শিশুদের প্রহার করার বিধান

আলজেরিয়ার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. মুহাম্মাদ ‘আলী ফারকূস (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৪ হি./১৯৫৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—
প্রশ্ন: “শিক্ষক কি ছাত্রদের প্রহার করতে পারবেন? এ কাজ যদি বৈধ না হয়, তাহলে ছাত্রদের খারাপ তরবিয়তের ফলে তাদের কেউ কেউ হাঙ্গামা করলে শিক্ষক কি প্রয়োজনবোধে হালকা প্রহার করতে পারবেন? আল্লাহ আপনাকে উত্তম পারিতোষিক দিন।”
উত্তর: ❝যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর, যাঁকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ, এবং দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার পরিজন, সঙ্গিবর্গ ও কেয়ামত অবধি আগত ভ্রাতৃমণ্ডলীর ওপর। অতঃপর:
উলামাদের অভিমত হলো দশবছর বয়সে পদার্পণের আগে শিশুকে নামাজ পরিত্যাগের জন্য প্রহার করা না-জায়েজ। যেহেতু আবু দাউদে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমাদের সন্তানদের বয়স সাতবছর হলে তাদেরকে নামাজ পড়ার নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স দশবছর হয়ে যাবে, তখন (নামাজ আদায় না করলে) তাদেরকে মারবে এবং তাদের ঘুমের বিছানা আলাদা করে দিবে।” [আবু দাউদ, হা/৪৯৫; আলবানী হাদীসটিকে ‘ইরওয়াউল গালীল’ গ্রন্থে (১/২৬৬; হা: ২৪৭) সহীহ বলেছেন।]
তাঁরা এ হাদীসের মর্মার্থের ওপর ভিত্তি করে হুকুম দেন, যেই হাদীসের দাবি অনুযায়ী নামাজের সাথে সাথে শিশুর যাবতীয় কাজের ক্ষেত্রে তাকে প্রহার করা অবৈধ। তবে এটা সুবিদিত, যারা এ মত পোষণ করেন (‘দশবছরের আগে কোনোভাবেই মারা যাবে না’– শীর্ষক অভিমত পোষণ করেন), তাঁদের মতানুযায়ী হাদীসের মর্মার্থ মোতাবেক আমল করার শর্ত হচ্ছে—বিশেষ কোনো কারণ কিংবা বিশেষ কোনো ঘটনার সাথে প্রহারের ব্যাপারটি সম্পর্কযুক্ত হওয়া যাবে না। দশবছরের পূর্বে প্রহার না করার ক্ষেত্রে হাদীসে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার এমন সম্ভাবনা আছে—অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ বয়সে (দশবছরের আগে) প্রহার সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না।
এজন্য মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) এর অভিমত ছিল, “শিশুর দন্ত পরিবর্তন হলেই তাকে নামাজের নির্দেশ দেওয়া যাবে, নামাজ না পড়লে আদব শিক্ষা দেওয়া যাবে। আর তাকে মারলে হালকা প্রহার করতে হবে।” [লাখমী কৃত আত-তাবসিরাহ, ১/৩৯০; পিতামহ ইবনু রুশদ কৃত আল-বায়ান ওয়াত তাহসীল, ১/৪৯৩]
আলক্বামী তদীয় ‘শারহুল জামিইস সগীর’ গ্রন্থে বলেছেন, “দশবছর বয়সে প্রহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ বয়সে উপনীত হলে প্রহার সহ্য করার উপযুক্ত হয়ে যায়। প্রহার বলতে এমন প্রহার উদ্দিষ্ট, যা নির্যাতনের পর্যায়ভুক্ত নয়; আর সে প্রহারে চেহারায় মারা থেকে বিরত থাকা হয়।” [আযীমাবাদী প্রণীত আওনুল মাবুদ (২/১১৪) থেকে গৃহীত]
এগুলো তখন করতে হবে, যখন সে হুঁশিয়ারি অথবা ধমক খেয়েও ভালো হয় না। দুটোর একটিতে যদি সে ভালো হয়ে যায়, তাহলে তাকে প্রহার করা না-জায়েজ। তবে আমার মতে দশবছরের আগে আদবের প্রহার বর্জন করাই সতর্কতামূলক কর্মপন্থা, যদিও সেই প্রহার হালকা হয়। যেহেতু এতে করে হাদীসের বাহ্যিক অর্থের ওপর আমল সম্পন্ন হয়। শিশুর শরীরের জন্যও এ কর্মপন্থা অধিক সুরক্ষাজনক ও নিরাপদ।
সুতরাং শরয়ী নির্দেশনা অনুসারে ভালো দিকনির্দেশনা দিয়ে ছাত্রদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা শিক্ষকের কর্তব্য। তদ্রুপ ছাত্রদের হাত ধরে, তাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য ফলপ্রসূ এমন বিষয় শিক্ষা দিয়ে, তাদেরকে নাজাতের পথে এবং নিরাপত্তার প্রান্তরে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তাদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক রাখা বাঞ্ছনীয়। সর্বোপরি শিক্ষকের মর্যাদা পিতামাতার মর্যাদার চেয়ে কম নয়; সাধারণভাবে প্রতিপালন-সম্বন্ধীয় তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে এবং বিশেষত শিক্ষা ও ধর্মীয় তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে।
বস্তুত প্রকৃত ইলম রয়েছে আল্লাহর নিকটে। সর্বোপরি যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের জন্য। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীবর্গ ও কেয়ামত অবধি আগত ভ্রাতৃবর্গের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।❞
·
তথ্যসূত্র:
ferkous.com/home/?q=fatwa-352।
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari