নামাজে মহিলারা কীভাবে সেজদা দিবে

প্রশ্ন: নামাজে মহিলারা কীভাবে সেজদা দিবে?
উত্তর:
মহিলারা ঠিক সেভাবে সেজদা দিবে যেভাবে পুরুষরা দেয়। এটাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শেখনো পদ্ধতি। এভাবেই মহিলা সাহাবিগণ আমল করতেন।
সুতরাং এ ক্ষেত্রে সহিহ সুন্নাহর দলিল ব্যতিরেক ভিন্ন কোনও পদ্ধতি আমল যোগ্য নয়- যদিও সে বিষয়ে কোনও বড় ইমাম, আলেম, মুহাদ্দিস, মুজতাহিদ বা অন্য কোনও ব্যক্তি ফতোয়া প্রদান করেন। কারণ আমরা একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করতে নির্দেশিত। সুতরাং আমাদের করণীয়, ইবাদত-বন্দেগীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করা। আল্লাহ বলেন,

لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّـهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

“নিশ্চয় তোমাদের জন্য জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব: ২১)

তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي

“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে সালাত আদায় কর” [বুখারী ও মুসলিম]

এই নির্দেশ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আম ভাবে সবার জন্য প্রযোজ্য যতক্ষণ না ভিন্ন সহিহ হাদিস দ্বারা নারী অথবা পুরুষের জন্য ভিন্ন কোনও বিধান প্রমাণিত হয়।

হ্যাঁ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস ছাড়া অন্য কারও কথা বা ফতোয়া কেবল তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তা হাদিসের বিপরীত বা তার সাথে সাংঘর্ষিক না হবে।

সুতরাং আমাদের সমাজে প্রচলিত পদ্ধতিতে অনেক মহিলা পেটের সাথে উরু বা দু রান লাগিয়ে এবং দু হাত মাটিতে বিছিয়ে খুব জড়সড় হয়ে সেজদা দেয়। এটি স্পষ্ট হাদিস বিরোধী এবং পরিত্যাজ্য। কারণ:

◈ ক. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু হাত মাটিতে বিছিয়ে দিতেন না বরং তা জমিন থেকে উপরে [বুখারী] এবং পেটের দু পাশ থেকে দুরে রাখতেন। [বুখারী ও মুসলিম]

◈ খ. হাঁটু, পেট, হাত, মাথা এই অঙ্গগুলোর মাঝখানে এমন ফাঁকা থাকতে হয় যেন এই ফাঁকা দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা চলে যেতে পারে। [সহিহ মুসলিম]

◈ গ. আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

اعْتَدِلُوا في السُّجُودِ ولا يَبْسُطْ أحَدُكُمْ ذِراعَيْهِ انْبِساطَ الكَلْبِ

“তোমরা সেজদার মধ্যে স্থির হও, তোমাদের কেউ তার বাহুদ্বয় কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে রাখবে না”। [বুখারি, হা/৮২২, মুসলিম, হা/৪৯৩]

এ বিধানগুলো নারী-পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে আলাদা পদ্ধতিতে সেজদা দেওয়ার কোনও নিয়ম শিক্ষা দেন নি। অথচ নারী-পুরুষের সালাতে যে সব পার্থক্য আছে তা বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যদিও মাজাহাবের দোহায় দিয়ে নারীদেরকে একদম জড়সড় হয়ে সেজদা দেওয়ার ফতোয়া প্রদান করা হয় কিছু যুক্তি, পরবর্তী যুগের কিছু ফতোয়া এবং সনদগতভাবে দুর্বল হাদিস দ্বারা-যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের বিপরীতে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

❑ মহিলাদের সেজদার সময় পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখার হাদিস সহিহ নয়:

আমাদের সমাজে প্রচলিত জড়সড় হয়ে সেজদার দেওয়ার ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা দলিল প্রদান করা হয়-কিন্তু মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে তা সহিহ নয়। নিম্নে হাদিস এবং সে প্রসঙ্গে মুহাদ্দিসদের অভিমত তুলে ধরা হল:

إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا

“মহিলা যখন নামাজের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে; যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তাআলা তাকে দেখে (ফেরেশতাদের সম্বোধন করে) বলেন, ওহে আমার ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” [সুনানে কুবরা, বায়হাকি, ২/২২৩, হাদিস নং ৩৩২৪]

এ হাদিসটির মান: জইফ (দুর্বল)

– ইমাম বায়হাকি নিজেই এ হাদিস সম্পর্কে বলেন,
ضعيف لا يحتج بمثله
“এটি দুর্বল। এমন দুর্বল হাদিস দ্বারা দলিল দেওয়া যায় না।”
– তিনি আরও বলেন
[فيه] أبو مطيع ضعفه ابن معين وابن عدي، وكذلك عطاء بن عجلان ضعيف
“এ হাদিসের সনদে আবু মুতি আল হাকাম আল বালখি (الحكم بْن عَبد اللَّهِ أَبُو مطيع البلخي) নামক বর্ণনাকারীকে ইয়াহয়া ইবনে মাঈন এবং ইবনে আদী জইফ (দুর্বল) বলেছেন। অনুরূপভাবে আরেকজন বর্ণনাকারী আত্বা বিন আজলানও জইফ।” [বায়হাকি ২/২২৩]

– ইবনুল কায়সারানি বলেন, الحكم البلخي ضعيف “(এর সনদে আবু মুতি) হাকাম আল বালখি নামক বর্ণনাকারী দুর্বল।” [যাখিরাতুল হুফফায: ১/৩০৩]

-ইমাম যাহাবি বলেন, فيه الحكم ضعفه ابن معين وغيره وتركه جماعة وراويه عنه محمد بن القاسم الطايكاني متهم
“এ হাদিসে বর্ণনাকারী হাকামকে ইবনে মাঈন প্রমুখগণ জইফ (দুর্বল) বলেছেন। এবং অন্য একদল মুহাদ্দিস তাকে বর্জন করেছেন। তার থেকে ‘মুহাম্মদ ইবনুল কাসেম আত ত্বয়কানি’ নামক যে বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছে সে متهم বা মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত।” [আল মুহাযযাব ২/৬৬২]

এ ছাড়াও এ বিষয়ে মুনকাতিন (বিচ্ছিন্ন সনদ বর্ণিত) হাদিস এবং পরবর্তী যুগের আলেমদের কিছু ফতোয়া পাওয়া যায় যেগুলো হাদিসের বিপরীতে পেশ করা কোনোভাবেই শোভনীয় নয়।

আল্লাহ আমাদেরকে সুপথ দেখান এবং বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব।