দুনিয়ার শাস্তি বান্দার পাপমোচন‌ এবং আখিরাতের শাস্তি মওকুফের কারণ

প্রশ্ন: নিজের পাপ কাজের জন্য কি দুনিয়াতেই শাস্তি পেতে হবে? আর দুনিয়াতে শাস্তি পেলে কি আখিরাতে আবারও সে পাপের শাস্তি পেতে হবে?

উত্তর:
আল্লাহ তাআলা কখনো কখনো বান্দাকে দুনিয়াতে তার পাপ কর্মের শাস্তি দিয়ে থাকেন আবার কখনো দুনিয়াতে শাস্তি দেন না কিন্তু আখিরাতের জন্য জমা রাখেন। তিনি সেখানে তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করবেন যদি সে জীবদ্দশায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চায় অথবা মহান আল্লাহ দয়া করে নিজ থেকে তাকে ক্ষমা না করেন।

🔶 কোন ব্যক্তি দুনিয়াতে গুনাহ করার কারণে বা কোন অপরাধের কারণে যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে অথবা দুনিয়াবী আদালতে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক শাস্তি পায় তাহলে তাতে তার উক্ত পাপ মোচন হয়ে যায়। যার ফলে ওই পাপ কর্মের জন্য সে পরকালীন শাস্তি থেকে রক্ষা পায়। আলহামদুলিল্লাহ।

যেমন: হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ العُقُوبَةَ فِي الدُّنْيَا، وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ. صححه الألباني في صحيح الترمذي
“আল্লাহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণ চান তখন দুনিয়াতে তার শাস্তি ত্বরান্বিত করেন, আর যখন কোনো বান্দার অকল্যাণ চান তখন তার পাপগুলো রেখে দিয়ে কিয়ামতের দিন তাঁর প্রাপ্য পূর্ণ করে দেন।”
[জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৯৬-তিনি এটিকে হাসান বলেছেন আর শাইখ আলবানি এটিকে সহিহুত তিরমিযীতে সহিহ বলেছেন]

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় শায়খ বিন বায বলেন,
قد تكون العقوبة بمرض، قد تكون بموت ولد، قد تكون بفقر وتلف مال، قد تكون بغير هذا من المصائب تكفيرا له وحثا له على الصبر والاحتساب
“এই শাস্তি হয় কখনো রোগ ব্যাধি, কখনো সন্তানের মৃত্যু, কখনো দারিদ্রতা, কখনো সম্পদ বিনষ্ট কখনো অন্যান্য বিপদ মুসিবত দ্বারা। এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহ মোচন করেন। সেই সাথে তাকে উৎসাহিত করেন যেন সে সবর ও সওয়াবের প্রত্যাশা করে।”

মোটকথা, কেউ যদি নিজের পাপাচার ও অন্যায় কাজের শাস্তি দুনিয়াতে পেয়ে যায় তাহলে এটা তার জন্য কল্যাণকর। কেননা দুনিয়ার শাস্তি লাভের পর সে গুনাহমুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু যার শাস্তি আখিরাতের জন্য জমা রাখা হয় নি:সন্দেহে তার পরিণতি খারাপ। আল্লাহ ক্ষমা করুন।

🔶 অনুরূপভাবে কেউ যদি দুনিয়াতে কোন অপরাধ করার পর ইসলামি আদালতের মাধ্যমে শাস্তিপ্রাপ্ত হয় তাহলে তা আখিরাতে তার জন্য কাফফারা (গুনাহ মোচনের মাধ্যম) হয়ে যায়। ফলে সেখানে তাকে এই অপরাধের কারণে পুনর্বার শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না।

উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি এসব শর্তে আমার কাছে বায়’আত করবে যে, তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করবে না, জিনা করবে না এবং চুরি করবে না? এরপর তিনি নারীদের শর্ত সম্পর্কিত আয়াত পাঠ করলেন। عنهবর্ণনাকারী সুফইয়ান প্রায়ই বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতটি পাঠ করেছেন।

এরপর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
وَمَنْ أَصَابَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَعُوقِبَ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَهُ، وَمَنْ أَصَابَ مِنْهَا شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ فَسَتَرَهُ اللَّهُ فَهْوَ إِلَى اللَّهِ، إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ‏
“তোমাদের যে ব্যাক্তি এসব শর্ত পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন। আর যে ব্যাক্তি এসবের কোন একটি করে ফেলবে এবং তাকে (দুনিয়াতে) শাস্তিও দেয়া হবে। তবে এ শাস্তি তার জন্য কাফফারা হয়ে যাবে। আর যে ব্যাক্তি এসবের কোন একটি করে ফেলল এবং আল্লাহ তা গোপন রাখলেন, তাহলে এ বিষয়টি আল্লাহর কাছে রইল। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন অথবা তাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।”

[সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায: ৫২/ তাফসীর. পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ্‌র বাণীঃ إذا جاءك المؤمنات يبايعنك “(হে নবী!) মু’মিন নারীগণ যখন তোমার কাছে এ মর্মে বায়’আত করতে আসে” (৬০ঃ ১২)]

উক্ত হাদীসটি ইমাম বুখারী রহ. হুদুদ বা ফৌজদারি দণ্ডবিধির সংক্রান্ত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন এবং তার শিরোনাম (অনুচ্ছেদ) দিয়েছেন এভাবে:
باب الحدود كفارة
অনুচ্ছেদ: হুদুদ বা ইসলামি আইন অনুযায়ী দণ্ড প্রয়োগ গুনাহের কাফফারা স্বরপ।
আমরা মহান আল্লাহর কাছে তার শাস্তি থেকে পানাহ চাই। নিশ্চয়ই তিনি পরম দয়ালু এবং অতীব ক্ষমা পরায়ন।
———————
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,‌ সউদি আরব।