কোন কোন কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা বৈধ আর কোন কাজের শুরুতে অবৈধ

প্রশ্ন: সকল প্রকার কাজের শুরুতে কি ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হয়? এমনকি হারাম কাজের শুরুতেও কি বিসমিল্লাহ বলা বৈধ?

উত্তর:
সকল প্রকার দুনিয়াবী বৈধ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে হয়। হারাম বা মাকরূহ কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হারাম বরং তা আল্লাহর সাথে ধৃষ্টতা প্রদর্শনের শামিল।
বিসমিল্লাহ বলার অর্থ উক্ত কাজে আল্লাহর সাহায্য ও বরকত কামনা করা। সুতরাং কেউ যদি আল্লাহর নিষিদ্ধ বা ঘৃণিত কাজে তার নিকট সাহায্য চায় বা বরকত কামনা করে তাহলে তা মহামহিম আল্লাহর সাথে বেয়াদবী করা হল না?
যেখানে হারাম কাজ করার আগে আল্লাহ তাআলার কথা স্বরণ করে সেখান থেকে দূরে সরে আসা আবশ্যক সেখানে বিসমিল্লাহ বলে হারাম কাজ করা কোনভাবেই বৈধ হতে পারে না।

🌀 কখন বিসমিল্লাহ্‌ বলা মুস্তাহাব?

🔸 ১) টয়লেটে প্রবেশের পূর্বে: بِسْمِ اللـهِ اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الـخُبْثِ والـخَبَائِثِ তবে বিসমিল্লাহ ছাড়াও দুয়াটি বর্ণিত হয়েছে।
🔸২) ওযুর শুরুতে بِسْمِ اللهِ
🔸 ৩) খাওয়ার সময় بِسْمِ اللهِ
🔸 ৪) প্রাণী যবেহ্‌ করার সময়: بِسْمِ اللَّـهِ وَاللهُ أكْبرُ
(অনেক আলেমের মতে প্রাণী জবেহের সময় এই দুআ পড়া ওয়াজিব)
🔸 ৫) স্ত্রী সহবাসের সময়। ইবনু আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ قَالَ بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا فَقُضِيَ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ لَمْ يَضُرُّهُ
“তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রী সহবাসের সময় এই দু’আ পাঠ করে:
بِسْمِ اللهِ اللهمَّ جَنِّبْناَ الشَّيْطاَنَ وَجَنِّبِ الشَّيْطاَنَ ماَ رَزَقْتَناَ
‘শুরু করছি আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ্‌! আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে সন্তান দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখ।’ তবে তাদের জন্য যদি কোন সন্তান নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে শয়তান কখনই তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” (সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ দু’আ, অনুচ্ছেদঃ স্ত্রী সহবাসের সময় যা বলতে হয়। হা/ ৫৯০৯। মুসলিম অধ্যায়ঃ বিবাহ অনুচ্ছেঃ সহবাসের সময় যা বলা মুস্তাহাব হা/ ২৫৯১)
🔸 ৬) নৌযানে আরহণের সময় بِسْمِ اللَّهِ مَجْرَاهَا وَمُرْسَاهَا ۚ إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ (সূরা হূদ- ৪১)
🔸৭) পত্র লিখার সময় بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ (সূরা নমল- ৩০)
🔸 ৮) রাস্তায় চলতে গিয়ে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেলে বিসমিল্লাহ। যেমন এ মর্মে হাদীস বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ عَنْ رَجُلٍ قَالَ كُنْتُ رَدِيفَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَثَرَتْ دَابَّةٌ فَقُلْتُ تَعِسَ الشَّيْطَانُ فَقَالَ لَا تَقُلْ تَعِسَ الشَّيْطَانُ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَعَاظَمَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الْبَيْتِ وَيَقُولُ بِقُوَّتِي وَلَكِنْ قُلْ بِسْمِ اللَّهِ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَصَاغَرَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الذُّبَابِ.
আবূ মুলাইহ্‌ থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক ব্যক্তি (ছাহাবী) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: আমি একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাঁর আরোহীর পিছনে বসা ছিলাম। এমন সময় আরোহীটি পা ফসকে পড়ে গেল। তখন আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন: “শয়তান ধ্বংস হোক এরূপ বলো না, কেননা এতে সে নিজেকে খুব বড় মনে করে এমনকি ঘরের মত হয়ে যায় এবং বলে আমার নিজ শক্তি দ্বারা একাজ করেছি; বরং এরূপ মূহুর্তে বলবে ‘বিসমিল্লাহ্‌’। এতে সে অতি ক্ষুদ্র হয়ে যায় এমনকি মাছি সদৃশ্য হয়ে যায়।” [ মুসনাদে আহমাদ হা/ ১৯৭৮২। আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ আদব-শিষ্টচার, অনুচ্ছেদঃ এরকম বলবে না আমার প্রাণ খবিস হয়ে গেছে। হা/ ৪৩৩০। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেন, সহীহ তারগীব তারহীব হা/ ৩১২৯। সহীহ আবু দাউদ হা/ ৪৯৮২।)
🔸 ৯) সূরা তওবা ছাড়া যে কোন সূরা পড়ার শুরুতে بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ
🔸১০) মসজিদে প্রবেশের সময় بسم اللهِ، وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى رَسُولِ الله ، اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أبْوَابَ رَحْمَتِكَ
🔸 ১১) মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় بِسْمِ اللَّهِ وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ إنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ، اللَّهُمَّ اعْصِمْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيم
🔸১২) এছাড়াও দুনিয়াবী যে কোন বৈধ কাজের শুরুতে।
আল্লাহু আলাম
✒✒✒✒✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব।