সুন্দর, সু স্বাস্থ্যবান, মেধাবী ও সুসন্তান লাভের উদ্দেশ্যে গর্ভাবস্থায় কুরআনের বিশেষ বিশেষ সূরা পড়ার আমল

প্রশ্ন: একজন গর্ভবতী মা প্রথম ছয় মাসে শারীরিক দুর্বলতার জন্য কুরআন তিলাওয়াত খুব বেশি করতে পারেন নাই। এখন তার অষ্টম মাস চলছে আর কুরআনের ১৪তম পারা পড়ছেন। বিভিন্ন ইসলামি গ্রুপে গর্ভাবস্থায় সূরা ইউসুফ, সূরা ইবরাহীম ও সূরা মুহাম্মদ পড়ার কথা দেখা যায়।
এখন তিনি কি কুরআন খতম দেয়ার চেষ্টা করবেন নাকি এই সুরাগুলো বেশি বেশি বেশি পড়বেন?
অনেকের বলে, সূরা মারইয়াম, ওয়াকিয়া, দুআ ইউনুস পাঠ করলে প্রসব বেদনা কম হয়। এগুলো কি সবসময় পড়বে না প্রসব বেদনা উঠলে কেউ পাঠ করে শুনাবে?

উত্তর:

গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থায় যথাসম্ভব কুরআন তিলাওয়াত করবে, কারীদের তিলাওয়াত শুনবে, নফল সালাত, দুআ-তাসবীহ, ইস্তিগফার পাঠ ইত্যাদি নেকির কাজ যথাসাধ্য করার চেষ্টা করবে এবং গান-বাজনা শ্রবণ, অশালীন বাক্য উচ্চারণ, গিবত, সমালোচনা, পর্দাহীনতা, অশ্লীলতা, সালাত পরিত্যাগ ইত্যাদি সব ধরণের হারাম কার্যক্রম থেকে দূরে থাকবে। তাহলে আশা করা যায় এগুলো গর্ভস্থ সন্তানের উপর প্রভাব ফেলবে এবং কুরআনের বরকতে সুসন্তান লাভ হবে ইনশাআল্লাহ।

কিন্তু কুরআন-সুন্নায় গর্ভাবস্থায় বিশেষ কোন সূরা পড়ার নির্দেশনা আসে নি। গর্ভ ধারণের অমুক মাসে অমুক অমুক সুরা পড়লে সন্তান এমন হবে..তেমন হবে…এ জাতীয় কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অজ্ঞতা প্রসূত বিদআতি কথা। যেমন বলা হয়:
– গর্ভাবস্থায় এততম মাসে অমুক সূরা পড়লে সন্তান সুন্দর হবে,
– অমুক সূরা পড়লে মেধাবী হবে,
– অমুক সূরা পড়লে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে,
– অমুক সূরা তিলাওয়াত করলে বা শুনলে প্রসব বেদনা কম হবে ..এগুলো সব মনগড়া ও বানোয়াট কথাবার্তা। আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহির নির্দেশনা ব্যতিরেকে এমন কথা বলার কেউ অধিকার রাখে না।

মনে রাখতে হবে, সন্তান কেমন হবে তা একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। এখানে বান্দার কোনো হাত নেই বা জানার কোন সুযোগ নাই। আল্লাহ তাআলা বলেন:
هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ
“তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের আকার-আকৃতি গঠন করেন মাতৃগর্ভে, যেভাবে তাঁর ইচ্ছা।” (সূরা আলে ইমরান: ৬)
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন:
” من حُسْن وقُبْح ، وسواد وبَيَاض ، وطُول وقِصَر ، وسَلامة وعاهة ، إلى غير ذلك ”
অর্থাৎ সুন্দর-কুৎসিত, কালো-ফর্সা, লম্বা-বেঁটে, সুস্থ-প্রতিবন্ধী ইত্যাদি। (এগুলো মহান আল্লাহ তাঁর ইচ্ছামত সৃষ্টি করেন) [আল জামে লি আহকামিল কুরআন ১/৯২৭]

সুতরাং ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে বা ইউটিউবে বিশুদ্ধ দ্বীন বিষয়ে জাহেল লোকদের দলিল বহির্ভূত বা জাল-জঈফ কথাবার্তা পড়ে বা বক্তৃতা শুনে সেগুলো আমল করার সুযোগ নাই। কারণ এগুলো সব বিদআতি কথা। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি (ভ্রষ্টতা)।
আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
▬▬▬▬◈◉◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল-মাদানী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব