মেয়েদের ঋতুস্রাব, প্যাম্পারস এবং সামাজিক ট্যাবু (taboo) ভাঙ্গার নামে এক নোংরা ষড়যন্ত্র: যুবসমাজ সচেতন কতটুকু?

প্রশ্ন: মেয়েদের পিরিয়ডের সময় প্যাম্পারস প্যান্ট কিনা না থাকলে সেটা কি তার নিজ বড় বা ছোট ভাই অথবা তার বাবা অথবা যাদের সাথে বিবাহ হারাম তারা দোকান থেকে ক্রয় করে এনে মেয়েটাকে দিতে পারবে?

উত্তর:

একজন মেয়ের পিরিয়ডের সময় প্যাম্পারস বা প্যাড কেনার জরুরি প্রয়োজন হলে, যে কোন মাহরাম ব্যক্তি দ্বারা তা ক্রয় করা যাবে। ইসলামি শরিয়তে এতে কোন বাধা নেই। বাবা-ভাই বা কোন মাহরাম পুরুষ এগুলো ক্রয় করতে পারবে না ইসলামে এমন কোন নিষেধাজ্ঞা আসে নি।

তবে স্বামী থাকলে অবশ্যই তার দায়িত্ব স্ত্রীর প্রয়োজনীয় সব কিছুর সুব্যবস্থা করে দেয়া। আর স্বামী না থাকলে একজন নারী নিজস্ব উপায়ে তা সংগ্রহ করবে। দরকার হলে, বাবা-ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা ইত্যাদির মাধ্যম তা ক্রয় করবে। চেষ্টা করতে হবে, যথাসম্ভব একবারে বেশি করে ক্রয় করে রাখা যেন, প্রতি মাসে তা কেনার প্রয়োজন না হয়।

লক্ষণীয় বিষয় হল, আমাদের দেশে মেয়েরা তাদের পোশাক-আশাক, মসমেটিক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র কেনাকাটার জন্য যেভাবে বাজারে নারী-পুরুষ একাকার হয়ে ভিড় জমাচ্ছে ইসলামি সমাজে তা কাম্য নয়। এটা অনেক ফিতনার কারণ। সুতরাং মেয়ে মানুষ নিজে এসব ক্রয় করার জন্য দোকানে বা বাজারে যাওয়াটাও অনেক সময় ফেতনা সৃষ্টি করে।

যাহোক এগুলো জিনিস বাবা-ভাই ইত্যাদি মাহরাম পুরুষদের দ্বারা ক্রয় করার অর্থ এই নয় যে, লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে তারা নিজেদের গোপন ও মেয়েলি বিষয়গুলো তাদের সামনে খোলামেলা আলোচনা করবে বা ফেসবুকে পাবলিকলি ডিসকাস করবে।

◈◈ হায়েজের ক্ষেত্রে ইঙ্গিত বাচক বাক্য ব্যবহার করা শিষ্টাচারের প্রমাণ:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মহিলাগণ কিভাবে তাদের হায়েজের বিষয়টি সরাসরি প্রকাশ না করে ইঙ্গিত বাচক বাক্য ব্যবহার করতেন তা নিম্নোক্ত হাদিস থেকে প্রতিভাত হয়:

বিদায় হজ্জের সফরে এসে মা জননী আয়েশা রা. ঋতুমতী হওয়ার প্রাক্কালের ঘটনা: (ঘটনার মূল কথাটা হল,)
তিনি বললেন,
فَدَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَبْكِي فَقَالَ مَا يُبْكِيكِ قُلْتُ سَمِعْتُكَ تَقُولُ لأَصْحَابِكَ مَا قُلْتَ فَمُنِعْتُ الْعُمْرَةَ قَالَ وَمَا شَأْنُكِ قُلْتُ لاَ أُصَلِّي قَالَ فَلاَ يَضِرْكِ أَنْتِ مِنْ بَنَاتِ آدَمَ كُتِبَ عَلَيْكِ مَا كُتِبَ عَلَيْهِنَّ
আমি কাঁদছিলাম, এমতাবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেন: তোমাকে কিসে কাঁদাচ্ছে?
আমি বললাম: আপনি আপনার সাহাবিগণকে যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি। আমি তো উমরা হতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গেছি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার কী অবস্থা?
আমি বললাম: আমি তো সালাত আদায় করছি না। (অর্থাৎ তিনি এ কথা দ্বারা বুঝালেন যে, তার ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে)।
তিনি বললেন: “এতে তোমার ক্ষতি হবে না। তুমি তো আদম কন্যাদেরই একজন। তাদের অদৃষ্টে যা লেখা ছিল তোমার জন্যও তা লিখিত হয়েছে।” (একটি লম্বা হাদিসের অংশবিশেষ)
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ) ২৬/ উমরাহ (كتاب العمرة), পরিচ্ছেদ: ২৬/৯. ‘উমরাহ আদায়কারী ‘উমরাহ’র তওয়াফ করেই রওয়ানা হলে, তা কি তার জন্য বিদায়ী তওয়াফের বদলে যথেষ্ট হবে? এবং সহিহ মুসলিম ১৫/১৭, হাঃ ১২১১)

