কুরআন তিলাওয়াতের সময় ওয়াকফ (থামা) সংক্রান্ত জরুরি বিধান

প্রশ্ন: কুরআন তিলাওয়াতের সময় আমরা বিভিন্ন হরফের চিহ্ন দেখি যেগুলো ইঙ্গিত করে যে, এখানে বাক্য শেষ। এখন আয়াতের মাঝে এই হরফগুলোতে থামা অথবা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিধান কি? এ সব ক্ষেত্রে যদি ইচ্ছা মত থামি অথবা পড়া চালিয়ে যাই তাহলে কি তাতে গুনাহ আছে?

উত্তর:
কুরআনের বিভিন্ন ওয়াকফ (থামার) চিহ্নগুলোর প্রতি খেয়াল রেখে পাঠ করা উত্তম। এটি কুরআন তিলাওয়াতের সৌন্দর্য বাড়ায়।
তাই যদি তিলাওয়াতের সময় ওয়াফক করার স্থান নয় এমন স্থানে নিশ্বাস শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে থামতে হয় তাহলে যে শব্দের উপর থামা হয়েছে তার আগের কিছু শব্দ সহ পুনরায় পাঠ করা উত্তম। কিন্তু এ সকল ওয়াকফ চিহ্ন অনুসরণ না করলে হারাম হবে বা এতে গুনাহ হবে তা ঠিক নয়।
قال الحافظ ابن الجزري في المقدمة الجزرية :
وليسَ في القرآن مِنْ وقْفٍ وجَب … ولا حرام غير ما له سَبَبْ “انتهى من “هداية القاري إلى تجويد كلام الباري “للمرصفي (1/387)
হাফিজ ইবনে জাযারি মুকাদ্দামায়ে জাযারিয়ায় বলেন, “কুরআনে ওয়াজিব কোন ওয়াকফ নাই। আর কোথাও হারাম ওয়াকফও নাই তবে বিশেষ কারণ হলে ভিন্ন কথা।” (হিদায়াতুল ক্বারী ইলা তাজবীদিল বারী ১/২৮৭)

যেমন: যদি ইচ্ছা করে এমন স্থানে ওয়াকফ করে যা অর্থের বিকৃতি ঘটায় তাহলে তা হারাম।
উদাহরণস্বরূপ:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
والله لاَ يَسْتَحْيِي مِنَ الحق
“আর আল্লাহ লজ্জা করেন না হকের ব্যাপারে।”(সূরা আহযাব: ৫৩)
কেউ যদি খারাপ উদ্দেশ্যে لاَ يَسْتَحْيِي “আল্লাহ লজ্জা করেন না” বলে থেমে যায় তাহলে তারা হারাম হবে। কারণ তা আয়াতের মূল উদ্দেশ্যকে বিকৃতি ঘটায়।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
والله لاَ يَهْدِي القوم الفاسقين
“আর আল্লাহ হেদায়েত দেন না ফাসিক সম্প্রদায়কে।(সূরা সফ: ৫)
এখানে কেউ যদি والله لاَ يَهْدِي “আর আল্লাহ হেদায়েত দেন না…”এতটুকু পড়ে থেমে যায় তাহলে তা হারাম হবে। কারণ তা আয়াতের মূল উদ্দেশ্যকে পরিবর্তন করে দেয়।
কেউ যদি জেনে-বুঝে আয়াতের অর্থ বিকৃত করার উদ্দেশ্যে এভাবে পড়ে তাহলে সে মুসলিম থাকবে না। কারণ সে কুরআনের বিকৃতি ঘটিয়েছে। কিন্তু নি:শ্বাস শেষ হওয়ার কারণে যদি উক্ত স্থানে থামা হয় তাহলে উক্ত শব্দটি অথবা কিছু আগে থেকে পুনরায় ফিরিয়ে পড়লে আর কোন সমস্যা থাবে না ইনশাআল্লাহ।
অথবা যেখানে থামার চিহ্ন ছিল সেখানে না থেমে এক শ্বাসে পড়া চালিয়ে যাওয়া হয় তাহলে তাতেও গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ।
অনুরূপভাবে আরবি ভাষা না জানার কারণে (অর্থ না জানার কারণে) কোথাও ওয়াকফ করা হলে তার পর থেকে পড়া চালিয়ে গেলে (আগের শব্দকে পুনরাবৃত্তি না করে) তাতেও গুনাহ হবে না। কারণ মূলত: ইচ্ছা করে আয়াতের অর্থ বিকৃত করা তার উদ্দেশ্য নয়।

সুতরাং সাধারণ কুরআনের পাঠকদের কুরআনের ওয়াকফ ও অন্যান্য চিহ্নগুলো সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা ও যথাসম্ভব অনুসরণ করা উচিৎ। কিন্তু অর্থ পরিবর্তনের উদ্দেশ্য না থাকলে এ সব চিহ্ন অনুসরণ না করলেও গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ। তা ছাড়া অনেক সময় মুখস্থ তিলাওয়াতের সময় চিহ্নগুলো মনে রাখাও কষ্টসাধ্য বিষয়।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে এমন পদ্ধতিতে কুরআন তেলাওয়াত করার তৌফিক দান করুন যা দ্বারা তিনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হবেন এবং এক্ষেত্রে আমাদের জানা-অজানা ভুলগুলো ক্ষমা করে দিন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
—————-
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।