জিকির বা ওজিফা হিসেবে লাইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সাথে মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ পাঠ করা কি বিদআত

জিকির বা ওজিফা হিসেবে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর সাথে ‘মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ’ পাঠ করা কি বিদআত? কোথায় কোথায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামের পর দরুদ পাঠ করা সুন্নত নয়?

প্রশ্ন: ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর সাথে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ সংযুক্ত করে জিকির করার বিধান কী? অনেক বার ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির করার পর শেষে কমপক্ষে একবার ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পাঠ করা কি আবশ্যক? এবং এর পর কি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করতে হবে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: নিঃসন্দেহে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নাই) এবং ‘মুহাম্মদ রসুলুল্লাহ’ (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল বা প্রেরিত দূত) এই দুই মহান সাক্ষ্যবাণী ইসলামে প্রবেশের মূল চাবি। এ দুটি বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান ব্যতিরেকে আখিরাতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নিয়মিত জিকির হিসেবে কেবল ১ম বাক্যটি অর্থাৎ ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করার ব্যাপারে হাদিস এসেছে; ২য় বাক্যটির ব্যাপারে নয়। সুতরাং ২য় বাক্যটিকে নিয়মিত জিকির হিসেবে পাঠ করা শরিয়ত সম্মত নয় বরং তা বিদআত।

❑ নিম্নে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর ফজিলত সংক্রান্ত কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:

◈ ১. জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أَفْضَلُ الذِّكْرِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ

“শ্রেষ্ঠ জিকির হল, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ।” [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ-হাদিসটি সহিহ। উৎস: সহিহুল জামে-১১০৪, সহিহুত তারগিব ১৫২৬]

◈ ২. আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ‏.‏ خَالِصًا مِنْ قِبَلِ نَفْسِهِ

“কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত (সুপারিশ) লাভের মাধ্যমে সর্বাধিক সৌভাগ্যের অধিকারী হবে সেই ব্যক্তি, যে অন্তরের ইখলাস তথা (পরম একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা) সহকারে বলে, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (লাইলাহা ইল্লাল্লাহ) “আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নাই।” [সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৬৮/ কোমল হওয়া, পরিচ্ছেদ: ২৭৩২. জান্নাত ও জাহান্নাম-এর বর্ণনা।]

◈ ৩. আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ

“ইমানের শাখা সত্তরটি বা ৬০টিরও কিছু বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (লাইলাহা ইল্লাল্লাহ) “আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনও উপাস্য নাই”-এ কথা বলা আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ১/ কিতাবুল ঈমান, পরিচ্ছেদ: ১২. ঈমানের শাখা-প্রশাখার সংখ্যা, তার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শাখার বর্ণনা, লজ্জাশীলতার ফজিলত এবং তা ঈমানের অঙ্গ হওয়ার বর্ণনা]

◈ ৪. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, “আমি এবং আমার পূর্বের নবীগণ যা বলেছেন, তার মধ্যে সর্বোত্তম (বাক্য) হচ্ছে,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهْوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ

“আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক। তাঁর কোনও শরিক নেই। সম্রাজ্য তাঁরই। সমুদয় প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।” [ইমাম মালিক তার মুয়াত্তায় তালহা বিন উবায়দুল্লাহ রা. হতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আলবানি রা. বলেন, সংক্ষিপ্ত কথা হচ্ছে, হাদিসটির শাওয়াহেদ থাকার কারণে তথা অন্যান্য সনদে বর্ণিত হওয়ার কারণে সহিহ। দেখুন: সিলসিলা সহীহা, হাদিস নম্বর: ১৫০৩।] এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

এ সকল হাদিস থেকে বুঝা গেল, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ জিকির হল, কালিমায়ে তাওহিদ বা একত্ববাদের বাণী ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নেই)। কিন্তু ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ (মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল বা দূরত) জিকিরের অংশ নয়। কেননা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর সাথে ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বাক্যকে সংযুক্ত করে জিকির হিসেবে পাঠ করার ব্যাপারে কোনও হাদিস বর্ণিত হয়নি।

সুতরাং আমাদের সমাজের অনেক ইবাদত গুজার মানুষ এবং অনেক ওয়াজ মাহফিলের বক্তাগণ তাদের শ্রোতাদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বাক্য দ্বারা জিকির করার পর শেষে একবার ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বলে থাকেন অথবা কখনো কখনো উভয় বাক্য দ্বারাই জিকির করে থাকেন। কিন্তু এভাবে এ পদ্ধতি জিকির করা শরিয়ত পরিপন্থী। (উল্লেখ্য যে, সম্মিলিতভাবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকির করা আরেকটি বিদআত। কেননা কোন হাদিসে বা সাহাবীদের আমলে এভাবে সম্মানিত জিকির করার কোন দলিল নেই।)

তবে হ্যাঁ, ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল) বাক্যটি অবশ্যই শাহাদায়ে রেসালাহ বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে সাক্ষ্য প্রদানের বাণী। সুতরাং আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতির পাশাপাশি এর প্রতি আন্তরিক দৃঢ় বিশ্বাসের পাশাপাশি তা মুখে স্বীকৃতি প্রদান ব্যতিরেকে ইসলামে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। কোনও কাফির ইসলামে প্রবেশ করতে চাইলে অবশ্যই তাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ অর্থ: আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নাই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রসুল। অথবা আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলাল্লাহ” (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নাই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল-এ উভয় বাণীর প্রতি অন্তরে বিশ্বাস থাকার পাশাপাশি মুখে তা সাক্ষ্য প্রদান করা করা অপরিহার্য। অন্যথায় সে ইসলামে প্রবেশ করতে পারবে না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ شَهِدَ أنْ لا إِلٰهَ إلاَّ اللهُ وَأنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، حَرَّمَ اللهُ عَلَيهِ النَّارَ

“যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রসুল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’’ [সহিহ মুসলিম]

❑ সৌদি আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া:

সৌদি আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির নিকট প্রশ্ন করা হয়, প্রতিনয়ত “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর সাথে “মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” যুক্ত করে এই অতিরিক্ত বাক্য সহকারে জিকির করার বিধান কী? তারা জবাবে বলেন,
الشهادة لله تعالى بالوحدانية، ولرسوله صلى الله عليه وسلم بالرسالة، فرض، لا يكون الإنسان مسلمًا إلا بذلك، والذكر بـ: لا إله إلا الله وحدها، أجره عظيم؛ لحث الشرع على الذكر بها، ولأنها أفضل ما قاله النبي صلى الله عليه وسلم، والنبيون من قبله. أما اتخاذ هذه العبادة: (لا إله إلا الله، محمد رسول الله) وردًا يذكر به، ويداوم عليه، فلم يرد به الشرع، والخير كل الخير في الاستغناء في العمل بما ثبت شرعًا، والاكتفاء به في الذكر، مع الإكثار من الصلاة على النبي صلى الله عليه وسلم كل وقت، وبالله التوفيق. اهــ.
والله تعالى أعلم

“আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রেসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া ফরজ। এ ছাড়া কেউ মুসলিম হতে পারবে না। আর কেবল “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” দ্বারা জিকির করার করার মর্যাদা বিশাল। কারণ ইসলামি শরিয়ত এই বাক্য দ্বারা জিকির করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছে। আর এটি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার পূর্বের সকল নবি-রাসুলগণ কর্তৃক পঠিত সর্বোত্তম বাক্য। কিন্তু কি ‘লা ইলা হা ইল্লাল্লাহু, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ এই বাক্যকে ওজিফা হিসেবে সর্বদা জিকির করার ব্যাপারে শরিয়তে নির্দেশনা আসেনি। আর শরিয়তে যতটুকু সাব্যস্ত হয়েছে শুধু তুতটুকুর উপর আমল করা, ততটুকু দ্বারা জিকির করা, পাশাপাশি সবসময় অধিক পরিমাণে আল্লাহর নবীর উপর দরুদ পাঠ মধ্যেই সর্ববিধ কল্যাণ নিহিত আছে। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আল্লাহু আলাম-আল্লাহ সবচেয়ে বেশি জানেন।”

মোটকথা, জিকির হিসেবে কেবল ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই কালিমাতু তাওহিদ দ্বারা জিকির করতে হবে। এর সাথে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বাক্যকে সংযোগ করা করে জিকির করা বা দৈনন্দিন ওজিফা হিসেবে আমল করা শরিয়ত সম্মত নয়। তবে উভয় বাণীর প্রতি সাক্ষ্য প্রদান অপরিহার্য। এখানে জিকির করা ও সাক্ষ্য প্রদানের মধ্যে পার্থক্যের বিষয়টি বুঝা জরুরি।

❑ অনেক বার ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির করার পর শেষে কমপক্ষে একবার ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পাঠ করা কি আবশ্যক?

➤ ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ দ্বারা জিকির করার পর সবশেষে ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ পাঠ করতে হবে কিংবা ৯৯ বার ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করার পর ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বলার মাধ্যমে একশ পূর্ণ করতে হবে-ইসলামি শরিয়তে এমন কোনও বিধান নেই। সুতরাং কেউ এমনটি করলে তা বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে। আর ইসলামে বিদআত জঘন্য কাজ হিসেবে বিবেচিত। মা জননী আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যে ব্যাপারে আমার নির্দেশনা নেই তা আল্লাহর কাছে পরিত্যাজ্য।” [বুখারী ও মুসলিম] অন্য হাদিসে এসেছে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ

“যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারি ও মুসলিম]।

❑ ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ পাঠ করার পর কি দরুদ তথা ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পাঠ করা জরুরি?

➤ একাধিক হাদিসে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম শুনলে তার প্রতি দরুদ পাঠ তথা ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠের ব্যাপারে অনেক তাগিদ এসেছে। বরং দরুদ পাঠ না করাকে শক্ত ভাষায় তিরস্কার করা হয়েছে। তাছাড়া সাধারণভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। কিন্তু বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামের পরে দরুদ পাঠ করাকে আলেমগণ মকরূহ বা বিদআত বলেছেন দলিল বহির্ভূত হওয়ার কারণে। যেমন:
শাহাদত বাণী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ অথবা “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” পাঠ করা বা শুনার পর, কুরআন তিলাওয়াত বা শ্রবণ কালীন মুহাম্মদ সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম‌ এলে, আজান দেওয়ার সময়, আজানের জবাবে, ইকামতের সময়, সালাতের তাশাহুদের বৈঠক ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামের পরে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পাঠ করা সুন্নত সমর্থিত নয়। কেননা এসব ক্ষেত্রে দরুদ পাঠের কোন হাদিস আসেনি এবং সাহাবিগণও এমনটি করেননি। বরং এসব ক্ষেত্রে হাদিসে যেভাবে যা করতে বলা হয়েছেে সেভাবে তাই করতে হবে। ইবাদতের ক্ষেত্রে নিজস্ব অভিরুচী অনুযায়ী আমল করা বা ও এ সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে ইচ্ছামত প্রয়োগ করা শরিয়ত সম্মত নয়। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি কখনো এ সব ক্ষেত্রে দরুদ পড়ে নেয় কিন্তু এটাকে নিয়ম বানিয়ে না ফলে বা সুন্নতি আমল মনে না করে তাহলে আশা করা যায়, তা বিদআত পর্যায়ে পৌঁছবে না ইনশাআল্লাহ।

جاء في “تحفة المحتاج” من كتب الشافعية (2/65) :
” وَلَوْ قَرَأَ الْمُصَلِّي أَوْ سَمِعَ آيَةً فِيهَا اسْمُهُ صلى الله عليه وسلم لَمْ تُسْتَحَبَّ الصَّلَاةُ عَلَيْهِ كَمَا أَفْتَى بِهِ الْمُصَنِّفُ – يعني النووي – ” انتهى .
ويقول الحافظ ابن حجر الهيتمي في “الفتاوى الفقهية الكبرى” (1/131) :
” وَوَرَدَتْ أَحَادِيثُ أُخَرُ بِنَحْوِ تِلْكَ الْأَحَادِيثِ السَّابِقَةِ , وَلَمْ نَرَ فِي شَيْءٍ مِنْهَا التَّعَرُّضَ لِلصَّلَاةِ عَلَيْهِ قَبْلَ الْأَذَانِ , وَلَا إلَى مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ بَعْدَهُ وَلَمْ نَرَ أَيْضًا فِي كَلَامِ أَئِمَّتِنَا تَعَرُّضًا لِذَلِكَ أَيْضًا , فَحِينَئِذٍ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْ هَذَيْنِ لَيْسَ بِسُنَّةٍ فِي مَحَلِّهِ الْمَذْكُورِ فِيهِ , فَمَنْ أَتَى بِوَاحِدٍ مِنْهُمَا فِي ذَلِكَ مُعْتَقِدًا سُنِّيَّتَهُ فِي ذَلِكَ الْمَحَلِّ الْمَخْصُوصِ نُهِيَ عَنْهُ وَمُنِعَ مِنْهُ ; لِأَنَّهُ تَشْرِيعٌ بِغَيْرِ دَلِيلٍ ; وَمَنْ شَرَّعَ بِلَا دَلِيلٍ يُزْجَرُ عَنْ ذَلِكَ وَيُنْهَى عَنْهُ . ” انتهى .
وفي “فتاوى الشيخ ابن باز” رحمه الله (10/334) :
” وكذلك ما يزيده بعض الناس من الصلاة على النبي مع الأذان عندما يقول : ( لا إله إلا الله ) يزيد : ( الصلاة على النبي ) رافعا بها صوته مع الأذان أو في المكبر ، فهذا لا يجوز وبدعة أيضا ” انتهى باختصار .
আল্লাহু আলাম।

▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।