সফর অবস্থায় রোজা সংক্রান্ত বিধি-বিধান

নিম্নে সংক্ষেপে সফর অবস্থায় রোজার বিধি-বিধান তুলে ধরা হল:

◈ ১. সফরকালে রোজা রাখতে সক্ষম-অক্ষম সবার জন্যই রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। এব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।
আল্লাহ তাআলা সফরে রোজা প্রসঙ্গে বলেন,
فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ
“অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা সফরে থাকবে সে অন্য সময় পূরণ করে নিবে।” (সূরা বাকারা: ১৮৪)

সফর কষ্টদায়ক হোক বা আরামদায়ক হোক তাতে হুকুমের পরিবর্তন হবে না। মুসাফির ব্যক্তি যদি খাদেম সাথে নিয়ে ছায়ায় থাকে, পানি পথে বা আকাশ পথে সফর করে তার জন্যও রোজা ভঙ্গ করা এবং নামাজ কসর করা জায়েজ। যেহেতু পূর্বোল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা অনুমতি দিয়েছেন।

ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصُهُ كَمَا يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى مَعْصِيَتُهُ
“আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর অবকাশ দেয়া কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন। যেমন তিনি তাঁর অবাধ্যতাকে অপছন্দ করেন।” [মুসনাদে আহমদ হা/৫৮৬৬]

হামযাহ্ ইবনে আমর আল আসলামি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, সফর অবস্থায় সিয়াম পালনের ক্ষমতা আমার রয়েছে। এ সময় সিয়াম পালন করলে আমার কোন গুনাহ হবে কি? তিনি বললেন,
هِىَ رُخْصَةٌ مِنَ اللَّهِ فَمَنْ أَخَذَ بِهَا فَحَسَنٌ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصُومَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ
“এটা আল্লাহর পক্ষ হতে এক বিশেষ অবকাশ, যে তা গ্রহণ করবে, তা তার জন্য উত্তম। আর যদি কেউ সিয়াম পালন করতে চায়, তবে তার কোন গুনাহ হবে না।” [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৫১৯]

◈ ২. সফর অবস্থায় রোজা পালন করা কষ্টকর না হলে রোজা রাখা উত্তম:

আবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে প্রচণ্ড গরমের দিনে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যাত্রা করলাম। গরম এত প্রচণ্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই আপন আপন হাত মাথার উপর তুলে ধরেছিলেন। এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) ব্যতীত আমাদের কেউই সিয়াম রত ছিলেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯৪৫)

◈ ৩. সফর কষ্টকর হলে ভেঙ্গে ফেলা উত্তম:

– জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে?
তারা বলল, সে রোজাদার।
আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
لَيْسَ مِنَ الْبِرِّ الصِّياَمُ في السَّفَرِ
“সফরে সওম পালনে কোন নেকির কাজ নয়।’’ [বুখারি, হাদিস নং ১৯৪৬]

– জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের বছর মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হলেন এবং সওম পালন করেই কুরাউল গামীম নামক উপত্যকা পর্যন্ত পৌঁছলেন। সাহাবীগণও সওম পালন করতে লাগলেন।
তখন রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সংবাদ পৌঁছল যে, সাহাবীদের জন্য সওম পালন করা কষ্ট দায়ক হয়ে পড়েছে। তখন তিনি আসরের পরে এক পেয়ালা পানি চাইলেন এবং তা পান করে ফেললেন। আর সাহাবীগণ (এ দৃশ্য) দেখছিলেন।
এরপর কিছু সাহাবি রোজা ভঙ্গ করে ফেললেন আর কিছু সাহাবি রোজা অব্যাহত রাখলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু সাহাবির রোজা পালনের ব্যাপারের খবর পৌছলে তিনি বললেন যে, أُولَئِكَ الْعُصَاةُ أُولَئِكَ الْعُصَاةُ “এরাই অবাধ্য, এরাই অবাধ্য।” [মুসলিম হা/২৬৬৬, নাসায়ী, হাদিস নং ২২৬৩]

◈ ৪. মুসাফির ব্যক্তি অন্য শহরে পৌঁছার পর, সেখানে যদি চার দিনের বেশী অবস্থানের নিয়ত করে তাহলে অধিকাংশ আলেমের মতানুযায়ী রোজা পালন করা তার উপর ওয়াজিব।

◈ ৫. যে ব্যক্তি সর্বদা সফরে থাকে তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা জায়েজ আছে। যেমন: দূর পাল্লার গাড়ী চালক, বিমান চালক এবং গাড়ী ও বিমানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাগর পথে জাহাজে কর্মরত ব্যক্তিগণ ইত্যাদি। গন্তব্য স্থলে তাদের আশ্রয় স্থল থাকলেও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে।

◈ ৬. কেউ যদি এক দেশে রোযা রাখতে শুরু করে অতঃপর এমন অন্য একটি দেশে যায় যেখানের লোকেরা দু-একদিন আগে বা পরে রোজা রাখা শুরু করেছে। এমতাবস্থায় যে দেশে গেল সে দেশের লোকদের মতই তাকে রোজা পালন করতে হবে অর্থাৎ তাদের মতই তাকে রোজার বিধান মেনে চলতে হবে। চাঁদের হিসেব অনুযায়ী রোযা ৩০টির বেশী হলেও তা পালন করতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الصومُ يومَ تَصُومُوْنَ، والإفْطاَرُ يَومَ تُفْطِرُونَ
“রোযার দিবসে তোমরা সবার সাথে রোযা রাখবে এবং ইফতার (ঈদ) দিবসেও তাদের সাথেই ইফ্‌তার করবে।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ-সহিহ)
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উৎস: সিয়াম কোর্স-আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল।
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।