শেষ জামানা এবং সে সময় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অতুলনীয় মর্যাদা

প্রশ্ন: আমরা কি শেষ জামানায় আছি? আমরা কি এখন একটা সুন্নাত পালন করলে ৫০ জন সাহাবির সমপরিমাণ সাওয়াব পাব?
উত্তর:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমন মানেই শেষ জামানা। তার মানে এর পরে কোন নবী রাসুল আসবে না বা কোন আসমানি গ্রন্থ নাজিল হবে না এবং এরপরে কেয়ামত সংঘটিত হবে। সুতরাং অবশ্যই আমরা শেষ জমানায় রয়েছি।

কিন্তু কখন কিয়ামত সংগঠিত হবে আমরা কেউ জানি না। এর নিশ্চিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
{ يَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرۡسَٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّيۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقۡتِهَآ إِلَّا هُوَۚ}
“তারা আপনাকে কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (বলে) ‘তা কখন ঘটবে? বলুন, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার রবেরই নিকট। শুধু তিনিই যথাসময়ে সেটার প্রকাশ ঘটাবেন।” [Surah Al-A`râf: 187]

এ ক্ষেত্রে বিখ্যাত হাদিসে জিবরিলও উল্লেখযোগ্য।

🟢 শেষ জামানায় সুন্নত আঁকড়ে ধরার অপরিসীম মর্যাদা:

নিঃসন্দেহে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা তথা তাঁর নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা, ফরজ ও ওয়াজিবগুলো সঠিকভাবে পালনের পাশাপাশি, সুন্নত ও নফল ইবাদতগুলো যথাসম্ভব সম্পাদন করা এবং হারাম ও বিদাআতি আচার-বিশ্বাস থেকে দূরে থাকা।‌ সেই সাথে তা প্রচার-প্রসার করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। হাদিসে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

▪️যেমন:

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الإِسْلامَ بَدَا غَرِيبًا وَسَيَعُودُ غَرِيبًا كَمَا بَدَا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ قِيلَ : وَمَنِ الْغُرَبَاءُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ : الَّذِينَ يُصْلِحُونَ إِذَا فَسَدَ النَّاسُ
সাহল বিন সা’দ সায়েদী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “অল্পসংখ্যক মানুষ সহকারে যেভাবে ইসলামের সূচনা হয়েছে ঠিক সেভাবে অচিরেই অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে তা ফিরে-যেমন শুরুতে হয়েছিল।

সুতরাং শুভ সংবাদ (দুনিয়ায় সফলতা ও আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ ও জান্নাতে প্রবেশ) ঐ অল্প সংখ্যক লোকদের জন্য।’’
জিজ্ঞাসা করা হল, এই সুসংবাদ প্রাপ্ত অল্প সংখ্যক লোক কারা হে আল্লাহর রসূল?
তিনি বললেন, যারা সংস্কার ও সংশোধনী মূলক কাজ করে যখন মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে বা মানুষ খারাপ হয়ে যায়।”
[আহমাদ ১৬৬৯০, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৫৫৪, আওসাত্ব ৩০৫৬-সহিহ]

▪️এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদিস হল, আবু সা’লাবাহ খুশানী কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ مِنْ وَرَائِكُمْ أَيَّامَ الصَّبْرِ الصَّبْرُ فِيهِ مِثْلُ قَبْضٍ عَلَى الْجَمْرِ لِلْعَامِلِ فِيهِمْ مِثْلُ أَجْرِ خَمْسِينَ رَجُلاً يَعْمَلُونَ مِثْلَ عَمَلِهِ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْهُمْ قَالَ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْكُمْ
“তোমাদের পরবর্তীতে আছে ধৈর্যের যুগ। সে (যুগে) ধৈর্যশীল হবে মুষ্টিতে অঙ্গার ধারণকারীর মতো। সে যুগের আমলকারীর হবে পঞ্চাশ জন পুরুষের সমান সওয়াব।
জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রসূল! পঞ্চাশ জন পুরুষ আমাদের মধ্য হতে, নাকি তাদের মধ্য হতে?
তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্য হতে।”
[আবু দাউদ ৪৩৪৩, তিরমিযী ৩০৫৮, ইবনে মাজাহ ৪০১৪, ত্বাবারানী ১৮০৩৩, সহীহুল জামে’ ২২৩৪]

🚫 “উম্মতের বিশৃংখলার সময় সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার মর্যাদা ১০০ শহিদের সমান” সংক্রান্ত হাদিসটি সহিহ নয়:
এ সংক্রান্ত হাদিসটি আমাদের মাঝে বহুল প্রচলিত। বক্তাদের মুখেও আমরা তা অহরহ শুনতে পাই। কিন্তু‌ সম্মানিত মুহাদ্দেসিনের দৃষ্টিতে সনদের বিচারে উক্ত হাদিসটি সহীহ নয়।
নিম্নে উক্ত হাদিস এবং তৎপ্রসঙ্গে মুহাদ্দিসিনে কেরামের গবেষণালব্ধ সনদ বিশ্লেষণ পেশ করা হল:
من تمسك بسنتي عند فساد أمتي له أجر مائة شهيد
“যে ব্যক্তি আমার উম্মতের বিশৃঙ্খলার সময় আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে তার জন্য রয়েছে একশ শহিদের সমপরিমাণ সওয়াব।”
[হাদিসটি যঈফ (দুর্বল)। দ্রষ্টব্য: সিলসিলা যইফা, হা/৩২৭]

সনদ বিশ্লেষণ:

عن ابن عباس رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال :
( من تمسك بسنتي عند فساد أمتي فله أجر مائة شهيد )
أخرجه ابن عدي في “الكامل” (2/327) وسنده ضعيف جدا ، فيه الحسن بن قتيبة : متروك الحديث ، انظر ترجمته في “لسان الميزان” (2/246) ، وضعفه الألباني في “السلسلة الضعيفة” (326)

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال :
( المتمسك بسنتي عند فساد أمتي له أجر شهيد )
أخرجه الطبراني في “الأوسط” (2/31) وعنه أبو نعيم في “حلية الأولياء” (8/200)
وفي سنده علتان :
1- تفرد عبد المجيد بن عبد العزيز بن أبي رواد ، ومثله لا يحتمل تفرده .
2- جهالة محمد بن صالح العذري : قال الهيثمي في “مجمع الزوائد” (1/172) : لم أر من ترجمه .
ولذلك ضعفه الشيخ الألباني رحمه الله في “السلسلة الضعيفة” (327) .
পরিশেষে আমাদের কর্তব্য, চতুর্মুখী ফিতনা-ফাসাদের সয়লাবের মধ্যেও আল্লাহর দ্বীনকে শক্তভাবে ধারণ করা, চারদিকে অজ্ঞতার গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে জ্ঞানের মশাল জ্বেলে সত্যের পথ ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং বিদআতের জয়জয়কারের মাঝেও রাসুলের সুন্নাহকে জীবনের ব্রত বানিয়ে নেওয়া। পাশাপাশি এই পথে চলতে গিয়ে সকল ঝড়ঝঞ্জা, অগ্নিপরীক্ষা, বিপদ-আপদ এবং অপবাদ ও অপপ্রচারের সামনে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশায় পরম ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া। তবেই মিলবে প্রতিশ্রুত সফলতা এবং জান্নাতের সুসংবাদ‌। সেই সাথে মিলবে সাহাবিদের ৫০ জন ব্যক্তির সমতুল্য সওয়াব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ আমাদেরকে সত্যের পথে অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন।‌ আমিন।
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।