ইয়াযীদের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র অবস্থান

সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) প্রদত্ত ফতোয়ায় বলা হয়েছে—

وأما يزيد بن معاوية فالناس فيه طرفان ووسط، وأعدل الأقوال الثلاثة فيه أنه كان ملكًا من ملوك المسلمين له حسنات وسيئات ولم يولد إلاَّ في خلافة عثمان رضي الله عنه، ولم يكن كافرًا ولكن جرى بسببه ما جرى من مصرع الحسين وفعل ما فعل بأهل الحرة، ولم يكن صاحبًا ولا من أولياء الله الصالحين. قال شيخ الإِسلام ابن تيمية رحمه الله : وهذا قول عامة أهل العقل والعلم والسنة والجماعة، وأما بالنسبة للعنه فالناس فيه ثلاث فرق: فرقة لعنته، وفرقة أحبته، وفرقة لا تسبه ولا تحبه، قال شيخ الإِسلام ابن تيمية رحمه الله تعالى: وهذا هو المنصوص عن الإِمام أحمد وعليه المقتصدون من أصحابه وغيرهم من جميع المسلمين، وهذا القول الوسط مبني على أنه لم يثبت فسقه الذي يقتضي لعنه أو بناء على أن الفاسق المعين لا يلعن بخصوصه إما تحريمًا وإما تنزيهًا، فقد ثبت في [ صحيح البخاري ] عن عمر في قصة عبد الله بن حمار الذي تكرر منه شرب الخمر وجلده رسول الله صلى الله عليه وسلم لما لعنه بعض الصحابة قال النبي صلى الله عليه وسلم: لا تلعنه، فإنه يحب الله ورسوله ، وقال صلى الله عليه وسلم: لعن المؤمن كقتله متفق عليه.
وهذا كما أن نصوص الوعيد عامة في أكل أموال اليتامى والزنا والسرقة فلا يشهد بها على معين بأنه من أصحاب النار لجواز تخلف المقتضى عن المقتضي لمعارض راجح: إما توبته، وإما حسنات، وإما مصائب مكفرة، وإما شفاعة مقبولة، وغير ذلك من المكفرات للذنوب هذا بالنسبة لمنع سبه ولعنه. وأما بالنسبة لترك المحبة فلأنه لم يصدر منه من الأعمال الصالحة ما يوجب محبته، فبقي واحدًا من الملوك السلاطين، ومحبة أشخاص هذا النوع ليست مشروعة، ولأنه صدر عنه ما يقتضي فسقه وظلمه في سيرته، وفي أمر الحسين وأمر أهل الحرة. وبالله التوفيق. وصلى الله على نبينا محمد، وآله وصحبه وسلم.

“ইয়াযীদ বিন মু‘আউয়িয়াহর ব্যাপারে মানুষ দুটো প্রান্তিক ও একটি মধ্যপন্থি দলে বিভক্ত। ইয়াযীদের ব্যাপারে তিনটি অভিমতের মধ্যে সবচেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ মত হলো—সে মুসলিমদের একজন রাজা ছিল, তার ভালোকর্ম ছিল, আবার মন্দকর্মও ছিল। সে ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র খেলাফত-আমলে জন্মগ্রহণ করে। সে কাফির ছিল না। কিন্তু তার কারণে হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র হত্যাকাণ্ড ও হার্রাহ’র যুদ্ধের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। সে না ছিল সাহাবী, আর না ছিল সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহ’র ওলি।

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এটাই অধিকাংশ প্রাজ্ঞ ও বিবেকবান আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অভিমত।” [১]

আর ইয়াযীদকে লানত করার ব্যাপারেও মানুষ তিনটি দলে বিভক্ত। একদল ইয়াযীদকে লানত করে। একদল ইয়াযীদকে ভালোবাসে। আরেক দল ইয়াযীদকে গালি দেয় না, আবার ভালোও বাসে না। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ইমাম আহমাদ এই মত ব্যক্ত করেছেন। আর এই মতের ওপরই রয়েছেন ইমাম আহমাদের অনুসারী ও অন্যান্য মুসলিমদের মধ্য থেকে মধ্যপন্থি ব্যক্তিবর্গ।”

এই মধ্যপন্থি মত এ বিষয়ের ওপর ভিত্তিশীল যে, ইয়াযীদের এমন কোনো পাপকাজ প্রমাণিত হয়নি, যা তাকে লানত করার দাবি করে; অথবা নির্দিষ্টভাবে একজন পাপী লোককে লানত করা হয় হারাম আর নাহয় মাকরূহে তানযীহী (অপছন্দনীয় কর্ম)। সাহীহ বুখারীতে ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ বিন হিমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বেশ কয়েকবার মদ্যপান করেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে বেত্রাঘাত করেছিলেন। এ কারণে জনৈক সাহাবী ওই মদ্যপায়ী সাহাবীকে লানত করেন। তখন নাবী ﷺ বলেন, “তুমি ওকে লানত কোরো না। নিশ্চয় সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে।” [২]

নাবী ﷺ অন্যত্র বলেছেন, “মুমিনকে লানত করা হত্যার সমতুল্য।” [৩]

ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, জেনায় লিপ্ত হওয়া, চুরি করা প্রভৃতি পাপের ক্ষেত্রে যেসব ব্যাপকার্থবোধক ও শাস্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞাযুক্ত দলিল বর্ণিত হয়েছে, সেসব দলিলের ভিত্তিতে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ব্যাপারে এরকম সাক্ষ্য দেওয়া যায় না যে, সে ব্যক্তি জাহান্নামী। কেননা বিভিন্ন অগ্রাধিকারযোগ্য কারণে এরকম বিষয় বিমোচিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হয়তো সে তওবা করেছে, অথবা তার পুণ্যকর্ম আছে, কিংবা সে পাপমোচনকারী দুর্যোগে পতিত হয়েছে, অথবা তার জন্য কারও কৃত শাফায়াত (সুপারিশ) গৃহীত হয়েছে, কিংবা এগুলো ছাড়াও তার অন্য কোনো পাপমোচনকারী বিষয় সংঘটিত হয়েছে। এটা গেল গালি না দেওয়া ও লানত না করার প্রসঙ্গ।
পক্ষান্তরে ইয়াযীদকে না ভালোবাসার কারণ—তার থেকে এমন কোনো ভালো কাজ প্রকাশিত হয়নি, যা তার ভালোবাসাকে জরুরি করে। সে একজন শাসক বা রাজা মাত্র। এ ধরনের লোককে ভালোবাসা শরিয়তসম্মত (বিধেয়) নয়। তাছাড়া ইয়াযীদের জীবনীতে এবং হুসাইন ও হার্রাহ-সংক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের ঘটনায় তার নিকট থেকে যা প্রকাশিত হয়েছে, তা দাবি করে যে, সে একজন ফাসেক ও জালেম ছিল।
আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”

ফতোয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)।
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী (রাহিমাহুল্লাহ)।
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)।
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂
[১] মাজমূ‘উ ফাতাওয়া; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৪০৯ ও ৪১৪; খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪৪৩, ৪৮৪ ও ৫০৬।
[২] সাহীহ বুখারী, হা/৬৭৮০।
[৩] সাহীহ বুখারী, হা/৬১০৫; সাহীহ মুসলিম, হা/১১০।
তথ্যসূত্র:
ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২৮৫-২৮৬; ফতোয়া নং: ১৪৬৬; ফতোয়ার আরবি টেক্সট আজুর্রি (ajurry) ডট কম থেকে সংগৃহীত।

অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে।