কবরে কিছু মৃতদেহ অক্ষত থাকার ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা

প্রশ্ন: কিছু মৃতদেহ কবর দেওয়ার অনেক দিন পরও পচে না। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন। এতে করে কী কোনভাবে প্রমাণ হয় যে, সে ব্যক্তি আল্লাহর ওলি ছিলেন? দয়া করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ।
উত্তর: সাধারণত মৃতদেহ কবরস্থ করার কয়েক দিনের মধ্যেই পচন শুরু হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মৃতদেহটি দীর্ঘদিন পরও অক্ষত অবস্থায় আছে। এর পেছনের কারণগুলো বৈজ্ঞানিক ও ইসলামি উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়।
❑ বৈজ্ঞানিক কারণ:
❖ ক. মৃতদেহের পচন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা মূলত অণুজীবের ক্রিয়াকলাপ, এনজাইমের নিঃসরণ এবং বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। কিছু বিশেষ পরিস্থিতি এই প্রক্রিয়াকে ধীর বা বন্ধ করে দিতে পারে।
❖ খ. মাটির ধরন এবং পরিবেশ: অত্যন্ত শুষ্ক, শীতল বা কম অক্সিজেনের পরিবেশে মৃতদেহের পচন ধীর হয়। উদাহরণস্বরূপ: যদি কবরের মাটি খুব বালুকাময় ও শুষ্ক হয়, অথবা তাপমাত্রা খুব কম থাকে (যেমন: বরফাবৃত অঞ্চলে), তাহলে অণুজীবের কার্যকলাপ কমে যায়। ফলে পচন বিলম্বিত হয়।
❖ গ. বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ: যদি মৃতদেহটি কোনোভাবে বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ, যেমন ফরমালডিহাইড বা অন্যান্য প্রিজারভেটিভের সংস্পর্শে থাকে তাহলে পচন প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থগিত থাকতে পারে।
❖ ঘ. মমিফিকেশন: নির্দিষ্ট কিছু মাটির গঠন বা পরিবেশগত কারণে মৃতদেহ প্রাকৃতিকভাবেই মমিতে পরিণত হতে পারে। এক্ষেত্রে দেহের জলীয় অংশ দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
❖ ঙ. হিমায়িত অবস্থা: যদি কোনো মৃতদেহ হিমায়িত পরিবেশে থাকে তাহলে পচন কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। কারণ এই তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীব নিষ্ক্রিয় থাকে।
❑ ইসলামি দৃষ্টিকোণ:
ইসলামি আকিদা অনুযায়ী, মৃতদেহ পচে না-এমন ঘটনাকে অনেক ক্ষেত্রে আল্লাহর কুদরত বা অলৌকিক ক্ষমতা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
❖ নবী-রসুলগণ: হাদিসে বলা হয়েছে যে, নবী ও রসুলদের মৃতদেহ মাটির ওপর হারাম করা হয়েছে। অর্থাৎ মাটি তাঁদের দেহ ভক্ষণ করে না। এই কারণে তাঁদের মৃতদেহ অক্ষত থাকে। এই প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إنَّ اللَّهَ عزَّ وجلَّ حرَّمَ علَى الأرضِ أجسادَ الأنبياءِ
“আল্লাহ তাআলা নবীদের দেহ মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।” [সহিহ সুনানে আবু দাউদ, হা/১০৪৭]
❖ আল্লাহর ওলি বা বুজুর্গ: যদিও নবী-রসুলদের মতো তাঁদের মৃতদেহ অক্ষত থাকার বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো বর্ণনা নেই। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে তাঁর কোনো প্রিয় বান্দার মৃতদেহও অক্ষত থাকতে পারে। তবে এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কোনো সাধারণ নিয়ম নয়।
❑ এটি আল্লাহর ওলি হওয়ার প্রমাণ কিনা?
কোনো মৃতদেহ অক্ষত থাকলেই সে ব্যক্তি আল্লাহর ওলি বা বুজুর্গ ছিল-এমনটা বিশ্বাস করা ঠিক নয়। কারণ:
– অনেক সময় দেখা গেছে যে, দ্বীনের দিক থেকে খারাপ বা পাপী ব্যক্তির মৃতদেহও প্রাকৃতিক বা বৈজ্ঞানিক কারণে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর ফলে শুধুমাত্র মৃতদেহ অক্ষত থাকাটা কোনো ব্যক্তির ধার্মিকতা বা আল্লাহর নৈকট্যের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
– কুরআন ও হাদিসে এমন কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই যে, কোনো ওলি বা বুজুর্গের লাশ কবরে অক্ষত থাকবে। তাই এমন বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই।
– ইমানি পরীক্ষা: এই ধরনের ঘটনাকে ইমানের পরীক্ষা হিসেবে দেখা যেতে পারে। যারা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিরক, বিদআত বা বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয় তারা ভুল পথে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে যারা এই ধরনের ঘটনাকে আল্লাহর ক্ষমতা হিসেবে স্বীকার করে এবং সঠিক ইসলামি শিক্ষার উপর অটল থাকে তারাই সঠিক পথের অনুসারী।
সুতরাং কোনো মৃতদেহ অক্ষত থাকলেই সে ব্যক্তি আল্লাহর ওলি ছিলেন বলে বিশ্বাস করা শরিয়তসম্মত নয়। এটি প্রাকৃতিক বা বৈজ্ঞানিক কারণের জন্যও হতে পারে। অথবা এটি আল্লাহর কুদরতের একটি নিদর্শন হতে পারে। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়াবাড়ি বা কুসংস্কার ছড়ানো থেকে বিরত থাকা উচিত। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
Share: