সুন্নতি পোশাক (পুরুষ-নারী)

প্রশ্ন: শরিয়তে ‘সুন্নাতি পোশাক’ বলতে কোন ধরণের পোশাককে বুঝানো হয়েছে? সুন্নাতি পোশাকের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করলে উপকৃত হবো।
উত্তর:
পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের কতিপয় মূলনীতি আছে সেগুলো ঠিক রেখে একজন মুসলিম যে কোন পোশাক পরতে পারে। ইসলাম তার অনুমোদন দিয়েছে।

◯ ইসলাম প্রদত্ত পোশাকের মূলনীতিগুলো নিম্নরূপ:

● পুরুষদের টাখনুর নিচে পরা যাবে না।
● বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করা যাবে না।
● খুব পাতলা বা আঁটোসাঁটো হওয়া যাবে না যাতে লজ্জা স্থানগুলো ফুটে উঠে বা দেখা যায়।
● বিধর্মীদের ধর্মীয় পোশাকের মত হবে না (যেমন: বৌদ্ধদের বিশেষ কালারের পোশাক),
● সমাজে প্রচলিত নয় এমন অদ্ভুত ডিজাইন, কালার পোশাক পরিধান যাবে না যাকে হাদিসে ‘লিবাসুস শুহরাহ’ বলা হয়েছে ইত্যাদি।

এই শর্তগুলো ঠিক রেখে মুসলিমগণ নিজ নিজে দেশে প্রচলিত পোশাক পরিধান করতে পারে। শরীয়ত তাতে বাধা দেয় না।

নারীগণ পূর্ণ হিজাব পরবে। এমন কাপড় ব্যবহার করবে যেন পর পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল সহ শরীরের কোন অংশ খোলা না থাকে। এ ক্ষেত্রে কালো বোরকা উত্তম হিজাব। বোরকা কালার ফুল এবং নকশাদার হওয়া উচিৎ নয়। কেননা, সে ক্ষেত্রে বোরকা পরার উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। কেননা, এমন বোরকা নিজেই একটা সৌন্দর্য যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

◯ জুব্বা, পাঞ্জাবী, গোল জামা, আলখাল্লা, পাগড়ি এগুলো কি সুন্নতি পোশাক?

এগুলো সব আঞ্চলিক পোশাক। এগুলোকে সুন্নতি পোশাক বলা ঠিক নয়। আরব বিশ্বে মুসলিম-খৃষ্টান নির্বিশেষে জুব্বা বা আলখাল্লা পরিধান করত; এখনও পরে। ভারতের পাঞ্জাব এলাকার লোকেরা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পাঞ্জাবী পরিধান করে। সেটা পরবর্তীতে আমাদের দেশ সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
পাগড়ি আরব সহ আরও কিছু এলাকার আঞ্চলিক কালচার। আবু জাহেলও পাগড়ি পরত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও পরতেন। এটা ছিলে সমাজে প্রচলিত পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। তবে ইচ্ছে করলে মুসলিমগণও পাগড়ি পরতে পারে। এতে আলাদা ফযিলত সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ মর্মে কিছু হাদিস বর্ণিত হলেও সেগুলো বানোয়াট, মুনকার ও অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ের।
অনুরূপভাবে টাইও খৃষ্টানদের ‘ক্রসের চিহ্ন’ এমন কোন কথা ঐতিহাসিকভাবে বা কোন প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাই একজন মুসলিম টাইও পরতে পারে দেশে প্রচলিত পোশাক হিসেবে।

◯ কুরআনে ‘তাকওয়ার পোশাক’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?

কুরআনে বর্ণিত, ‘লিবাসুত তাকওয়া’ বা তাকওয়ার পোশাক দ্বারা বাহ্যিক কোন পোশাক উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য হল, তাকওয়া অবলম্বন করা, ঈমান ও আমলে সালেহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّـهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
“হে বনী আদম, আমি তোমাদের জন্যে পেfশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জা স্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র। তাকওয়ার পোশাক; এটি সর্বোত্তম।” (সূরা আরাফ: ২৬)

এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণের বক্তব্য নিম্নরূপ:
◉ কাতাদাহ ও ইবনে জুরাইজ, সুদ্দী বলেন, লিবাসুত তাকওয়া অর্থ: ঈমান
◉ ইবনে আব্বাস রা. বলেন: নেক আমল।
◉ উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর বলেন: আল্লাহর ভয়।
(দেখুন: তাফসীরে ইবনে কাসীর )

◯ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন পোশাক পরেছেন?

সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ি, পাগড়ির নিচের টুপি, জুব্বা, লুঙ্গি, চাদর, পায়জামা, জামা ইত্যাদি পরিধান করেছেন।

এ ব্যাপারে অধিকাংশ মুহাক্কিক আলেমগণ বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব কাজ স্বভাবজাত বা মানুষের প্রকৃতিগত কাজ, সেগুলো সবই মূলত: আদতের (অভ্যাস, প্রথা বা প্রচলন) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই তাঁর এই কাজগুলো অভ্যাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে; এগুলো ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা এ সব পোশাক তখনকার সমাজে প্রচলিত পোশাক ছিল। এমন নয় যে, নবুওয়তের পূর্বে তিনি এক ধরণের পোশাক পরতেন আর নবুওয়ত পাওয়ার পর আগের সব পোশাক খুলে নতুন ধরণের পোশাক পরা শুরু করে দিয়েছেন বা সাহাবিগণ ইসলাম গ্রহণের পরই আগের প্রচলিত পোশাক পরিবর্তন করে নতুন ডিজাইনের পোশাক পরা শুরু করেছন। না, তারা এমনটি করেন নি বরং তারা তৎকালীন সমাজের প্রচলিত পোশাকই পরিধান করেছেন। কিন্তু পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদত্ত উপরোক্ত নীতিমালাগুলো অনুসরণ করেছেন।

এখন কেউ যদি রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণে এবং তার প্রতি ভালবাসা বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উপরোক্ত পোশাকগুলো পরিধান করেন তাহলে তিনি সওয়াবের অধিকারী হবেন ইনশাআল্লাহ। আর তা শুধু ওই পোশাকের কারণে নয় বা পোশাকটাকে সুন্নত আখ্যায়িত করার জন্য নয় বরং রাসূল সা. এর অনুসরণ ও তার প্রতি ভালবাসার কারণে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◐✪◑▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA