বিড়াল সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রশ্নের উত্তর

◾সালাতরত অবস্থায় সামনে দিয়ে বিড়াল চলাচল করা:

প্রশ্ন: আমার একটা পালিত বিড়াল আছে। যখন আমি কোন সময় ঘরে একাকী নামাজ আদায় করি তখন বিড়ালটা জায়নামাজের উপর শুয়ে-বসে থাকে এবং সামনে দিয়ে হাঁটা-চলা করে। এতে কি আমার নামাজের কোন ক্ষতি হবে?
উত্তর: সালাতের সময় বিড়াল সামনে দিয়ে চলাফেরা করলে বা তা গায়ের সাথে লাগলেও সালাতের কোন ক্ষতি হবে না। কেননা বিড়াল পবিত্র প্রাণি। তবে যদি নাপাক বস্তুর উপর দিয়ে চলাফেরা করার কারণে তার পায়ে নাপাক বস্তু লেগে থাকে তাহলে ঐ অবস্থায় জায়নামাজে চলাফেরা করলে তাতে নাপাকি লেগে তা নাপাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্কতা কাম্য। তাছাড়া সালাতের সামনে দিয়ে বিড়াল চলাফেরা করলে সালাতে মনোযোগ বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সম্ভব হলে বিড়ালকে ঘর থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে সালাত আদায় করবেন।
আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।

প্রশ্ন: কুরআন পড়ার সময় আমাদের বিড়ালটি কুরআনের উপর দিয়ে যায় এবং কুরাআনের উপর পা দিয়ে লাফ দেয়। এতে কি আমার গুনাহ হবে? এখন আমার করণীয় কী?
উত্তর: যদি আপনার অসতর্ক অবস্থায় বিড়াল কুরআনের উপর দিয়ে পা দিয়ে অতিক্রম করে তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার কোনও গুনাহ হবে না। তবে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন যেন, বিড়াল সে সুযোগ না পায়। কোনভাবেই যেন দয়াময় আল্লাহর বাণী মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সম্মানহানি না হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য। তবে এজন্য কোন কাফফারা আদায় অথবা আলাদা কোন কিছু করার প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন: বিড়ালের মুখ দেওয়া খাবার খাওয়া কি জায়েজ আছে?
উত্তর: বিড়াল পবিত্র প্রাণি। সুতরাং বিড়াল যদি খাদ্য-পানীয়তে মুখ দেয় তাহলে তা নাপাক হবে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ كَبْشَةَ بِنْتِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ- وَكَانَتْ تَحْتَ ابْنِ أَبِي قَتَادَةَ – أَنَّ أَبَا قَتَادَةَ، دَخَلَ فَسَكَبَتْ لَهُ وَضُوءًا، فَجَاءَتْ هِرَّةٌ فَشَرِبَتْ مِنْهُ، فَأَصْغَى لَهَا الإِنَاءَ حَتَّى شَرِبَتْ، قَالَتْ كَبْشَةُ: فَرَآنِي أَنْظُرُ إِلَيْهِ، فَقَالَ: أَتَعْجَبِينَ يَا ابْنَةَ أَخِي؟ فَقُلْتُ: نَعَمْ ‏.‏ فَقَالَ: إِنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ إِنَّهَا مِنَ الطَّوَّافِينَ عَلَيْكُمْ وَالطَّوَّافَاتِ ‏”‏

কাবশা বিনতে কাব ইবনে মালিক সূত্রে বর্ণিত। তিনি ছিলেন আবু কাতাদা রা. এর পুত্রবধূ। তিনি বলেন, একদা আবু কাতাদা (বাহির থেকে) আসলে আমি তার জন্য অজুর পানি দিলাম। এমন সময় একটি বিড়াল এসে তা থেকে পানি পান করতে লাগল। আবু কাতাদা বিড়ালের জন্য পাত্রটি কাত করে ধরলেন। ফলে বিড়ালটি তৃপ্তি সহকারে পান করল। কাবশা বলেন, আবু কাতাদা দেখলেন, আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি বললেন, হে ভাতিজী, তুমি কি আশ্চর্যবোধ করছ? আমি বললাম, হ্যাঁ।
তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বিড়াল নাপাক নয়। এরা তোমাদের আশেপাশে বিচরণকারী প্রাণি।”
[তিরমিযী, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: বিড়ালের উচ্ছিষ্ট সম্পর্কে, হা/৯২, সনদ হাসান]
অতএব বিড়ালের মুখ দেওয়া খাদ্যদ্রব্য খেতে আপত্তি নেই। অবশ্য তার মুখে ময়লা বা নাপাক কোন কিছু লেগে থাকলে ভিন্ন কথা। সেক্ষেত্রে ময়লা বা নাপাকি দূর করে বাকি খাবার খাওয়া জায়েজ আছে যদি রুচি হয়। অন্যথায় ফেলে দেবে। তবে মুখে নাপাক বস্তু লেগে থাকা অবস্থায় তরল পানীয় দ্রব্য (যেমন: দুধ) আছে এমন পাত্রে মুখ দিলে তা পুরোটাই ফেলে দিতে হবে। কারণ তাতে মুখ দেওয়ার সাথে সাথে নাপাকি তরল পানীয়ের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

◾বিড়াল নাপাক প্রাণি নয় তবে তার পেশাব-পায়খানা নাপাক:

প্রশ্ন: আমরা জানি, ‌বিড়াল নাপাক প্রাণি নয়। তাহলে বিড়াল যদি পোশাকে প্রস্রাব করে দেয় তাহলে সেই পোশাকে সালাত আদায় করা যাবে কী?
উত্তর: বিড়াল বাহ্যিকভাবে পবিত্র। অর্থাৎ যদি শরীর বা পোশাকের সাথে বিড়ালের স্পর্শ লাগে তাহলে তা নাপাক হবে না। অনুরূপভাবে যদি সে খাবার বা পান পাত্রে মুখ দেয় তাহলেও তা নাপাক হবে না। কারণ এ ব্যাপারে একাধিক হাদিস রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওজুর পাত্র থেকে বিড়ালকে পানি পান করিয়ে অবশিষ্ট পানি দ্বারা ওজু করেছেন এবং বলেছেন,
إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ إِنَّهَا مِنَ الطَّوَّافِينَ عَلَيْكُمْ وَالطَّوَّافَاتِ
“বিড়াল নাপাক প্রাণি নয়। এটা তোমাদের আশেপাশে বিচরণকারী।”
[তিরমিযী, অধ্যায়: পবিত্রতা, অনুচ্ছেদ: বিড়ালের উচ্ছিষ্ট সম্পর্কে, হা/৯২, সনদ হাসান]
কিন্তু তার গোশত খাওয়া হারাম।‌ কারণ তা হিংস্র প্রাণির অন্তর্ভূক্ত।
আর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي، ثَعْلَبَةَ قَالَ نَهَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَنْ أَكْلِ كُلِّ ذِي نَابٍ مِنَ السَّبُعِ
আবু সালাবা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিংস্র পশু খেতে নিষেধ করেছেন।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন),‌ অধ্যায়: ৩৫/ শিকার ও জবেহকৃত জন্তু এবং যে সব পশুর গোশত খাওয়া হালাল, পরিচ্ছেদ: ৩. হিংস্র পশু ও নখরওয়ালা পাখি খাওয়া হারাম]
আর ইসলামের মূলনীতি হল, যে প্রাণির গোস্ত খাওয়া হারাম তার পেশাব-পায়খানাও নাপাক। (অধিক বিশুদ্ধ মতে)। সুতরাং বিড়ালের পেশাব-পায়খানা কাপড় বা শরীরে লাগলে তা নাপাক হয়ে যাবে। যেমন: মানুষ বাহ্যত পবিত্র কিন্তু তার পেশাব-পায়খানা অপবিত্র।
তাই যে পোশাকে বিড়ালের পেশাব লেগেছে তা ধৌত করা জরুরি। অন্যথায় উক্ত পোশাকে সালাত সহিহ হবে না।
আল্লাহু আলাম।

◾ বিড়ালের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বাঁচতে তা হত্যা করার বিধান:

প্রশ্ন: আমাদের বাড়িতে আমরা কবুতর পালন করি। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে বিড়াল কবুতরের ডিম এবং বাচ্চা সব কিছুই খেয়ে ফেলছে। কিছুতেই বিড়ালকে থামানো যাচ্ছে না। সুযোগ পেলেই ডিম এবং বাচ্চা সবই খেয়ে নিচ্ছে। এমনকি বড় কবুতরকেও তাড়া করছে। এ অবস্থায় আমরা কি বিড়ালকে মারার কোন ব্যবস্থা করতে পারি?
উত্তর: বিড়ালকে না মেরে যদি অন্য কোন পদ্ধতিতে কবুতরের বাচ্চা ও কবুতর রক্ষা করা সম্ভব হয় তাহলে সে চেষ্টা করা উচিত। যদি দূরে কোথাও ফেলে আসা সম্ভব হয় তাও করা যেতে পারে। কিন্তু এতে কাজ না হলে তখন তার ক্ষতির হাত থেকে আত্মরক্ষার স্বার্থে মেরে ফেলা জায়েজ আছে। মোটকথা, যদি কোন পশু বা জীবজন্তু মানুষের ক্ষতি করে তাহলে তার ক্ষতির হাত থেকে আত্মরক্ষার বিকল্প কোন পথ না থাকলে তাকে হত্যা করা জায়েজ।
সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায ক্ষতিকর বিড়াল সম্পর্কে বলেন,
إذا تيسر طرده وإبعاده وتخويفه حتى يبتعد فلا يقتل فإذا اضطر الإنسان إلى قتل القط لإيذائه، وعدم التخلص منه بغير ذلك، فلا بأس لكن بغير النار
“যদি তাকে তাড়িয়ে দেওয়া বা দূরে ফেলে দেওয়া অথবা ভয়-ভীতি দেখিয়ে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে হত্যা করা যাবে না। কিন্তু যদি তার ক্ষয়ক্ষতির জন্য হত্যা করা আবশ্যক হয়ে যায় এবং এছাড়া বাঁচার কোন বিকল্প না থাকে তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু আগুন দিয়ে হত্যা করা যাবে না।” [Binbaz]

◾কাঠবিড়ালির ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বাঁচতে তা হত্যা করা:

প্রশ্ন: কাঠবিড়ালি মারা কি জায়েজ? উল্লেখ্য, কাঠবিড়ালি আমাদের বাড়ির গাছের পেয়ারা, ডাব সহ আরো বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে ফেলছে।
উত্তর: প্রথমত: যদি হত্যা না করে বিকল্প পন্থায় কাঠবিড়ালির ক্ষয়-ক্ষতি থেকে ফল-ফসল রক্ষা করা সম্ভব হলে তাই করা উচিৎ। কিন্তু যদি বিকল্প কোনভাবেই তার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব না হয় তখন হত্যা করা জায়েজ আছে।

◾রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিড়াল প্রসঙ্গে প্রচলিত ভিত্তিহীন কথা:

প্রশ্ন: “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুয়েজ্জা নামে একটা বিড়াল ছিল এমন কিছু কথা কেউ কেউ বলে থাকে। সাথে এ বিষয়ে বেশ বিভিন্ন ঘটনাও বলে। কিন্তু মনে হয় না সেগুলো সত্য। যাই হোক, এই সম্পর্কে আপনার মতামত আশা করছি।
উত্তর: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনও বিড়াল পালতেন বলে হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায় না। যেমন: কাতার ভিত্তিক বিখ্যাত ফতোয়ার ওয়েব সাইটে বলা হয়েছে,
لم يثبت فيما نعلم أن رسول الله صلى الله عليه وسلم اتخذ قطة، فضلاً عن اصطحابها للصلاة
“আমাদের জানামতে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিড়াল প্রতিপালন করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি, সাথে করে সালাতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তো আরও দূরের কথা।” [Islamweb]
তবে বহু হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বিড়াল ভালোবাসতেন এবং বিড়ালকে পবিত্র প্রাণি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। (যেমন উপরে উল্লেখিত হাদিস সমূহ)।

প্রশ্ন: আমাদের নবী‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কি কোন পোষা বিড়াল ছিল যার নাম মুয়েজ্জা?
উত্তর: এটি‌ ভিত্তিহীন কথা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কোন বিড়াল পুষতেন না। এই নামে তার কোন বিড়াল ছিল না। তবে তিনি বিড়াল ভালবাসতেন। এবং তিনি বিড়ালকে পবিত্র প্রাণি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি তার ওজুর পাত্র থেকে পিপাসার্ত বিড়ালকে পানি পান করিয়ে পরে ওই পানি দ্বারাই ওজু করেছেন। (দেখুন উপরে উল্লেখিত হাদিস সমূহ), এক মহিলা খাঁচায় একটি বিড়ালকে বন্দি রেখেছিলো। এবং তাকে খাদ্য-পানীয় থেকে বঞ্চিত করে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলার অপরাধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিণতি জাহান্নাম বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।