প্রশ্ন: আমার আড়াই বছরের একটি ছেলে আছে। সে নামাযের সময় আমাকে প্রচুর ডিস্টার্ব করে। সে আমার সামনে সেজদার জায়গায় শুয়ে পড়ে। তাকে সামনে থেকে সরিয়ে তারপর সেজদা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, সে আমার কাপড় ধরে টানাটানি করে, এতে পায়ের কিয়দংশ প্রকাশিত হয়ে যায়। অনেক সময় মাথার চুল বের হয়ে পড়ে। নামাযের মধ্যে কয়েকবার এমনটি করতে হয়। আমার প্রশ্ন হল, এভাবে কি আমার সালাত শুদ্ধ হবে না কি পুনরায় তা আদায় করতে হবে?
উত্তর:
আমাদের জানা দরকার যে, দ্বীন-ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হল, সহজতা। আল্লাহ তাআলা দ্বীন পালন আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। শিশুর প্রতি আচরণের বিষয়ে ইসলামের বিশেষ নির্দেশনা তার অন্যতম প্রমাণ। শিশুরা খেলাধুলা করবে, নামাযীর সামনে দিয়ে চলাফেরা করবে, দৌড়াদৌড়ি করবে, কাপড় ধরে টানাটানি করবে, দুষ্টামি করবে, কাঁধে উঠে বসবে…এগুলো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তাই তাদের মানসিকতার প্রতি লক্ষ্য রেখে ইসলামে এগুলোকে সহজভাবে গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
নিম্নোক্ত কয়েকটি হাদিস দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ
♻ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নাতনী উমামা বিনতে যায়নাব রা. কে বহন করে (কোলে বা কাঁধে উঠিয়ে ) নামায আদায় করতেন। যখন তিনি দণ্ডায়মান হতেন তখন তাকে উঠিয়ে নিতেন আর সিজদা করার সময় নামিয়ে রাখতেন। (সহীহুল বুখারী)
♻ একবার আমরা যোহর কিংবা আসর নামাজের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বেলাল রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাজের জন্য ডাকলে তিনি তার নাতনী উমামাহ রা. কে কাঁধে করে নিয়ে আমাদের কাছে আসলেন।
তিনি ইমামতির জন্য নামাজের স্থানে দাঁড়ালে আমরা তার পিছনে দাঁড়ালাম। অথচ সে (উমামাহ রা.) তার স্থানে তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাঁধেই আছে।
অতঃপর তিনি সালাতের তাকবীর দিলে আমরাও তাকবীর দিলাম।
অত:পর তিনি রুকু করার সময় তাকে পাশে নামিয়ে রেখে রুকু ও সেজদা করলেন। সেজদা শেষে আবার দাঁড়ানোর সময় তাকে আগের স্থানে উঠিয়ে নিলেন। এভাবে নামাজের শেষ পর্যন্ত। প্রত্যেক রাকাতেই তিনি এমনটি করলেন। (সুনান আবু দাউদ, হা/ ৯২০)
♻ এ ছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খুতবা দেয়ার সময় তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আসলে তিনি খুতবা দেয়া বন্ধ রেখে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন, কোলে তুলে নিতেন চুম্বন করতেন আর বলতেন, খুতবা শেষ করা পর্যন্ত আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারব না। তাই, আমি খুতবা দেয়া বন্ধ করেই এদের কাছে চলে এসেছি। (নাসায়ী)
♻ রাসূল সাল্লাল্লাহু জামাআতে নামায আদায় করার সময় যদি তার পেছনে বাচ্চাদের কান্নার আওয়াজ শুনতেন তাহলে তিনি নামায সংক্ষিপ্ত করতেন।
♻ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করতে জানে না সে আমার দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)
এ সকল হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়, বাচ্চাদের মানসিকতার প্রতি লক্ষ্য রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের এ সকল দুষ্টামি ও শিশু সুলভ আচরণে বিরক্ত না হয়ে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে এবং এগুলোকে সহজভাবে গ্রহণ করতে হবে।
যাহোক, নামাযরত অবস্থায় যদি বাচ্চা সামনে শুয়ে পড়ে, বারবার সামনে দিয়ে চলাফেরা করে, সেজদার জায়গা থেকে তাকে সরাতে হয়ে, কাপড় ধরে টানাটানি করার কারণে শরীরে কিছু অংশ খুলেও যায় তাতে সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। তাই এভাবে নামায আদায় করলে পুনরায় তা দোহরানোর প্রয়োজন নাই।
الله أعلم بالصواب
▬▬▬🔹🔸🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।।