মৃত ব্যক্তির পরিত্যাক্ত সম্পদ বণ্টণ ও ওসিয়ত বাস্তবায়ন: অপরিহর্যতা ও পদ্ধতি

প্রশ্ন: স্ত্রীর মোহরানার টাকা, স্বর্ণ ইত্যাদি যদি তার কাছে গচ্ছিত থাকা অবস্থায় তার ইন্তেকাল হয় তবে সেগুলো কি স্ত্রীর নামে দান করে দিতে হবে নাকি তার ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করতে হবে?

উত্তর:

স্ত্রীর মৃত্যুর পরে তার পরিত্যক্ত সকল সম্পদ-যেমন: স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা, জায়গা-জমি ইত্যাদি স্থাবর-অস্থাবর যা কিছু আছে সব কুরআনের বিধান অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া জরুরি।
হাদিসে এসেছে:
عن أَبي أُمَامَةَ رضي الله عنه قال : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ-الحديث صححه الألباني في ” صحيح أبي داود”
আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক প্রাপকের প্রাপ্য অংশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।” (শাইখ আলবানী সহিহ আবু দাউদে উক্ত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
সুতরাং ওয়ারশিদেরকে তাদের প্রাপ্য যথাযথভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া অর্থ-সম্পদ দান করা বৈধ নয়।
আল্লাহু আলাম।

◉ প্রশ্ন: স্ত্রী যদি জীবিত থাকা অবস্থায় নিজের মোহরানার টাকা, স্বর্ণ ইত্যাদি সদকায়ে জারিয়া হিসেবে দান করার জন্য ওসিয়ত করে যায় তবে কি তা জায়েজ হবে?

উত্তর:

এ ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক তার পরিত্যক্ত সম্পদ (মোহরানা বা ব্যক্তিগত টাকা-স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি) এর সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ সদকা করা জায়েজ; এর বেশি নয়। ওসিয়ত অনুযায়ী তার সব টাকা বা স্বর্ণালঙ্কার দান করা করা জায়েজ হবে না। কেননা এতে জীবিত ওয়ারিশগণ তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

➤ সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ সদকা করা জায়েজ হওয়ার পক্ষে নিম্নাক্ত হাদিসটি প্রযোজ্য:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবী সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রা.কে এক তৃতীয়াংশের বেশি ওসিয়ত করার অনুমতি দেন নি। বরং এর কম পরিমাণকে উৎসাহিত করেছেন। যেমন:

সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজ্জের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। পথিমধ্যে আমি প্রচণ্ড রোগে আক্রান্ত হলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সেবা-শুশ্রূষা করতে এলে আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমার অনেক সম্পত্তি। কিন্তু আমার ওয়ারিশ হওয়ার মত কেউ নাই একজন মাত্র মেয়ে ছাড়া। আমি আমার সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ ওসিয়ত করব?
তিনি বললেন: না।
আমি বললাম: অর্ধেক?
তিনি বললেন: না।
আমি বললাম: তবে তিন ভাগের একভাগ?
তিনি বললেন: “তিন ভাগের একভাগ! তিন ভাগের একভাগই তো বেশি। সাদ, তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে বেড়াবে এর চেয়ে তাদেরকে সম্পদশালী করে রেখে যাওয়াই উত্তম।“ (বুখারী ও মুসলিম)

➤ এক তৃতীয়াংশের চেয়ে কম ওসিয়ত করা উত্তম। কেননা, ইবনে আব্বাস রা. বলেন:

لَوْ غَضَّ النَّاسُ إِلَى الرُّبْعِ ، لأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – قَالَ « الثُّلُثُ ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ أَوْ كَبِيرٌ »

“মানুষ যদি (সম্পত্তি ওসিয়ত করার ক্ষেত্রে) এক তৃতীয়াংশ থেকে এক চতুর্থাংশে নেমে আসত তবে উত্তম হত। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন ভাগের একভাগ! তিন ভাগের একভাগই তো বেশি। (বুখারী ও মুসলিম)

মোটকথা, কোন ব্যক্তি যদি এক তৃতীয়াংশের বেশি ওসীয়ত করে মৃত্যু বরণ করে তবে তার ওয়ারিশগণের জন্য সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ ওসিয়ত করা বৈধ; এর বেশি নয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬●◈●▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব