মানুষের কষ্টদায়ক আচরণে ধৈর্য ধারণের ফযিলত এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও রাগ সংবরণের উপায়

প্রশ্ন : আমি যদি কারো ব্যবহারে কস্ট পাই বা কারো উপর বিরক্ত হই কিন্ত মুখে কিছু না বলি বা অন্তরে ও প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছা না রাখি শুধু মাত্র মনের মধ্যে কস্ট টা অনিচ্ছা সত্তেও থেকে যায় এটা কি কারো জন্য মনে বিদ্বেষ রাখা হবে? আসলে মনে বিদ্বেষ রাখা বলতে কি বুঝায়…এবং মনকে বিদ্বেষ মুক্ত রাখার জন্য আমাদের কি করা উচিৎ একটু দয়া করে জানাবেন।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
উত্তর : আপনি যদি কারও আচরণে কষ্ট পান বা বিরক্ত হন আর তার প্রতিশোধ গ্রহণ না করে ধৈর্যের পরিচয় দেন এবং তার সাথে চলাফেরা অব্যহত রাখেন (যদিও মনে কষ্ট বিদ্যমান থাকে) তবে এতে গুনাহ হবে না এবং এটিকে ‘বিদ্বেষ’ও বলা যাবে না বরং এটি উন্নত চরিত্রের বর্হি:প্রকাশ।
প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন:
(الْمُؤْمِنُ الَّذِي يُخَالِطُ النَّاسَ، وَيَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ، خَيْرٌ مِنَ الَّذِي لا يُخَالِطُ النَّاسَ، وَلا يَصْبِرُ عَلَى أَذَاهُمْ))

❍ “যে ঈমানদার ব্যক্তি মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তারা কষ্ট দিলে সবর করে ঐ ব্যক্তি থেকে উত্তম যে মানুষের সাথে মেলামেশা করে না এবং তাদের কষ্টদায়ক আচরণে ধৈর্য ধারণ করে না।”* (ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী-সনদ হাসান)

❍ ❖❍ বিদ্বেষ অর্থ: ঈর্ষা, হিংসা, শত্রুতা-যেটা ভালোবাসার বিপরীত
কারও প্রতি রাগ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেই রাগকে দমন করাই বিরত্বের পরিচায়ক।
পক্ষান্তরে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ছাড়া কারও প্রতি হিংসা রাখা বা শত্রুতা ঠিক নয়। যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসে আর আল্লাহর জন্যই কারো প্রতি শত্রুতা পোষণ করে হাদীসে তার বিশেষ মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي
‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন দিন, যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।’’
(মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস-সিলাহ, হাদিস নং৪৬৫৫)
★ রাসূলুল্লাহ (সাﷺ) বলেন,
إِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ الْحُبُّ فِي اللَّهِ وَالْبُغْضُ فِي اللَّهِ

❍ ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা।’’
(আহমদ, মুসনাদুল আনসার, হাদিস নং২০৩৪১)

 মনকে হিংসা ও বিদ্বেষ মুক্ত রাখার কতিপয় উপায়:
১) আল্লাহর নিকট দুআ করা
২) এ কথা মনে রাখা যে, যে ব্যক্তি হিংসা বা বিদ্বেষ করবে সে নিজেই নিজের ক্ষতি করবে।
৩) যার প্রতি হিংসা সৃষ্টি হবে, তার বরকতের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করা।
৪) এ কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখা যে, হিংসা দ্বারা কারও ক্ষতি করা সম্ভব নয়। কারণ, ভালো-মন্দ সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। হিংসা দ্বারা কেউ কারও ক্ষতি করতে পারবে না।
৫) কারও ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা জাগ্রত হলে এ চিন্তা করা যে, কারো ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকাও একটি সদকার সওয়াব। (বুখারী ও মুসলিম)

 ক্রোধ/রাগ সংবরণের উপায়
আবু যার (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীছে ক্রোধ সংবরণের কৌশল বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ক্রদ্ধ হবে তখন দাঁড়িয়ে থাকলে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি তার রাগ দূর না হয় তাহ’লে সে যেন শুয়ে পড়ে’। (আহমাদ, তিরমিযী, আবূদাঊদ হা/৪৭৮২, মিশকাত, হা/৫১১৪)
অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, وَإِذَا غَضِبْتَ فَاسْكُتْ. ‘যখন তুমি ক্রদ্ধ হবে তখন চুপ থাকবে’। (আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৩২০)
সুলায়মান ইবনু ছুরাদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ছাঃ)-এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন দু’জন লোক গালাগালি করছিল। তাদের একজনের চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার রগগুলো ফুলে গিয়েছিল।
তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আমি এমন একটি দো‘আ জানি, যদি এই লোকটি তা পড়ে তবে তার রাগ দূর হয়ে যাবে। সে যদি পড়ে ‘আ‘উযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রজীম’- (‘আমি বিতাড়িত শয়তানের কাছ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি’) তবে তার রাগ চলে যাবে। তখন লোকেরা তাকে বলল, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তুমি আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় চাও। সে (রাগে) বলল, আমি কি পাগল হয়েছি’ । (বুখারী হা/৩২৮২ ‘সৃষ্টি সূচনা’ অধ্যায়; মুসলিম হা/২৬১০)
ক্রোধ সংবরণ করার ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বাস্তবায়ন করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রাগ চেপে রাখে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টজীবের সামনে তাকে আহবান করে যে কোন হূর নিজের জন্য পসন্দ করার অধিকার দিবেন’। (ইবনু মাজাহ হা/৪১৮৬; তিরমিযী হা/২০২১)
আল্লাহ আমাদের অন্তরকে ক্ষতিকারণ রাগ এবং সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ থেকে হেফাযত করুন। আমীন।

উত্তর দিয়েছেন শাইখঃ

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যায়ল, সৌদি আরব)