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
قولها: لا أصلي كناية عن أَنَّهَا حَاضَت. قَالَ ابن الْمُنِيرِ: كَنَّتْ عَنِ الْحَيْضِ بِالْحُكْمِ الْخَاصِّ بِهِ أَدَبًا مِنْهَا، وَقَدْ ظَهَرَ أَثَرُ ذَلِكَ فِي بَنَاتِهَا الْمُؤْمِنَاتِ فَكُلُّهُنَّ يُكَنِّينَ عَنِ الْحَيْضِ بِحِرْمَانِ الصَّلَاةِ أَوْ غَيْرِ ذَلِكَ. انتهى
মা-জননী আয়েশা রা. বলেছেন, “আমি তো সালাত আদায় করছি না।” এ দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন যে, তিনি ঋতুমতী হয়েছেন।
ইবনুল মুনাইয়ের (১২২৩-১২৮৪ খৃষ্টাব্দ) বলেন, তিনি বিশেষ একটি বিধান (সালাত না পড়া) এর কথা উল্লেখ করে হায়েজ শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটি তার শিষ্টাচারের প্রমাণ। তাঁর এই শিষ্টাচারের প্রভাব তাঁর মুমিন মেয়েদের উপরও পড়েছে। তাই তারা সবাই হায়েজ বিষয়ে ইঙ্গিতে কথা বলে থাকে ‘সালাত থেকে বঞ্চিত হয়েছি’ বা জাতীয় বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে।” (ফাতহুল বারী শরহু সহিহুল বুখারী)

◈◈ সামাজিক ট্যাবু ভাঙ্গার নামে নারীদের লজ্জাশীলতাকে কেড়ে নিতে ভিনদেশী উচ্ছিষ্টভোজীদের নোংরা ষড়যন্ত্র:

বর্তমানে আমাদের দেশে সামাজিক ট্যাবু (taboo) তথা ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক রীতিনীতি এবং চিরাচরিত সাংস্কৃতিক বিবেচনা বোধ ভেঙ্গে মানুষকে এক বীভৎস ও বিপদজনক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়ার উদ্দেশ্যে একশ্রেণীর ভিনদেশী উচ্ছিষ্টভোজী এনজিও, নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষী চক্র খুব কৌশলে কাজ করে যাচ্ছে।

এদের উদ্দেশ্য খুবই নিকৃষ্ট। এরা মুসলিম নারীদের থেকে লজ্জাবোধের মত অতি উচ্চমানের মানবিক গুনটিকে বিদায় করে তাদেরকে নির্লজ্জ বানানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। যার একটি কৌশল হল, মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাবের বিষয়টিকে বাবা, বড় ভাই বা অন্যান্য পুরুষদের সামনে খোলামেলা আলোচনা করতে উৎসাহিত করা। যার ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে একশ্রেণীর লজ্জাহীন নারী তাদের ঋতুস্রাবের রক্তভেজা প্যাডের ছবি ফেসবুকের পাবলিক গ্রুপে পোস্ট করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষ সবার সামনে নির্দ্বিধায় এসব মেয়েলি বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করা শুরু করছে!

এই চক্রটি নাটক, সিনেমা, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী, ম্যাগাজিন ইত্যাদি মিডিয়া ব্যবহার করে প্রেম, যৌনতা, বয় ফ্রেন্ড, গার্ল ফ্রেন্ড, লিভটুগেদার, পরকীয়া, সমকামিতা ইত্যাদি বিষয়গুলোকেও একপ্রকার সামাজিকভাবে নির্দোষ ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যাপকভাবে কাজ করছে এবং ইতোমধ্যে তারা আত্মপরিচয় হীন বহু সংখ্যক নির্বোধ যুবক-যুবতীকে এ নোংরা পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হয়েছে।

শয়তান এবং তাদের অনুসারী নারীবাদী ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ দাসরা আমাদের মুসলিম নারীদের স্বভাবজাত ও সৃষ্টিগত লজ্জাবোধ তুলে দিয়ে অবাধ যৌনাচার, প্রেম, পরকীয়া, সমকামিতা ও লিভটুগেদারের মত নোংরা যে সব ফাঁদ পেতেছে সে ব্যাপারে আমাদের সুশীল ব্যক্তিবর্গ, আলেম-উলামা এবং সর্বস্তরের যুব সমাজ সচেতন না হলে এবং প্রতিবাদ না করলে সময়ের ব্যবধানে আমরা নির্লজ্জ জাতিতে পরিণত হব-যেভাবে সামাজিক ট্যাবু ভাঙ্গার কৌশল প্রয়োগ করে বর্তমান পাশ্চাত্যের নারী-পুরুষের বিরাট একটি অংশকে ওরা সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে ছেড়েছে।

মহান আল্লাহ মুসলিম নারী-পুরুষ সকলকে সব ধরণের ষড়যন্ত্র ও ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল, সৌদি আরব।