মহিলাদের কপালে টিপ পরার বিধান

প্রশ্ন: মহিলাদের কপালে টিপ ব্যবহার কি হারাম? এ ব্যাপারে ইব্রাহীম আ. কে আগুনে নিক্ষেপের সময় কতিপয় উলঙ্গ বেশ্যা মহিলাকে টিপ পরানো হয়েছিলো- মর্মে যে ঘটনা বলা হয় তা কি সঠিক?

উত্তর:

বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউব ওয়েব সাইটে কতিপয় তাফসীরের রবাত দিয়ে মহিলাদের টিপ পরার ইতিহাস বলা হয়েছে এভাবে:

“মুসলিম জাহানের পিতা হযরত ইবরাহীম আ.কে যখন আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য নমরুদ ৮ মাইল পরিমাণ জায়গা আগুন জ্বালাল তখন একটা নতুন সমস্যা দেখা দিল। আগুনের উত্তাপ এতই বেশি ছিল যে, তার কাছে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। তাই একটা চরক বানানো হল যার মাধ্যমে ইবরাহীম আ.কে দূর থেকে ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা যায়। কিন্তু রহমতের ফেরেশতাগণ চরকের একপাশে ভর করে থাকায় চরক ঘুরানো যাচ্ছিল না। তখন শয়তান এসে নমরুদকে কুবুদ্ধি দিয়েছিল যে, সমাজে যারা অনৈতিক কার্যকলাপ করে (বেশ্যা) এমন কয়েকজন মেয়ে এনে চরকের সামনে বসিয়ে দিতে। কারণ এ অবস্থায় রহমতের ফেরেশতাগণ থাকতে পারবেন না। তাই করা হল। ফেরেশতাগণ চলে গেলেন, আর ঠিক তখনি তারা ইবরাহীম আ. কে আগুনে নিক্ষেপ করতে সক্ষম হল।
কিন্তু আগুন আল্লাহর হুকুমে ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে জ্বালানোর বদলে ফুলের বাগান হয়ে গেলো।
পরবর্তীতে ঐ বেশ্যা মহিলাগুলোকে মেয়েগুলোকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করা হল যাদের কারণে রহমতের ফেরেশতাগণ চরক ছেড়ে দূরে সরে গিয়েছিলেন এবং তাদের মাথায় তিলক পরানো হল। যেটা এখন আমাদের কাছে টিপ নামে পরিচিত যা মেয়েরা নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে ব্যবহার করে।“

ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া উক্ত ঘটনাটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে তাফসীরের কিতাবগুলোতে এ সম্পর্কে ন্যূনতম কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। বেশ কিছু বিজ্ঞ আলেমকে জিজ্ঞাসা করেও কাজ হয় নি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ ঘটনাটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হতে পারে।

(যদিও কেউ যদি নির্ভরযোগ্য কোনও তাফসীরের কিতাব বা ইতিহাসের বইয়ে এই ঘটনা নিজে পড়ে থাকেন তাহলে আমাকে জানিয়ে বাধিত করবেন। দয়া করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা রেফারেন্স কপি-পেস্ট করে দিবেন না।)

🔴 যাহোক, হিন্দুদের অনুকরণে মাথার সিঁথির মাঝখানে বা কপালে সিঁদুর পরা হারাম। এ মর্মে আলেমদের মাঝে কোনও দ্বিমত নাই। কারণ এটি হিন্দুদের ধর্মীয় রীতি। ধর্মীয় রীতি অনুসারে তাদের কেবল বিবাহিত নারীরাই মাথায় সিঁথির মাঝখানে লম্বা করে সিঁদুর লাগায়। বিয়ের পূর্বেও লাগায় না; বিয়ের পর স্বামী মারা যাওয়ার পরও লাগায় না। আর এ কথা স্বত:সিদ্ধ যে, ইসলামে কাফেরদের ধর্মীয় ও সংস্কৃতি বিষয়ে সাদৃশ্য অবলম্বন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যেমন:
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।“ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪০৩১, সহীহুল জামে-আলবানী হা/২৮৩১)

🔴 তবে সাজ-সজ্জার অংশ হিসেবে মহিলাদের কপালে লাল বা অন্যান্য রঙের গোল টিপ পরা জায়েয কি না সে ব্যাপারে আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়।

🔹 একদল আলেমের মতে কপালে টিপ পরা মূলত: ভারত বর্ষের মহিলাদের সাজ-সজ্জার একটি উপকরণ মাত্র। এটা ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যার কারণে প্রাচীন কাল থেকেই অত্র অঞ্চলে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে মহিলাদের কপালে টিপ পরার প্রথা প্রচলিত রয়েছে।

দুনিয়াবি কোনও বিষয়কে স্পষ্ট দলীল ছাড়া হারাম বলার সুযোগ নাই। তবে শর্ত হল, সেজেগুজে পরপুরুষের সামনে ঘুরে বেড়ানো নাজায়েজ। কারণ ইসলামে স্বামী, নিজস্ব মাহরাম পুরুষ এবং মহিলা অঙ্গন ছাড়া অন্য কারো সামনে মহিলাদের সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করা বৈধ নয়।

🔹 অন্য একদল আলেমের মতে, মুসলিম মহিলাদের জন্য টিপ পরা বৈধ নয়। তাদের মতে, টিপ পরা মূলত: সিঁদুরেরই একটি অংশ যা-হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং টিপ পরিধান করলে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি চর্চা করা হয়-যা ইসলামে হারাম।

 উপসংহারে আমরা বলব, যেহেতু বিষয়টি দ্বিমত পূর্ণ সেহেতু দ্বিমত থেকে বাঁচার স্বার্থে টিপ পরিধান না করাই উত্তম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব