স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত এবং মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত কোনটি সঠিক

প্রশ্ন: মানুষকে বলতে শোনা যায় যে, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”। আবার এটাও শোনা যায় যে, “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত।” এ দুটি কথার মধ্যে মূলত: কোন হাদিসটি সঠিক দয়া করে জানাবেন।▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর:
💠 “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত” এ কথাটা কোন হাদিস নয়। বরং বানোয়াট কথা। কিন্তু হাদিস হিসেবে আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছেে!! তবে স্ত্রীর কাছে স্বামীর সম্মানের কথা হাদিসে এভাবে উল্লিখিত হয়েছে,
لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَالَّذِى
نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّىَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِىَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ
“যদি আমি কাউকে নির্দেশ দিতাম আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করার, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।” [ইবনে মাজাহ, হা/১৮৫৩; সহীহাহ, হা/১২০৩।]

– স্বামী জান্নাত অথবা জাহান্নাম:

হুসাইন বিন মিহসানের এক ফুফু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কোন প্রয়োজনে এলেন এবং তা পূরণ হয়ে গেলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
– তোমার কি স্বামী আছে?
সে বলল, জী, হ্যাঁ।
– তিনি বললেন, তার কাছে তোমার অবস্থান কী?
সে বলল, ’যথাসাধ্য আমি তার সেবা করি।’
– তিনি বললেন, ’’খেয়াল করো, তার কাছে তোমার অবস্থান কোথায়। যেহেতু সে তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।”

عَنِ الْحُصَيْنِ بْنِ مِحْصَنٍ أَنَّ عَمَّةً لَهُ أَتَتْ النَّبِيَّ ﷺ فِي حَاجَةٍ فَفَرَغَتْ مِنْ حَاجَتِهَا فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ ﷺ أَذَاتُ زَوْجٍ أَنْتِ قَالَتْ نَعَمْ قَالَ كَيْفَ أَنْتِ لَهُ قَالَتْ مَا آلُوهُ إِلَّا مَا عَجَزْتُ عَنْهُ قَالَ فَانْظُرِي أَيْنَ أَنْتِ مِنْهُ فَإِنَّمَا هُوَ جَنَّتُكِ وَنَارُكِ
[আহমদ, ১৯০০৩, নাসাঈ, হাকেম, বাইহাকি-সহিহ]

💠 “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত” হুবহু এ শব্দে বর্ণিত হাদিসটি খুব দুর্বল মতান্তরে বানোয়াট। কিন্তু তার অর্থটি সঠিক-যেমনটি বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত হাদিস সমূহে:

🔰 মুআবিয়া ইবনে জাহিমা রা. হতে বর্ণিত। একদা আমার পিতা জাহিমা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন,

يَا رَسُولَ اللهِ أَرَدْتُ الْغَزْوَ وَجِئْتُكَ أَسْتَشِيْرُكَ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ قَالَ نَعَمْ فَقَالَ الْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلِهَا

‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি জিহাদে যেতে ইচ্ছুক। আমি আপনার নিকট পরামর্শ নিতে এসেছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা আছে কি? লোকটি বললেন, হ্যাঁ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি তার পদযুগল জড়িয়ে থাকো (অর্থাৎ তার সেবা করো), কেননা তাঁর পায়ের নিকটেই জান্নাত রয়েছে।” [আহমদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৯৩৯; সহীহুল জামে‘ হা/১২৪৯, সহীহু তারগীব ওয়াত তারহীব।]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
فالزَمها فإنَّ الجنَّةَ تحتَ رِجلَيها
“তুমি তার পদযুগল জড়িয়ে থাকো (অর্থাৎ তার সেবা করো), কেননা তাঁর পায়ের নিচেই জান্নাত রয়েছে।” [সহিহ নাসাঈ, হা/৩১০৪]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহিমা রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
أَلكَ والِدَانِ . قُلْتُ : نَعَمْ . قال : الزَمْهُما ، فإنَّ الجنةَ تَحْتَ أَرْجُلِهما
“তোমার কি পিতামাতা আছে?”
আমি বললাম, হ্যাঁ।
তিনি বললেন, “তুমি তাদেরকে আঁকড়িয়ে থাকো। কারণ জান্নাত রয়েছে, তাদের পায়ের নিচে।” [সহিহ তারগিব, হাসান সহিহ, ২৪২৫]
এ বর্ণনায় পাওয়া গেলো, পিতামাতা উভয়ের পায়ের নিচেই জান্নাত রয়েছে।
🔰 আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে হাজির হয়ে বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا قَالَ هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ
“হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সন্তানের উপর পিতামাতার কি হক? তিনি বললেন, “তারা উভয় তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’। [ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৪৭২৪।] অর্থাৎ মায়ের সেবা করা জান্নাতে যাওয়ার একটি মাধ্যম।

❌ ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত’ মর্মে নিন্মোক্ত শব্দে বর্ণিত দুটি হাদিস সহিহ নয়। যথা:
((الجنة تحت أقدام الأمهات)). وفي لفظ: ((الجنة تحت أقدام الأمهات، مَنْ شِئن أدخلن، ومَن شِئن أخرجن!))
ক. “বেহেশত রয়েছে মায়েদের পদতলে।”
খ. অন্য শব্দে “বেহেশত রয়েছে মায়েদের পদতলে। যাকে খুশি তারা জান্নাতে প্রবেশ করাবে আর যাকে খুশি বের করবে।”
এই শব্দে বর্ণিত হাদিস দুটি মুহাদ্দিসদের মতানুসারে জঈফ (দুর্বল) আর কারো মতে মউযু (বানোয়াট)। তবে ‘মায়ের পায়ের নিকট জান্নাত’ এর মর্মার্থটি পূর্বোল্লিখিত হাদিসদ্বয়ের আলোক সহিহ। আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।