ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কিভাবে গ্রহণ করব

প্রশ্ন: ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কিভাবে গ্রহণ করব?
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর :
১) প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য ইবাদতের মৌসুমগুলোতে খাঁটি ভাবে তওবা করা এবং পাপাচার ও আল্লাহর নাফরমানী থেকে বিরত থাকা। কারণ, পাপাচার মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে শুধু বঞ্চিতই রাখে না বরং আল্লাহ ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেয়।

২) আরও কর্তব্য হল, আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করে এমন কাজগুলোকে গনিমত মনে করে সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। যে আল্লাহর কথাকে বিশ্বাস করবে আল্লাহ তার ব্যাপারে তাঁর ওয়াদাকে বাস্তবায়ন করবেন। তিনি ওয়াদা করেছেন:

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا

“যারা আমার ব্যাপারে চেষ্টা ও সাধনা করবে আমি অবশ্যই তাকে আমার রাস্তাগুলো দেখাবো।”
(সূরা আনকাবূত: ৬৯)

যিলহজ্জের প্রথম দশকে যেসব আমল করা মুস্তাহাব:

১. সালাত: ফরয সালাতগুলো যথাসময়ে সম্পাদন করার পাশাপাশি প্রচুর নফল সালাত আদায় করা। কারণ, সালাতই হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ সেজদা কর (নফল সালাত আদায় কর), কারণ যখনই তুমি সেজদা কর বিনিময় আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং গুনাহ মোচন করেন।” (মুসলিম) এটি কেবল যিলহজ মাস নয় বরং অন্য সকল সময়ের জন্য প্রযোজ্য।

২.সিয়াম: রোজা রাখা অন্যতম একটি নেক কাজ। তাই এ দিনগুলোতে নফল রোজা রাখা খুবই ফযিলতের। হুনাইদা বিন খালেদ তার স্ত্রী থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জনৈক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জ মাসের নয় তারিখ, আশুরার দিন ও প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন।” (আহমদ, আবু দাউদ ও নাসায়ী) ইমাম নববী যিলহজ্জ মাসের শেষ দশ দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে বলেছেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব।

৩. তাকবির, তাহলিল ও তাহমিদ পাঠ করা: ইবনে ওমর রা. এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে, তোমরা বেশি বেশি তাকবীর (আল্লা-হু আকবার), তাহলীল (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ), ও তাহমীদ (আল হামদু লিল্লা-হ) পড়া। ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, ইবনে ওমর রা. এবং আবু হুরায়রা রা. এ দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাজারে বের হতেন, আর মানুষরাও তাদের দেখে তাকবীর বলত। তিনি আরও বলেছেন, ইবনে উমর রা, মিনায় তাঁর তাঁবুতে তাকবীর বলতেন, তা শুনে মসজিদের লোকেরা তাকবীর বলত এবং বাজারের লোকেরাও তাকবীর বলত। এক পর্যায়ে পুরো মিনা তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত।

ইবনে উমর রা. মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে, তাঁবুতে, বিছানায়, বসার স্থানে, চলার পথে সর্বত্র তাকবীর পাঠ করতেন।

এ তাকবীরগুলো উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা মুস্তাহাব। কারণ, সাহাবী উমর রা., তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা., আবু হুরায়রা রা. তা উচ্চ আওয়াজে পাঠ করতেন।

মুসলমানদের উচিত এ সুন্নতটি পুনর্জীবিত করা, যা বর্তমান যুগে প্রায় হারিয়ে গেছে এবং দু:খ জনক হলেও সত্য, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি নেককার লোকেরাও এটি প্রায় ভুলতে বসেছে। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষগণ ছিলেন এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।

তাকবীর বলার নিয়ম: নিন্মোক্ত যে কোন পদ্ধতিতে তাকবীর পাঠ করা যায়:

✔ক) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কাবীরা।
✔খ) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
✔গ) আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

৪. আরাফার দিন রোজা: আরাফার দিন রোজা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তিনি আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে বলেছেন: “আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, এটি পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।” (মুসলিম) তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজীদের জন্য রোযা রাখা মুস্তাহাব নয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজা বিহীন অবস্থায়।

৫. কুরবানির দিন (দশম যিলহজ্জ) এর মর্যাদা: এই মহান দিনটির মর্যাদার ব্যাপারে অনেক মুসলমানই অসচেতন। কতিপয় বিদ্বান এ মত ব্যক্ত করেছেন যে, সাধারণভাবে সারা বছরের মধ্যে-এমনকি আরাফার দিনের চেয়েও নহর তথা কুরবানির দিন উত্তম।

ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেছেন, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন নহরের দিন। এটিই হল, হজ্জে আকবর (বড় হজ্জ) এর দিন। যেমন সুনানে আবু দাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মহিমান্বিত দিন হল নহর তথা কুরবানির দিন। অতঃপর কুরবানির পরের দিন (অর্থাৎ যিলহজ্জের এগারতম দিন যে দিন হাজীগণ কুরবানি করার পর মিনায় অবস্থান করেন)।

অবশ্য কেউ কেউ বলেছেন, নহরের দিনের চেয়ে আরাফার দিন উত্তম। কারণ, সে দিনের সিয়াম দুই বছরের গুনাহের কাফফারা। তাছাড়া আল্লাহ তায়ালা আরাফার দিন যে পরিমাণ লোক জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন, তা অন্য কোন দিন করেন না। আরও এ জন্যও যে, আল্লাহ তায়ালা সে দিন বান্দার নিকটবর্তী হন এবং আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। তবে প্রথম বক্তব্যই সঠিক। কারণ, হাদিস তারই প্রমাণ বহন করে। এর বিরোধী কিছু নেই।

যাহোক, সর্বোত্তম দিন চাই কুরবানির দিন হোক অথবা আরাফার দিন হোক যারা হজ্জে গমন করেছেন বা যারা করেন নি সবার জন্য উচিৎ হল, সে দিনের ফযিলত অর্জনের চেষ্টা করা এবং এই সুযোগকে কাজে লাগানো।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
লেখক: শায়খ আব্দুল মালিক আল-কাসেম
সম্পাদনায়: শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল জিবরীল
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার।