বাড়িতে সুন্নত ও নফল সালাত এবং মসজিদে দু রাকআত তাহিয়াতুল মসজিদ: যে দুটি সুন্নত অধিকাংশ মুসলিমের নিকট চরম উপেক্ষিত

প্রশ্ন:
ক. হাদিসের আলোকে বাড়িতে সুন্নত ও নফল সালাত পড়ার গুরুত্ব কতটুকু?
খ. ফজরের সুন্নত সালাত বাড়িতে পড়ার পর মসজিদে গিয়ে সময় থাকলে কি তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ এর দু রাকআত আদায় করতে হবে?
গ. মসজিদে প্রবেশ করার পর যদি জামাআত দাঁড়ানোর সামান্য সময় বাকি থাকে (যেটুকু সময়ে সাধারণত: দু রাকআত সালাত পড়া সম্ভব নয়) তাহলে কী করা উচিৎ? তাহিয়াতুল মসজিদের সালাত শুরু করা না কি দাঁড়িয়ে থাকা?

উত্তর:

নিম্নে উপরোক্ত প্রশ্ন সমূহের উত্তর প্রদান করা হল:

◐◐ (ক) প্রশ্ন: বাড়িতে সুন্নত ও নফল সালাত পড়ার গুরুত্ব কতটুকু?

উত্তর: বহু সংখ্যক হাদিস দ্বারা সু প্রমাণিত যে, পুরুষদের জন্য ফরজ ছাড়া সকল প্রকার সুন্নত, নফল ইত্যাদি বাড়িতে পড়া অধিক উত্তম।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে বাড়িতে সুন্নত ও নফল সালাত পড়ার আমলটি নেই বললেই চলে। যারা নিয়মিত সালাত আদায় করে তারাও অধিকাংশই মসজিদে গিয়ে সুন্নত সালাতগুলো পড়ে থাকে অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এগুলো নিয়মিত তাঁর ঘরেই আদায় করতেন।

নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:

❖ ১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

فَعَلَيْكُمْ بِالصَّلاَةِ فِىْ بُيُوْتِكُمْ فَإِنَّ خَيْرَ صَلاَةِ الْمَرْءِ فِىْ بَيْتِهِ إِلاَّ الصَّلاَةَ الْمَكْتُوْبَةَ

“বাড়িতে সালাত আদায় করাকে তোমরা নিয়ম বানিয়ে নাও। কেননা পুরুষের জন্য ফরয সালাত ব্যতীত ঘরে সালাত আদায় করা উত্তম।” [বুখারী হা/৭৩১; মুসলিম হা/৭৮০]

❖ ২) তিনি আরও বলেন:

إِذَا قَضَى أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ فَلْيَجْعَلْ لِبَيْتِهِ مِنْهَا نَصِيبًا فَإِنَّ اللهَ جَاعِلٌ فِىْ بَيْتِهِ مِنْ صَلاَتِهِ خَيْرًا

“তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করে, তখন সে যেন ঘরের জন্য সালাতের কিয়দাংশ রেখে দেয়। কেননা ঘরে সালাত আদায়ের ফলে আল্লাহ তাতে কল্যাণ দান করেন।” [ইবনে মাজাহ হা/১৩৭৬; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৩৯২।]

❖ ৩) আব্দুল্লাহ ইবনে সা‘দ রা. হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,

سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَيُّمَا أَفْضَلُ الصَّلاَةُ فِى بَيْتِى أَوِ الصَّلاَةُ فِى الْمَسْجِدِ قَالَ أَلاَ تَرَى إِلَى بَيْتِى مَا أَقْرَبَهُ مِنَ الْمَسْجِدِ فَلأَنْ أُصَلِّىَ فِى بَيْتِى أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ أُصَلِّىَ فِى الْمَسْجِدِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَلاَةً مَكْتُوبَةً.
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম:
কোনটি উত্তম, আমার ঘরে সালাত আদায় করা না কি মসজিদে?

