল রা. কে আজান দেওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি আজান দিলেন অতঃপর ইকামত বললেন৷
প্রথমে জোহরের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইকামত দিলে তিনি আসরের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইকামত দিলে তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করালেন। অতঃপর বিলাল ইকামত দিলে তিনি ইশার সালাত আদায় করালেন।
[আল ইরওয়া-(১/২৫৭), অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: যার একাধারে কয়েক ওয়াক্তের নামাজ ছুটে গেছে সে কোন ওয়াক্ত থেকে শুরু করবে? হাদিস নং ১৭৯- হাসান]

🟢 অন্য একটি হাদিস:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ قَفَلَ مِنْ غَزْوَةِ خَيْبَرَ فَسَارَ لَيْلَةً حَتَّى إِذَا أَدْرَكَنَا الْكَرَى عَرَّسَ وَقَالَ لِبِلاَلٍ ‏”‏ اكْلأْ لَنَا اللَّيْلَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَغَلَبَتْ بِلاَلاً عَيْنَاهُ وَهُوَ مُسْتَنِدٌ إِلَى رَاحِلَتِهِ فَلَمْ يَسْتَيْقِظِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَلاَ بِلاَلٌ وَلاَ أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى إِذَا ضَرَبَتْهُمُ الشَّمْسُ فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَوَّلَهُمُ اسْتِيقَاظًا فَفَزِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏”‏ يَا بِلاَلُ ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ أَخَذَ بِنَفْسِي الَّذِي أَخَذَ بِنَفْسِكَ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَاقْتَادُوا رَوَاحِلَهُمْ شَيْئًا ثُمَّ تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَقَامَ لَهُمُ الصَّلاَةَ وَصَلَّى بِهِمُ الصُّبْحَ فَلَمَّا قَضَى الصَّلاَةَ قَالَ ‏”‏ مَنْ نَسِيَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ ‏{‏ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِّكْرَى ‏}‏ ‏” ‏
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বার যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনের একরাতে বিরতিহীনভাবে সফর করতে থাকলে আমাদের ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। ফলে শেষ রাতে তিনি যাত্রা বিরতি করেন এবং বিলাল রা. কে বলেন, “তুমি জেগে থাকবে এবং রাতের দিকে লক্ষ্য রাখবে।”
কিন্তু বিলাল রা.ও নিদ্রাকাতর হয়ে তার উটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বিলাল এবং তাঁর সহাবিদের কারোরই ঘুম ভাঙ্গল না। অতঃপর সূর্যের উত্তাপ তাদের গায়ে এসে পড়লে সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন। অতঃপর অস্থির হয়ে বললেন, “কী হলো বিলাল!”
তিনি বললেন, “হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! যে সত্তা আপনাকে অচেতন রেখেছেন, আমাকেও তিনিই অচেতন রেখেছেন।”

অতঃপর তারা নিজেদের বাহন নিয়ে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওজু করলেন এবং বিলাল রা. কে নির্দেশ দিলে তিনি ইকমত দিলেন।
অতঃপর তিনি সকলকে নিয়ে ফজরের সলাত আদায় শেষে বললেন, “কেউ সালাত আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই উক্ত সালাত আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ্‌ বলেন, “আমার স্মরণার্থে সলাত প্রতিষ্ঠা কর।” (সূরা ত্বা-হা: ১৪)
[মুসলিম, আবু দাউদ, সালাত অধ্যায়: অনুচ্ছেদ-১১
কেউ সালাতের ওয়াক্তে ঘুমিয়ে থাকলে বা সালাতের কথা ভুলে গেলে, হাদিস নং ৪৩৫-সহিহ]
সুনানে বায়হাকী বর্ণনায় এসেছে, উক্ত ঘটনায়
فَصَلَّى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ صَلَّى صَلَاةَ الْغَدَاةِ”
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে দু রাকাত ফজরের সুন্নত আদায় করেছেন, তারপর ফরজ আদায় করেছেন।”

🔶 শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
وَلَيْسَ الْأَذَانُ بِوَاجِبٍ لِلصَّلَاةِ الْفَائِتَةِ، وَإِذَا صَلَّى وَحْدَهُ أَدَاءً أَوْ قَضَاءً وَأَذَّنَ وَأَقَامَ فَقَدْ أَحْسَنَ، وَإِنْ اكْتَفَى بِالْإِقَامَةِ أَجْزَأَهُ، وَإِنْ كَانَ يَقْضِي صَلَوَاتٍ فَأَذَّنَ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَأَقَامَ لِبَقِيَّةِ الصَّلَوَاتِ كَانَ حَسَنًا أَيْضًا.
“ছুটে যাওয়া কাজা সালাতের ক্ষেত্রে আজান ওয়াজিব নয়। যদি কেউ একাকী যথাসময়ে অথবা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কাযা হিসেবে সালাত আদায় করে তাহলে (প্রথমে) আজান দিবে, অতঃপর ইকামত দিবে। এটা ভালো। আর যদি কেবল আজান দেয় (ইকামত না দেয়) তবেও যথেষ্ট হবে। আর যদি একাধিক ওয়াক্তের কাজা সালাত পড়ে তাহলে প্রথমবার আজান দেবে, অতঃপর বাকি সালাতের ক্ষেত্রে ইকামত দিবে। এটাও উত্তম।” [আল ফাতাওয়া আল-কুবরা]
والله أعلم
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সালাতের প্রতি আরো যত্নশীল হওয়ার এবং প্রত্যেক ওয়াক্তের সালাত যথাসময়ে আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

==========
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।