কুমির, তিমি, ব্যাঙ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়ার বিধান

প্রশ্ন: কুমির, তিমি, ব্যাঙ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি সামুদ্রিক প্রাণী কি খাওয়া কি হালাল?

উত্তর:

ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত এবং হারাম ঘোষিত প্রাণী ব্যতীত সমস্ত সকল প্রকার সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া হালাল। সুতরাং এ দৃষ্টিতে তিমি মাছ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামকু, ঝিকুন ইত্যাদি সবই হালাল প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত।
আর ব্যাঙ খাওয়া সর্বসম্মতভাবে হারাম। কারণ ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে।
কুমিরের ব্যাপারটি দ্বিমত পূর্ণ। জুমহুর বা অধিকাংশ আলেমদের মতে তা হারাম।

নিম্নে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হল:

সর্বপ্রকার সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া হালাল হওয়ার ব্যাপারে কুরআন-হাদিসের বক্তব্য:

🔷 আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
..أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ
“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে”। (সূরা মায়িদাহ: ৯৬)
🔷 আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন:
قُلْ لَا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنْزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ
“আপনি বলে দিন: যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ।” (সূরা আনআম: ৫)
🔷 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:« هو الطهور ماؤه الحل ميتته »
“নদী বা সাগরের পানি পবিত্র, এবং পানিতে বসবাসকারী মৃত প্রাণীও খাওয়া বৈধ।” (তিরমিযী ৬৯, আবু দাউদ ৮৩, হাদিসটি আলবানী রহ. ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে সহীহ বলেছেন: ১/২১)

🔷 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবী শুরাইহ বলেন; পানিতে বসবাসকারী সমস্ত প্রাণী খাওয়া বৈধ।” (বুখারী ৫/২০৯১)
🔷 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন:
مَا أَحَلَّ اللهُ فِىْ كِتَابِهِ فَهُوَ حَلاَلٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَافِيَةٌ فَاقْبَلُوْا مِنَ اللهِ الْعَافِيَةَ، فَإِنَّ اللهَ لَمْ يَكُنْ نَسِيًّا. ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ (وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا)-
‘আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে যা হালাল করেছেন তা হালাল, যা হারাম করেছেন তা হারাম, আর যে বিষয়ে তিনি নীরব থেকেছেন তা ক্ষমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমাকে গ্রহণ কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বিস্মৃত হন না। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, ‘তোমার প্রতিপালক বিস্মৃত হন না’ (মারিয়াম ১৯/৬৪)।[ হাকেম, দারাকুৎনী; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২২৫৬।]

🔹 তাছাড়া ইসলামের একটি অন্যতম মূলনীতি হল, দুনিয়াবি সকল বস্তুই বৈধ যতক্ষণ না ইসলামে সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়। আর কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি খাওয়ার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায় না।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথা প্রতীয়মান হল যে, উপরোক্ত সামুদ্রিক প্রাণী বৈধতার ব্যাপারে কোন বাধা নেই।এগুলোকে মাকরূহ বলাও প্রমাণ সাপেক্ষ নয়। তবে কারও যদি তা খেতে রুচি না হয় তবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু এগুলোকে হারাম বা মাকরূহ বলার কোন যৗক্তিকতা নাই।

 ব্যাঙ খাওয়া হারামঃ

যে সকল ব্যাঙ পানি ছাড়া বাঁচে না সেগুলোও খাওয়া হারাম কেননা হাদিসে ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ ব্যাপারে হাদিস হল: আব্দুর রহমান ইবনে উসমান রা. থেকে বর্ণিত:
أَنَّ طَبِيباً سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – عَنِ الضِّفْدَعِ يَجْعَلُهَا فِي دَوَاءٍ، فَنَهَى عَنْ قَتْلِهَا. أَخْرَجَهُ أَحْمَدُ، وَصَحَّحَهُ الْحَاكِمُ في صحيح الجامع 6970 .হাদিস
“কোন চিকিৎসক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি’ ওয়া সাল্লাম কে ব্যাঙ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন এটা ঔষধে প্রয়োগ করবেন কি না? তিনি ওটা হত্যা করতে নিষেধ করলেন।” (আহমাদ ১৫৩৩০, নাসাঈ ৪৩৫৫, আবূ দাউদ ৩৮৭১, দারেমী ১৯৯৮, হাকিম ৪র্খ খণ্ড ৪১১ পৃষ্ঠা। সহীহুল জামে, হা/৬৯৭০)

আর শরীয়তের একটি মূলনীতি হল, যে প্রাণী হত্যা করা হারাম তা খাওয়াও হারাম। সেটা খাওয়া হালাল হলে তা হত্যা করা বৈধ হত।

 কুমির:

কুমিরের ব্যাপারে আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। তবে ইমাম মালেক ছাড়া অন্যান্য ইমামগণ যেমন ইমাম আবু হানিফা, শাফেঈ, আহমদ বিন হাম্বল তথা অধিকাংশ ইমামদের মতে কুমির খাওয়া হারাম। কারণ এটি উভচর প্রাণী। অর্থাৎ কুমির যেমন পানিতে বসবাস করে স্থল ও বন-জঙ্গলেও বসবাস করে। সেই সাথে এটি বড় বড় দাঁত বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী।আর হাদিসে বড় নড় নখ বিশিষ্ট হিংস্র প্রাণী খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
আবু হুরারা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السِّبَاعِ، فَأَكْلُهُ حَرَامٌ» رَوَاهُ مُسْلِمٌ
“লম্বা দন্ত বিশিষ্ট সকল হিংস্র পশুর গোশত খাওয়া হারাম।” (সহীহ মুসলিম ১৯৩৩) আল্লাহু আলাম

 যদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা কোন প্রাণীর গোস্ত খাওয়া ক্ষতিকর প্রমাণিত হয় তাহলে তা খাওয়া হারাম। চাই তা সামুদ্রিক হোক অথবা স্থলচর হোক।
 কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
“আর তোমরা নিজেদেনরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।” (সূরা নিসা: ২৯)
 তিনি আরও বলেন:
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ
“তোমরা নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।” (সূরা বাকারা: ১৯৫)
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA