ঋতুমতী বা প্রসূতি নারীর জন্য মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, কাফন পরানো, লাশের ঘরে প্রবেশ ও মৃত্যু ব্যক্তিকে স্পর্শ করার বিধান

প্রশ্ন: হায়েজ অবস্থায় মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া, তাদের কাছে যাওয়া বা তাদেরকে স্পর্শ করা কি জায়েজ? এতে মৃত ব্যক্তির কোনো সমস্যা হবে কি না? অথবা মৃত ব্যক্তির বাড়িতে হায়েজ অবস্থায় গেলে হায়েজ রত মহিলাদের হায়েজ সংশ্লিষ্ট কোনো সমস্যা হয় কি না?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ঋতুমতী অথবা প্রসূতি মহিলা যদি পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে‌ ও সব ধরনের ফিতনা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করে নিকটাত্মীয় কিংবা প্রতিবেশী মৃতের বাড়িতে তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়া, খাবার দিয়ে আসা, তাদেরকে কোন কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করা বা বিশেষ কোনো প্রয়োজনে যায় তাতে শরিয়তে কোন বাধা নেই। অনুরূপভাবে দরকার বোধে যে ঘরে লাশ রয়েছে সে ঘরে প্রবেশ করতে বা লাশের নিকটে যেতে কোন সমস্যা নেই।

তদ্রূপ সে যদি অপর কোন মৃত মহিলাকে কাফন পরায় বা তাতে সহযোগিতা করে কিংবা গোসল দেয় বা তাতে সহযোগিতা করে, মৃত স্বামী বা ছোট বাচ্চাকে গোসল দেয় অথবা সন্তান,‌ পিতা, ভাই, দাদা ইত্যাদি মাহরাম পুরুষদেরকে হাত দ্বারা স্পর্শ করে বা কপালে চুমু খায় তাহলে তাতেও কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। (নন মাহরাম লাশকে স্পর্শ করা জায়েজ নয় জরুরি প্রয়োজনে ছাড়া‌ এমনকি তাদের চেহারা দেখাও ঠিক নয়)।
ইসলামি শরিয়তে এসব ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি। আমরা জানি, ঋতুবতী বা প্রসূতি নারীদের জন্য প্রয়োজনে মসজিদে প্রবেশ করা, স্বামীর শরীরের সাথে শরীর লাগানো বা সব ধরনের বিনোদনমূলক কার্যক্রম করা (সহবাস ছাড়া), রান্নাবান্না, গৃহস্থালি ইত্যাদি সব কাজ স্বাভাবিক ভাবে করা জায়েজ। এমনকি কাপড়ের আবরণ বা হ্যান্ড গ্লাভস সহকারে কুরআন স্পর্শ করতে পারে এবং জরুরি প্রয়োজন বোধে তিলাওয়াতও করতে পারে (এ বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও এটাই অধিক বিশুদ্ধ মত)। শুধু নামাজ, রোজা করা বা কাবাঘরের তাওয়াফ করার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।‌ কিন্তু মৃত ব্যক্তির ঘরে প্রবেশ করা, মাহরাম মৃত ব্যক্তিকে স্পর্শ করা বা নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ইত্যাদির ব্যাপারে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসেনি। বিশেষ করে মৃত মহিলা যদি নির্দিষ্ট কোন মহিলাকে কাফন পরানো বা গোসলের জন্য ওসিয়ত করে যায় তাহলে তা পালন করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যদিও সে সময় সে হায়েজ বা নেফসের কারণে নাপাক অবস্থায় থাকে। তবে এইসব ক্ষেত্রে হায়েজের রক্ত মাটিতে পড়ে যেন পরিবেশ নষ্ট না করে সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।
মোটকথা, তাদের জন্য এই কাজগুলো করাকে নাজায়েজ বা মাকরুহ বলা যাবে না। যদিও কোন কোন ফকিহ তাদের জন্য এসব কিছুকে মাকরূহ বা অপছন্দনীয় বলেছেন। এর স্বপক্ষে কুরআন-সুন্নাহ থেকে কোন দলিল না থাকলেও তারা এই কারণে অপছন্দ করেছেন যে, হতে পারে তাদের শরীর থেকে নির্গত হায়েজ বা নেফসের রক্ত পড়ে পরিবেশ নোংরা হতে পারে। আর কাফন বা গোসল করানো যেহেতু ফরজে কেফায়া তাই অন্য কোন উপযুক্ত ব্যক্তি থাকলে তাদের সেখানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে তা হারাম কোন আলেম বলেনি।

সুতরাং এ কারণে মৃত ব্যক্তি বা ঋতুমতী মহিলার কোন এই ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই ইনশাআল্লাহ।

▪️সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি বিশ্বনন্দিত আলেমে দ্বীন আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বাযকে প্রশ্ন করা হয় যে, ঋতুমতী নারীর জন্য কোন মৃতকে গোসল দেওয়া জায়েজ আছে কি?
তিনি জবাবে বলেন,
إذا دعت الحاجة لا بأس، والأمر ما فيه شيء، كَمَيّت، تُغَسّل ميتًا، أو زوجها
“যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। এতে দোষের কিছু নেই। ঋতুমতী মহিলা তার স্বামীকে বা অন্য কোন (মহিলা) মাইয়েতকে গোসল দিতে পারে।”

▪️সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড-এর ফতোয়া হল,

يجوز للمرأة وهي حائض أن تغسل النساء وتكفنهن ، ولها أن تغسل من الرجال زوجها فقط ، ولا يعتبر الحيض مانعاً من تغسيل الجنازة
“ঋতুমতী মহিলার জন্য অন্য মৃত মহিলাদের গোসল এবং কাফন পরানো জায়েজ রয়েছে। আর পুরুষদের মধ্যে কেবল তার স্বামীকে গোসল দিতে পারে। ঋতুস্রাব হওয়া মৃতকে গোসল দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়।”
আল্লাহু আলাম-আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।