বিদআতি মাদরাসায় বাচ্চাদেরকে ‘কুরআন শিক্ষা’ বা ‘জেনারেল সাবজেক্ট’ পড়ানোর জন্য শিক্ষকতা বা অন্য কোনো চাকুরী করার বিধান

প্রশ্ন: ক. কোনো বিদআতি মাদরাসায় ছোট বাচ্চাদের কেবল কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য বা জেনারেল সাবজেক্ট (যেমন: ম্যাথ, ইংলিশ, সাইন্স ইত্যাদি) পড়ানোর জন্য শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করা জায়েজ হবে কি?
আমি শুনেছি যে, বিদআতিদেরকে কোনো ধরণের সাহায্য ঠিক নয়। কিন্তু কেউ যদি উক্ত মাদরাসায় বিদআতি কোন কিছু শিক্ষা না দিয়ে বা বিদআতের সাথে সম্পৃক্ত না হয়ে শিশুদেরকে কেবল কুরআন শিক্ষা দেয় বা শিক্ষার্থীদেরকে জেনারেল বিষয়গুলো পড়ায় তাহলে তা কি জায়েজ হবে?

খ. জীবন-জীবিকার তাগিদে একান্ত নিরুপায় অবস্থায় কি বিদআতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা জায়েজ হবে?

উত্তর:

◉◉ ক. বিদআতের ভয়াবহতা ও বিদআতি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার বিধান:

এ কথায় কোন সন্দেহ নাই যে, ইসলামের পবিত্র গায়ে বিদআত হল মানব দেহে ক্যান্সারের চেয়েও ভয়ানক। কেননা বিদআত খুব সঙ্গোপনে ইসলাম ধ্বংসের কাজ করে এবং ইসলামের আসল চেহারা বিকৃত করে দেয়। চুরি, ডাকাতি, জিনা, মদ্যপান, সুদ, ঘুস ইত্যাদি বড় বড় পাপের চেয়েও বিদআত ভয়ানক।
এই জন্য শয়তানের নিকট একজন সাধারণ গুনাহগার ব্যক্তির চেয়ে বিদআতি অধিক প্রিয়। যেমনটি বলেছেন ইমাম সুফিয়ান সাওরী রাহ.
إن البدعة أحب إلى إبليس من المعصية لأن البدعة لا يُتاب منها والمعصية يُتاب منها
“ইবলিসের নিকট পাপাচার থেকে বিদআত অধিক প্রিয়। কেননা, বিদআত থেকে তওবা করা হয় না কিন্তু পাপাচার থেকে তওবা করা হয়।” [আত তুহফাতুল ইরাকিয়া ফিল আমালিল কালবিয়া, পৃষ্ঠা নং ১২]

সত্যিই যারা পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্ম করে তারা নিজেরা সাধারণত: পাপ ও অন্যায় জেনেই করে। যার কারণে হয়ত তারা জীবনের এক পর্যায়ে তওবা করে শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু যারা বিদআত করে তারা তা দ্বীনের অংশ মনে করে করে। ফলে তারা অত্যন্ত খুশি মনে দীনী জজবা সহকারে করে। এরা সাধারণত: বিদআত পরিত্যাগ করতে চায় না। (আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া)।
[আল্লাহ আমাদেরকে বিদআত থেকে হেফাজত করুন। আমীন]

মোটকথা, দ্বীনের মধ্যে বিদআত মারাত্মক অন্যায় ও কবিরা গুনাহ। কুরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। তাই কোন ইমানদারের জন্য বিদআতে অংশ গ্রহণ করা, তাতে সমর্থন দেয়া বা কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ

“আর তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদাহ: ৫)

অত:এব ইসলামের দাবী অনুযায়ী, বিদআতিদেরকে তাদের বিদআতি কার্যক্রম পরিচালনায় কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করার সুযোগ নাই।

যাহোক, এ অবস্থায় যে সকল তথাকথিত মাদরাসা বা দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদেরকে বিদআত শিক্ষা দেয় বা বিদআতের প্রচার-প্রসারে লিপ্ত তাদেরকে কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা বৈধ নয়। সেখানে শিক্ষকতা বা অন্য কোন দায়িত্ব পালন কোনটাই করা যাবে না।
আরেকটি বিষয় হল, কেউ যখন বিদআতি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করবে তখন ইচ্ছায় হোক-অনিচ্ছায় হোক তাকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা বিদআতি আয়োজনে অংশ গ্রহণ করতে হবে।

মোটকথা, এ ধরণের বিদআতি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা বৈধ নয়-চাই ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষকতা করা হোক, জেনারেল বিষয়ে শিক্ষকতা করা হোক বা মাদরাসার অন্য কোন দায়িত্ব পালন হোক। কেননা এতে প্রকারান্তরে উক্ত মাদরাসাকে বিদআত চর্চায় সহায়তা করা হয়।

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

◉◉ খ. একান্ত নিরুপায় অবস্থায় কি বিদআতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা বৈধ?

উত্তর:

একান্ত নিরুপায় অবস্থায় (জীবন ধারণের বিকল্প পন্থা না থাকলে) এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা বৈধ যদি সরাসরি বিদআতি বিষয় শিক্ষা প্রদান বা বিদআত চর্চায় অংশ গ্রহণ না করে। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلَّا مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ
“আর তিনি তোমাদের জন্য হারাম কৃত বিষয়গুলোও সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। তবে যা তোমরা একান্ত বাধ্য হয়ে গ্রহণ করো তার কথা ভিন্ন।” (সূরা আনআম: ১১৯)

কিন্তু এ অবস্থায় বিকল্প হালাল চাকুরী অনুসন্ধান করার পাশাপাশি আল্লাহর নিকট হালাল কর্মসংস্থানের জন্য দুআ করা কর্তব্য। অন্য কোথাও হালাল কর্মসংস্থান হয়ে গেলে অনতিবিলম্বে এই চাকুরী পরিত্যাগ করবে। কেউ যদি আল্লাহর ভয়ে হারাম থেকে বের হতে চায় তাআলা তাকে বিকল্প পথ বের করে দেন এবং হালাল পথে চলা তার জন্য সহজ করে দেন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَن يَتَّقِ اللَّـهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا
“যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে (উত্তরণের) পথ করে দেবেন।” (সূরা তালাক: ২) তিনি আরও বলেন:
وَمَن يَتَّقِ اللَّـهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
“যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।” (সূরা তালাক: ৪)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিদআতের মত ভয়াবহ গুনাহ থেকে রক্ষা করুন এবং বিদআতিদেরকে সহিহ সুন্নাহর পথ দেখান। আমীন।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব