যে সব কারণে জামাআত ত্যাগ করা জায়েজ আছে

যে সব কারণে জামাআত ত্যাগ করা জায়েজ আছে
▬▬▬▬◐◯◑▬▬▬▬
ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে সালাত আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা মতান্তরে ওয়াজিব)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ سمعَ النداءَ فلمْ يُجِبْ مِن غيرِ عذرٍ فلا صلاةَ لَه
“যে ব্যক্তি আজান শুনে তাতে তাতে সাড়া দিলো না তার সালাত হবে না। তবে যদি ওজর থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।” [সহীহ ইবনে হিব্বান ৫/৪১৫, ৪৫০, সহীহুত তারগীব ১/২৪০]
বিশেষ পরিস্থিতি এবং মানুষের কিছু সমস্যা বা অসুবিধার কারণে শরিয়ত তাদেরকে জামাআতে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে না যাওয়ার বা জামাআতে অংশ গ্রহণ না করার অনুমতি দিয়েছে।

নিম্নে এমন ৭টি কারণ (ওজর) উল্লেখ করা হল:

◈ ১) অসুস্থতা: অসুস্থতার কারণে যদি মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা কষ্টকর হয়।
◈ ২) ভয়: বিশেষ পরিস্থিতিতে জামাতে সালাত পড়তে গেলে যদি চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারী, যুদ্ধ, পুলিশ-প্রশাসনে নিষেধাজ্ঞা (যেমন: দেশের জরুরি অবস্থা/কারফিউ), বন্য পশুর আক্রমণ, রোগ-ব্যাধির সংক্রমণ ইত্যাদি কারণে ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
◈ ৩) বৃষ্টি-বাদল।
◈ ৪) কর্দমাক্ত পিচ্ছিল পথ।

قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لِمُؤَذِّنِهِ فِي يَوْمٍ مَطِيرٍ إِذَا قُلْتَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ‏.‏ فَلاَ تَقُلْ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ‏.‏ قُلْ صَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ‏.‏ فَكَأَنَّ النَّاسَ اسْتَنْكَرُوا، قَالَ فَعَلَهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي، إِنَّ الْجُمُعَةَ عَزْمَةٌ، وَإِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أُخْرِجَكُمْ، فَتَمْشُونَ فِي الطِّينِ وَالدَّحْضِ‏.‏
ইবনে ‘আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত: তিনি তাঁর মুয়াজ্জিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্‌ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্‌ সালাহ্’ বলবে না; বলবে, “সাল্লূ ফী বুয়ুতিকুম” (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর)।
এ কথা শুনে লোকজন আপত্তি করল। তখন তিনি বললেন, আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেছেন। জুমার সালাত নিঃসন্দেহে জরুরি কিন্তু মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করায় তোমাদের অসুবিধা হোক সেটা আমি অপছন্দ করি।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৯০১)

◈ ৫) অন্ধকার রাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার প্রকোপ:
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْمُرُ مُؤَذِّنًا يُؤَذِّنُ، ثُمَّ يَقُولُ عَلَى إِثْرِهِ: أَلَا صَلُّوا فِيْ الرِّحَالِ فِي اللَّيْلَةِ الْبَارِدَةِ أَوْ الـْمَطِيرَةِ فِيْ السَّفَرِ».

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাবস্থায় ঠাণ্ডা কিংবা বৃষ্টিমুখর রাতে মুয়াজ্জিনকে আজান দেওয়ার পর এ কথা বলার আদেশ করতেন: “আলা সাল্লূ ফির-রি’হাল” “তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো।” [সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৬৩২]

সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. একদা দমকা বায়ু ও বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাতে আজান দেওয়ার পর বললেন: “আলা সাল্লূ ফী-রিহালিকুম” “আলা সাল্লূ ফী-রিহালিকুম” “হে লোকজন, তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো। হে লোকজন, তোমরা নিজ নিজ ঘরে ঘরে সালাত পড়ো।”
অতঃপর বললেন: আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাবস্থায় বৃষ্টিময় ঠাণ্ডা রাতে মুয়াজ্জিনকে নিম্নোক্ত কথাটি বলার আদেশ করতেন:

أَلَا صَلُّوا فِيْ رِحَالِكُمْ»
“আলা সাল্লূ ফী রিহালিকুম”
“হে মানুষজন! তোমরা নিজ নিজ ঘরে সালাত পড়।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৯৭]

➧ উপরোক্ত কারণগুলোতে মসজিদে গিয়েে জামাআতে সালাত আদায় করা সম্ভব না হলে যথসময়ে বাড়িতে পরিবারের লোকজন সহ জামাতে সলাত আদায় করা উত্তম।

◈ ৬) পেশাব পায়খানার চাপ: এ ক্ষেত্রে করণীয় হল, পেশাব-পায়খানা শেষ করে ফ্রেশ হয়ে তারপর জামাতে অংশগ্রহণ করা।
◈ ৭) খাবারের উপস্থিতি: ক্ষুধার্ত অবস্থায় যদি খাবার সামনে প্রস্তুত হয়ে যায় তাহলে আগে খাওয়া সেরে তারপরে জামাআতে অংশগ্রহণ করবে। তবে তা অভ্যাসে পরিণত করা ঠিক নয়।
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَا صَلَاةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ، وَلَا وَهُوَ يُدَافِعُهُ الْأَخْبَثَانِ»
খাবারের উপস্থিতিতে এবং পেশাব-পাখানার চাপ অবস্থায় সালাত নেই।” [সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৬০]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◐◯◑▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।