ঈদুল ফিতরের রাতের ফজিলত এবং এ রাতে করণীয়

প্রশ্ন: ঈদুল ফিতরের রাতে করণীয় এবং এ রাত জেগে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করার ফজিলত কি?
উত্তর:
ঈদের চাঁদ (শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ) উদিত হলে রমজানের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ রাত থেকে আর তারাবীহ এর সালাত নেই। সুতরাং যথারীতি রমজানের আগে যে সব সালাত ছিল সেগুলো আদায় করতে হবে। ইশার সালাত আদায় করা হবে সুন্নত ও বিতর সহ।

এটাই হল, ঈদের রাত। পরের দিন প্রত্যুষে মুসলিমগণ (যদি ইতোপূর্বে ফিতরা বণ্টন না করা হয়ে থাকে তাহলে) গরিব-দুখীদের মাঝে ফিতরা বণ্টন প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে গোসল করে এবং আতর-সুগন্ধি মেখে ঈদের মাঠে যাবে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে।

◍ ঈদের রাতে করণীয়: তাকবীর পাঠ

আল্লাহ তাআলা রমজানের বিধিবিধান বর্ণনা করার পর বলেন,
لِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“যাতে তোমরা (রমজান মাসের) সংখ্যা পূরণ কর এবং তোমাদেরকে সুপথ দেখানোর দরুন তাকবীর পাঠ (আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা) করো এবং কৃতজ্ঞতা আদায় কর।” (সূরা বাকারা: ১২৫)

সুতরাং এ রাতের করণীয় হল, তাকবীর পাঠ করা। পুরুষরা সন্ধ্যার পর থেকে বাড়িতে, মসজিদে, রাস্তায়, মাঠে-ঘাটে, বাজারে যে যেখানে থাকবে সেখানে উঁচু আওয়াজে তাকবীর পাঠ করবে। আর মহিলারা নিচু স্বরে তাকবীর পাঠ করবে।

◍ তাকবীর হল: “আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লালা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার ওয়ালিল্লা-হিল হামদ।”
(প্রথমে আল্লাহু আকবার তিন বার বলাও হাদিস সম্মত)
শেষ রমজানের সূর্য ডোবার পর তথা ঈদের রাত থেকে আরম্ভ করে ঈদের নামায শুরু করা পর্যন্ত এ তাকবীর পাঠ অব্যাহত থাকবে।

◍ ঈদের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করা:

এ রাতে তাকবীর পাঠ ছাড়া বিশেষ কোনও নামাজ, ইবাদত-বন্দেগি বা অন্য কোনও আমল নেই। এ ব্যাপারে কোনও সহিহ হাদিস সাব্যস্ত হয় নি। তবে যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ সালাতে অভ্যস্ত তারা যথারীতি তা পড়তে পারে।
শাইখ উসাইমিন রহ. বলেন, দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করার ফজিলতের হাদিসগুলো জঈফ (দুর্বল)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এ দু রাত জেগে ইবাদত করতেন না। তিনি সারা রাত জেগে ইবাদত করেছেন কেবল রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে-লাইলাতুল কদর (শবে কদর) পাওয়ার আশায়। যখনই শেষ দশক শুরু হত, তিনি সবগুলো রাত জেগে ইবাদত করতেন।”

◍ ঈদের রাতের ফযিলতে বর্ণিত একটি প্রসিদ্ধ জাল/জঈফ বর্ণনা:

ঈদের রাত জেগে ইবাদতের ব্যাপারে যেসব হাদিস পেশ করা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল,
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيْ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلَّهِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
“যে ব্যক্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দু ঈদের রাত জেগে ইবাদত করবে তার হৃদয় মারা যাবে না যেদিন সব হৃদয় মারা যাবে।” [ইবনে মাজাহ, হা/১৭৮২]

এ হাদিসটি সহিহ নয়।

● এ হাদিসটিকে নওবী এ হাদিসটিকে মারফু ও মাওকুফ উভয় সূত্রে জইফ বলেছেন।
● হাফেজ ইরাকি, ইবনে হাজার প্রমুখ মুহাদ্দিসগণও এটিকে জইফ বলেছেন।
وقال الحافظ ابن حجر : هذا حديث غريب مضطرب الإِسناد . انظر : “الفتوحات الربانية” (4/235) .
● আলবানি এটিকে মাউযু (বানোয়াট) হাদিস বলে আখ্যায়িত করেছেন। [জইফ ইবনে মাজাহ]

◈ শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া রহঃ বলেন,
” الأَحَادِيثُ الَّتِي تُذْكَرُ فِي لَيْلَةِ الْعِيدَيْنِ كَذِبٌ عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم” انتهى .
“দু ঈদের রাতের ব্যাপারে যে সব হাদিস পেশ করা সেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মিথ্যাচার।”

মোটকথা, দু ঈদে সারা রাত জেগে বিশেষ কোনও সালাত, জিকির-আজকার, মিলাদ, করব জিয়ারত ইত্যাদি করার ব্যাপার শরিয়তে বিশুদ্ধ সূত্রে কোনও নির্দেশনা আসে নি। তবে অন্যান্য সময় যেমন ইবাদত-বন্দেগি, দুআ-জিকির, কবর জিয়ারত, কুরআন তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ সালাত আদায় ইত্যাদি করা জায়েজ তেমনি এ দু রাতেও সেগুলো জায়েজ। কিন্তু তা এ রাতের বিশেষ ফজিলত মনে করে করা শরিয়ত সম্মত নয়।

মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে তাকবীর তথা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের বহিঃপ্রকাশের মধ্য দিয়ে তাদের বছরের অন্যতম জাতীয় ঈদ উৎসব পালনের তওফিক দান করুন এবং ক্ষেত্রে সব ধরণের বিদআত, পাপাচার ও আল্লাহর নাফরমানি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।