মহিলাদের মুখে নিকাব পরিধান করার বিধান কী এবং এ ক্ষেত্রে চোখের কী পরিমাণ খোলা রাখা জায়েজ

প্রশ্ন: অনেক সময় দেখা যায়, ফরসা বা সুন্দর চোখ বিশিষ্ট নারী কালো বোরখা পরিধান করে শুধু দুটি চোখ খোলা রাখে। এমন নারীকে খুব আকর্ষণীয় লাগে। এতে তার সৌন্দর্য যেন আরও বেশি প্রকাশ পায়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিতে নারীদের নিকাব পরিধান করার বিধান কী এবং রাস্তা চলাচলের জন্য চোখের কতটুকু খোলা রাখা জায়েজ?
উত্তর:
নিম্নে দুটি পয়েন্টের উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হল:

◯ ক. ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলাদের মুখে নিকাব পরিধান করার বিধান কী?

ইসলামের দৃষ্টি মহিলাদের মুখে নিকাব পরিধান করা জায়েজ। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, হজ ও ওমরার ইহরাম অবস্থায় মহিলারা মুখে নিকাব পরিধান করবে না। যেমন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا تَنْتَقِبْ الْمَرْأَةُ الْمُحْرِمَةُ ، وَلَا تَلْبَسْ الْقُفَّازَيْنِ
“ইহরাম কারীনী মুখে নিকাব এবং হাতে হাত মোজা পরিধান করবে না।” [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: ২২/ হজ, পরিচ্ছেদ: ১১৫৫. মুহরিম পুরুষ ও মহিলার জন্য নিষিদ্ধ সুগন্ধি সমূহ। আয়েশা রা. বলেন, মুহরিম নারী ওয়ারস কিংবা জাফরানে রঞ্জিত কাপড় পরিধান করবে না]

উল্লেখ্য যে, এ অবস্থায় তারা নেকাব ও হাত মোজা পরিধান না করলেও মাথার ওড়না উপর থেকে ফেলে মুখমণ্ডল এবং হাতের লম্বা আস্তিন দ্বারা হাতের কব্জি দ্বয় পরপুরুষ থেকে ঢেকে রাখবে।

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল, ইহরাম ছাড়া অন্য অবস্থায় নিকাব পরিধান করা জায়েজ।

◯ খ. নিকাব কাকে বলে এবং চোখের কী পরিমাণ খোলা রাখা জায়েজ?

● বিশিষ্ট ভাষাবিদ, ফকিহ, মুহাদ্দিস ও ইলমুর রিজাল শাস্ত্রবীদ আবু উবায়েদ আল কাসেম বিন সাল্লাম (মৃত্যু: ২২৪ হি.) আরবের নিকাবের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন,
هو الذي يبدو منه محجر العين
“(আরবি মহিলাদের) নিকাব হল, এমন জিনিস যা পরিধান করলে চোখের পাতা দ্বয় প্রকাশিত হয়।”

● ইমাম রামলি আশ শাফেয়ী বলেন,
حرم النظر إلى المنتقبة التي لا يبين منها غير عينيها ومحاجرها
“এমন নিকাব ধারী মহিলার দিকে তাকানো জায়েজ নাই যার কেবল চোখ ও চোখের পাতা দ্বয় ছাড়া আর কিছু প্রকাশিত নয়।” [নিহায়াতুল মুহতাজ ৬/১৮৮]

আর নিকাব পরিধান করা হলে, রাস্তা চলাচলের স্বার্থে দু চোখ (ভ্রূ’র নিম্নাংশ ও গালের উপরিভাগ) খোলা রাখা জায়েজ আছে। তবে শর্ত হল, ইচ্ছাকৃত ভাবে যেন চোখের ভ্রূ দ্বয় কিংবা চোখের নিচে গালের কোনও অংশ অতিরিক্ত প্রকাশ না করা হয়।

মোটকথা, নিকাব পরিধানকারী নারীর জন্য পরপুরুষদের সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে চোখের ভ্রু বা গালের কিয়দংশ প্রকাশ করা জায়েজ নয়। আর নিকাব পরিধান করার ক্ষেত্রে চোখের পাপড়ি দ্বয় আকর্ষণীয়ভাবে সাজ-সজ্জা করা থেকেও বিরত থাকা অপরিহার্য। কিন্তু নিকাবধারী নারী যদি চোখের পাপড়ি ও ভ্রূকে আকর্ষণীয়ভাবে সাজসজ্জা করে বাইরে বের হয় তাহলে তা তাকে মানুষের নিকট আরও আকর্ষণীয় করে ফুটিয়ে তোলে, বিশেষ করে সুন্দরী নারীদেরকে- যা ফিতনা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। এটি আল্লাহ তাআলা কর্তৃক পরপুরুষদের সামনে নারীদের সৌন্দর্য প্রকাশ করার নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের শামিল। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ
“…তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নি পুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে…।” [সূরা নূর: ৩১ নং আয়াত]
আল্লাহু আলাম।
[অধিকাংশ তথ্য নেওয়া হয়েছে islamqa থেকে]

▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।