প্রশ্ন: একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কি তার প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত হোমওয়ার্কের কোড লেখার কাজে গবেষণা ও শেখার উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন যেমন: ChatGPT ব্যবহার করতে পারবে? এটি কি গুগল সার্চ ইঞ্জিনের মতোই গণ্য হবে গবেষণার ক্ষেত্রে?
উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ, ওয়া সালাতু ওয়া সালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ।
❑ প্রথমত: কল্যাণকর কাজে AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার করতে শরিয়তে কোনো আপত্তি নেই। কেননা সব কল্যাণকর জিনিস মূলত হালাল ও বৈধ। আল্লাহ তাআলা বলেন:
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا
“তিনি আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা বাকারা: ২৯]
✪ তিনি আরও বলেন:
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ ۚ قُلْ هِيَ لِلَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ
“বলুন: কে আল্লাহর সেই শোভাবর্ধক বস্তু ও উত্তম রিজিককে হারাম করেছে, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন? বলুন: এসব দুনিয়াতে মুমিনদের জন্য আর কিয়ামতের দিনে তো একান্তভাবে তাদেরই।” [সূরা আরাফ: ৩২]
শায়খ ইবনে উসাইমিন রহিমাহুল্লাহ বলেন: “আহলুল ইলমদের মাঝে একটি সর্বজনস্বীকৃত মূলনীতি হচ্ছে: “বিভিন্ন বস্তু এবং উপকারি কাজসমূহ মূলত হালাল যতক্ষণ না তার হারাম হওয়ার সুস্পষ্ট দলিল পাওয়া যায়।” এই মূলনীতি কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন নস থেকে প্রমাণিত।
✪ কুরআন থেকে প্রমাণ:
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا
✪ হাদিস থেকে প্রমাণ:
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى فَرَضَ فَرَائِضَ فَلَا تُضَيِّعُوهَا، وَحَدَّ حُدُودًا فَلَا تَعْتَدُوهَا، وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ رَحْمَةً بِكُمْ غَيْرَ نِسْيَانٍ، فَلَا تَبْحَثُوا عَنْهَا
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কিছু ফরজ করেছেন, সেগুলো নষ্ট করো না। কিছু সীমা নির্ধারণ করেছেন, তা লঙ্ঘন করো না। আর কিছু বিষয় নিয়ে তিনি নীরব থেকেছেন, তোমাদের প্রতি দয়া করে; ভুলে নয়—সুতরাং সে বিষয়ে অনুসন্ধান করো না।”
✪ তিনি আরও জানিয়েছেন:
“ما سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَفْوٌ”
“যে বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন তা ক্ষমা বা ছাড়।” [মাজমু ফাতাওয়া ইবনে উসাইমিন, ১২/১৬৯]
❑ দ্বিতীয়ত: বিশ্ববিদ্যালয়ের হোমওয়ার্কের প্রোগ্রামিং কোড লেখায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো, এটি জায়েজ নয়। কারণ হোমওয়ার্কের উদ্দেশ্য থাকে, শিক্ষার্থীর অনুশীলন, দক্ষতা যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় পুনরালোচনার সুযোগ করে দেওয়া। অথচ AI-র উপর নির্ভর করা এই উদ্দেশ্যগুলোকে নষ্ট করে দেয়। এটি ঠিক যেন ছাত্রটি তার কোনো সহপাঠীর কাছ থেকে কোড নিয়ে জমা দিচ্ছে। কেননা এখানে নিজের কিছু শেখা ও করার প্রচেষ্টা খুব কম। সুতরাং এটি গুগলে গবেষণা করার মতো নয়। বরং গুগল থেকে কেউ হুবহু হোমওয়ার্ক নিয়ে নিলেও তা গোপন চুরির শামিল হয়ে যায়। এখানেও একই অবস্থা। তবে যদি সন্দেহ বা দ্বিধা তৈরি হয় তাহলে বিষয়টির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষককে জিজ্ঞেস করা উচিত তিনি কি AI ব্যবহারের অনুমতি দেন কি না। আল্লাহু আলাম। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। [সূত্র: islamqa]
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, সৌদি আরব।