নাপাক অবস্থায় মৃত্যু কি খারাপ মৃত্যু বলে গণ্য হয়

প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম শ্রদ্ধেয় শাইখ। এমন মৃত্যুর হুকুম কী যখন কোন নারী মাসিক চলাকালীন সময় অর্থাৎ নাপাকি অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে? এই মৃত্যু কি খারাপ মৃত্যুর শামিল? দয়া করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।
উত্তর: ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রাহ. না, নাপাক অবস্থায় মৃত্যু খারাপ মৃত্যু,তার ইমানি দুর্বলতা কিংবা তার উপর আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট এমন কিছুর প্রমাণ বহন করে না। বরং একজন ইমানদার, তাকওয়াবান এবং জান্নাতি মানুষেরও ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটতে পারে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হানজালা বিন আমের রা. উহুদের যুদ্ধে জুনুবি (স্ত্রী সহবাস জনিত কারণে নাপাক) অবস্থায় শাহাদত বরণ করেছিলেন এবং ফেরেশতাগণ তাঁকে গোসল করিয়েছিল।
◈ আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إنَّ صاحبَكم حَنْظلةَ تغسِلُه الملائكةُ فسَلُوا صاحبتَه
“তোমাদের এই সাথী হানজালাকে রা.কে ফেরেশতাগণ গোসল করাচ্ছেন। তোমরা তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করো।”
তখন (তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে) তিনি বললেন: তিনি যুদ্ধের ডাক শুনেই জুনুবি (স্ত্রী মিলন জনিত কারণে নাপাক) অবস্থায় বের হয়ে পড়েছিলেন।
তখন আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “এই কারণেই ফেরেশতাগণ তাকে গোসল করিয়েছেন।” [ইবনে হিব্বান, হা/৭০২৫, বায়হাকি, সহিহ-ইরওয়াউল গালীল, ৩/১৬৭]
এ কারণে এই সাহাবিকে গাসিলুল মালাইকাহ غسيل الملائكة (ফেরেশতা কর্তৃক গোসল করানো ব্যক্তি) বলা হয়ে থাকে।
সুতরাং স্বামী-স্ত্রী সহবাস কিংবা স্বপ্নদোষ ঘটার পর ফরজ গোসলের পূর্বে অথবা কোনও নারীর ঋতুস্রাব চলাকালীন অবস্থায় বা কোনও প্রসূতি নারীর রক্তস্রাব চলাকালীন সময় মৃত্যু ঘটলে এটা তার খারাপ মৃত্যু, ইমানি দুর্বলতা বা তার উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টির প্রমাণ বহন করে না। কারণ মৃত্যু এমন এক অবিসম্ভাবি বিষয় যে, তা যে কারও জীবনে যে কোনও মুহূর্তে নেমে আসতে পারে।
বিজ্ঞ আলেমগণ এমনটাই বলেছেন।
✪ তবে গোসল ফরজ হলে আমাদের কর্তব্য, যথাসম্ভব দ্রুত ফরজ গোসল করে নেওয়া। এটা অধিক উত্তম। বিনা দরকারে বিলম্ব না করাই ভালো। কিন্তু দরকার বোধে দেরি করলেও গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ যদি এ কারণে কোনও ফরজ ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়।
✪ হ্যাঁ, কেউ যদি জিনা, সমকামিতা, হস্তমৈথুন (আল্লাহ ক্ষমা করুন) ইত্যাদি হারাম কারণে নাপাক হয় অথবা কেউ যদি ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস ও শিরক-বিদআতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় থাকে অথবা নানা ধরণের ছোট পাপ অনবরত করতে থাকে বা বড় বড় গুনাহের কাজে জড়িত থাকে কিন্তু তওবা করার আগেই তার মৃত্যু এসে যায় তাহলে তা সূ-উল খাতিমাহ বা অপমৃত্যুর প্রমাণ যা হবে তার জন্য আখিরাতে দুর্ভাগ্যের কারণ। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন। তাই আমাদের কর্তব্য, মৃত্যুর পূর্বে আমাদের ইমান-আকিদা সংশোধন করা এবং অধিক পরিমান নেক আমল করার পাশাপাশি সব ধরণের পাপাচার থেকে দূরে থাকা এবং কোন পাপ ঘটে গেলে অনতিবিলম্বে লজ্জিত অন্তরে আল্লাহর নিকট তওবা করা। নিশ্চয় আল্লাহ দয়াময় ও তওবা কবুলকারী। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
Share: