ধর্ষণের বিচার চেয়ে নারীরা মিছিলে-শ্লোগানে ও রাস্তায়: ইসলাম কী বলে?

প্রশ্ন: ধর্ষণের বিচার চেয়ে নারীরা যে রাস্তায় নামছে এটা কি ইসলামে জায়েজ আছে?
উত্তর:
উত্তর দেয়ার পূর্বে বলতে চাই, আমি জানি, যদিও এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা নারীবাদী, সেক্যুলার ও তথাকথিত বিকৃত গণতন্ত্র পূজারীদের ভালো লাগবে না তবুও ইসলাম ও বাস্তবতার আলোকে সত্য কথা তুলে ধরা আবশ্যক মনে করি।
যাহোক, ইসলামের দৃষ্টিতে নারীদের জন্য দীন, চরিত্র ও সম্ভ্রম রক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত ও নিরাপদ পন্থা হল, বাড়িতে অবস্থান করা এবং বাইরে বেপর্দা হয়ে চলাফেরা না করা। যেমনটি মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
“আর তোমরা (নারীরা) তোমাদের ঘরে অবস্থান করবে; মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব: ৩৩)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
“হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও বিশ্বাসীদের রমণীগণকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখমণ্ডলের) উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” (সূরা আহযাব: ৫৯)
উক্ত আয়াতে جَلاَبِيْبُ শব্দটি جِلْبَ এর বহুবচন। তা এমন বড় চাদরকে বলা হয়, যাতে পুরো শরীর ঢেকে যায়।
আর নিজের উপর চাদর টেনে নেওয়ার অর্থ: চেহারার উপর এমন ভাবে ঘোমটা নেওয়া যাতে চেহারার অধিকাংশ ঢেকে যায় এবং চক্ষু নিচু করে চলাতে রাস্তাও দেখা যায়।
এটা পর্দার হিকমত, যৌক্তিকতা ও উপকারিতার বর্ণনা যে, তার দ্বারা একজন ভদ্র ও লজ্জাশীলা মহিলা এবং নির্লজ্জ ও অসতী মহিলার পরিচয় লাভ হয়। পর্দা করা দেখে বোঝা যাবে যে, এটা ভাল ঘরের মহিলা; যাকে টিপ্পনী কাটার ক্ষমতা কারোর হবে না। আর তার বিপরীত বেপর্দা মহিলা লম্পটদের চোখের তৃপ্তিকর খোরাক এবং কামুক যুবকদের যৌন বাসনার কেন্দ্রস্থল। [তাফসিরে আহসানুল বায়ান]
তবে ইসলামে নারীদেরকে জীবনের একান্ত জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয় কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে। যেমন:
◍ ১. বাইরে বের হওয়ার সময় পূর্ণ হিজাব পরিধান করা এবং নিজেকে ফেতনা থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা।
◍ ২) নিজের শরীর, পোশাক ও সাজ-সজ্জার সৌন্দর্য পর পুরুষের সামনে প্রকাশ না করা।
◍ ৩. বাইরে যাওয়ার সময় আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা।
◍ ৪) পরপুরুষের স্পর্শ থেকে দূরে থাকা এবং তাদের সাথে বিনা দরকারে কথা না বলা।
◍ ৫) স্বামী বা মাহরাম পুরুষ সঙ্গী ছাড়া দূরে কোথাও না যাওয়া।
◍ ৬) কোন পরপুরুষের সাথে লোকচক্ষুর আড়ালে না যাওয়া।
◍ ৭) সার্বিক নিরাপত্তা থাকা ইত্যাদি।
কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, বর্তমানে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ইত্যাদির নামে আমাদের দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও যুবক-যুবতিরা একাকার হয়ে, নারী-পুরুষ একসাথে হৈহুল্লোড় ও ঘেঁষাঘেঁষি করে, পর্দা ও লজ্জাশীলতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাস্তায় মিছিল-মিটিং করছে, শ্লোগান দিচ্ছে এবং পুলিশ বাহিনীর সাথে হাতাহাতি, ধ্বস্তাধ্বস্তি ও মারামারিতে লিপ্ত হচ্ছে।
মারামারি ও দৌড়াদৌড়ির সময় তারা পরপুরুষদের সামনে অনাবৃত হচ্ছে এবং মিডিয়ার সামনে তাদের ইজ্জত-সম্মান ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। অনেক সময় সুযোগ সন্ধানী ধর্ষক ও লম্পট পুরুষরা এসব পরিস্থিতিতেও নানা অনৈতিক কাজের সুযোগ নিচ্ছে এবং সুযোগ পেলেই তাদের শ্লীলতাহানী ঘটাতেও ত্রুটি করছে না। অর্থাৎ ধর্ষণের বিচার চাইতে এসে আবারও ধর্ষণের শিকার! এই হল বাস্তব পরিস্থিতি।
সুতরাং এমন ফিতনা বিক্ষুব্ধ ও অনিরাপদ পরিস্থিতিতে এসব মিছিল-মিটিং এ নারীদের অংশ গ্রহণ ইসলামের দৃষ্টিতে কিভাবে গ্রহনযোগ্য হতে পারে? আল্লাহ ক্ষমা করুন।
লজ্জাজনক ব্যাপার হল, এ সকল প্রতিবাদ মিছিল-সমাবেশে একশ্রেণীর নারীর উদ্ভট ও নোংরা পোশাক, নির্লজ্জ আচরণ ও কার্যক্রম দেখে মনে হয় এরা ধর্ষণ বন্ধ নয় বরং ধর্ষণকে উশকে দেয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছে। আরও দেখা যাচ্ছে, এ সব আন্দোলনের নামে তথাকথিত গার্ল ফ্রেন্ড ও বয় ফ্রেন্ডরা অবাধে রাত-দিন যখন যেখানে মনে চাচ্ছে তখন সেখানে ইচ্ছেমত ঘোরাফেরা করছে।
হয়ত আমাদের এ সকল আল্লাহর নাফরমানি মূলক কার্যক্রমই আল্লাহর গজব হিসেবে ধর্ষণ রূপী মহামারী নেমে আসার অন্যতম কারণ।
আমরা মনে করি, ধর্ষণের বহু কারণ আছে। তন্মধ্যে অন্যতম হল, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষ ইসলামের বিধিবিধান ও অনুশাসন থেকে দুরে সরে যাওয়া, আল্লাহর ভয় ও দ্বীনদারিকে অবজ্ঞা করা, বিশেষ করে ইসলাম নারীদের প্রতি যে সকল নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলো অনুসরণ না করা। আল্লাহর বিধানকে লঙ্ঘন করার কারণে নারীরা পদেপদে লাঞ্ছিত হচ্ছে, ইজ্জত হারা হচ্ছে এবং ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এটি আল্লাহর বিধান থেকে দূরে সরে যাওয়ার অন্যতম একটি ফল।
সুতরাং আল্লাহর বিধানকে লঙ্ঘন করে, পর্দাকে জলাঞ্জলি দিয়ে যতই মিটিং, মিছিল, আন্দোলন, বিক্ষোভ করা হোক না কেন কখনোই ধর্ষণ বন্ধ হবে না।
শুধু আইন করেও ধর্ষণ ঠেকানো যাবে না। যদি তাই হত, তাহলে আমেরিকার মত দেশ পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ধর্ষক দেশে পরিণত হতো না বা বড় বড় শক্তিশালী দেশগুলো নারী ধর্ষণে শীর্ষে অবস্থান করতো না।
বরং ধর্ষণ থেকে বাঁচতে করণীয় হল, নারী-পুরুষ নির্বিশেষ মহান আল্লাহর পথে ফিরে আসা, পাপাচার ও আল্লাহর নাফরমানি থেকে আল্লাহর নিকট তওবা করা, জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিবিধান অনুসরণ করা এবং ধর্ষণ, অন্যায়-অকর্ম থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করা। এর পাশাপাশি যার যার অবস্থান থেকে যথাসাধ্য ধর্ষণ বিরোধী ও সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানো, নেটে লিখালিখি করা, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানো এবং আইনগত ভাবে ও শরিয়ত সম্মত উপায়ে প্রতিবাদ জানানোর জন্য অন্যান্য যে সকল পন্থা আছে সেগুলো প্রয়োগ করা। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহ শিক্ষা নিষিদ্ধ, কর্ম ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ, জিনা-ব্যভিচারের পথ রুদ্ধ এবং ধর্ষণ সংক্রান্ত ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের আইন বাস্তবায়ন সহ ধর্ষণের সকল কারণ চিহ্নিত করে সেগুলোর ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবী-দাওয়া তুলে ধরা।
তাহলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই প্রতিশ্রুত নিরাপত্তা দান করবেন, নারীদের ইজ্জত-সম্ভ্রম রক্ষা পাবে এবং সর্বোপরি দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
(পরবর্তীতে মিছিল প্রক্রিয়ার বৈধতার ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ আলেমদের ফতোয়া তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◤◯◥▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।