তিনি বললেন: তুমি কি দেখ না আমার ঘর মসজিদের কত নিকটে? তা সত্ত্বেও মসজিদে সালাত আদায় করার চেয়ে ঘরে সালাত আদায় করা আমার নিকটে অধিক প্রিয়; ফরয সালাত ব্যতীত’। [ইবনে মাজাহ হা/১৩৭৮; সহীহ আত-তারগীব হা/৪৩৯।]

❖ ৪) তিনি আরও বলেন,
اجْعَلُوْا فِىْ بُيُوْتِكُمْ مِنْ صَلاَتِكُمْ، وَلاَ تَتَّخِذُوْهَا قُبُوْرًا
“তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ে নিও না’। [বুখারী হা/৪৩২, ১১৮৭; আবু দাউদ হা/১০৪৩, ১৪৪৮; তিরমিযী হা/৪১৫; ইবনে মাজাহ হা/১১৪১; মিশকাত হা/৭১৪।]

উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে ফরয সালাত ছাড়া অন্যান্য সাধারণ নফল-সুন্নত ইত্যাদি সালাত বাড়িতে পড়ার গুরুত্ব ও ফযিলত সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমল করার তওফিক দান করুন। আমীন।

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
◐◐ (খ) প্রশ্ন: ফজরের সুন্নত সালাত বাড়িতে পড়ার পর মসজিদে গিয়ে সময় থাকলে কি তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মসজিদ এর দু আকআত আদায় করতে হবে?

উত্তর: কেউ যদি ফজরের সুন্নত বাড়িতে পড়ে তবে নিঃসন্দেহে তা উত্তম। অত:পর মসজিদে গিয়ে জামাআত শুরু হতে যদি কিছুটা বিলম্ব থাকায় সে যদি বসতে চায় তাহলে প্রথমে তাহিয়াতুল মসজিদ/ দুখুলুল মসজিদের দু রাকআত আদায় করবে। কেননা মসজিদে প্রবেশের পর বসার পূর্বে দু রাকআত সালাত আদায় ব্যতিরেকে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। এ মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে একটি হল:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّيَ رَكْعَتَيْنِ
“ যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন দু রাকআত সালাত আদায়ের পূর্বে বসবে না।” (সহীহ বুখারী)
▬▬▬▬▬▬▬▬▬
◐◐ (গ) প্রশ্ন: মসজিদে প্রবেশ করার পর যদি জামাআত দাঁড়ানোর সামান্য সময় বাকি থাকে (যেটুকু সময়ে সাধারণত: দু রাকআত সালাত শেষ করা সম্ভব নয়) তাহলে কী করা উচিৎ? তাহিয়াতুল মসজিদের সালাত শুরু করা না কি দাঁড়িয়ে থাকা?

উত্তর: কেউ যদি এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করে যখন জামাআত শুরু হওয়ার সামান্য সময় বাকি আছে (এক বা দুই মিনিট) তাহলে এ ক্ষেত্রে তাহিয়াতুল মসজিদের সালাত শুরু করবে না বরং দাঁড়িয়ে থাকবে এবং ইকামত হলে ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরিমা সহকারে জামাআত ধরবে।
এ মর্মে ইমাম নওবী রহ. বলেন:
” وَإِنْ دَخَلَ وَالْإِمَامُ فِي آخِرِ الْخُطْبَةِ وَغَلَبَ عَلَى ظَنِّهِ أَنَّهُ إنْ صَلَّى التَّحِيَّةَ فَاتَهُ تَكْبِيرَةُ الْإِحْرَامِ مَعَ الْإِمَامِ لَمْ يُصَلِّ التَّحِيَّةَ ، بَلْ يَقِفُ حَتَّى تُقَامَ الصَّلَاةُ ، وَلَا يَقْعُدُ ، لِئَلَّا يَكُونَ جَالِسًا فِي الْمَسْجِدِ قَبْلَ التَّحِيَّةِ ، وَإِنْ أَمْكَنَهُ الصَّلَاةُ وَإِدْرَاكُ تَكْبِيرَةِ الْإِحْرَامِ صَلَّى التَّحِيَّةَ ، هَكَذَا فَصَّلَهُ الْمُحَقِّقُونَ ” انتهى من “المجموع” (4/ 551)
“আর যদি কেউ মসজিদে প্রবেশ করে এমন সময় যে, (জুমার দিন) ইমাম খুতবার শেষ দিকে রয়েছে এবং মনে এ ধারণা প্রবল হয় যে, যদি তাহিয়াতুল মসজিদ পড়ে তাহলে ইমামের সাথে তাকবিরাতুল ইহরাম (তাকবীরে তাহরিমা) ছুটে যাবে তাহলে তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বে না। বরং একামত হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে; বসবে না-যেন সে তাহিয়াতুল মসজিদ পড়া ব্যতিরেকে মসজিদে উপবেশন কারী না হয়ে যায়।
আর যদি সালাত পড়ে তাকবীরে তাহরিমা ধরা সম্ভব হয় তাহলে তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বে। এভাবেই বিশ্লেষকগণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।” (আল মাজমু ৪/৫৫১)

আল্লাহু আলম।।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব