ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য এবং দাড়ির যত্নে কতিপয় টিপস

প্রশ্ন: দাড়িতে তেল মাখা যাবে কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি দাড়িতে তেল মাখতেন? গোসলের আগে না কি পরে তেল মাখা সুন্নত?
উত্তর:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নি:সন্দেহে সকল ক্ষেত্রে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন,
إنَّ اللهَ جميلٌ يحبُّ الجَمالَ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন।” (মুসলিম ১/৬৫)
ইবনুল কাইয়েম রহঃ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
يدخل فيه الجمال في كلّ الأشياء بطريق العموم
“ব্যাপকার্থে সব কিছুর সৌন্দর্য এ হাদিসের অন্তর্গত।” (জামা-কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল, চুল, দাড়ি, মোচ, বিছানা, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি সব কিছু)।
তাই তো প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কার ও পবিত্র পোশাক পরিধান করতেন। পাক-পবিত্রতাকে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। খুব বেশি দাঁত পরিষ্কার করতেন। সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। দুর্গন্ধকে ঘৃণা করতেন। নখ, মোচ, বগল ও নাভির নিচের লোম পরিষ্কার ইত্যাদির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নিজে তেল ব্যবহার করতেন। মাথা আঁচড়াতেন। এবং তেল ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি উম্মতকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। যেমন: হাদিসে এসেছে,
كُلُوا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوا بِهِ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ
“তোমরা জয়তুনের তেল খাও এবং শরীরে মাখ। কেননা, তা বরকতময় গাছ থেকে আসে নি:সৃত।” (তিরমিযী, আহমদ, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন)
আর তিনি যেহেতু স্বাস্থ্য সচেতন ও সৌন্দর্য প্রিয় পরিপাটি মানুষ ছিলেন সেহেতু শরীর ও পোশাকের পাশাপাশি দাড়ির যত্ন নিতেন তা সহজেই অনুমেয়। তেল ব্যবহার করতেন তাও হাদিস থেকে স্পষ্ট। (তা গোসলের আগে হোক বা পরে হোক তা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে। হাদিসে এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না)।
◍◍ দাড়ির পরিচর্যায় কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা:
আমাদের অজানা নয় যে, ইসলামে দাড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়ি রেখেছেন সে অর্থে দাড়ি রাখা সুন্নত। কিন্তু তিনি উম্মতকে দাড়ি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সে দিক থেকে দাড়ি রাখা ফরজ এবং দাড়ি কাটতে বা মুণ্ডন করতে নিষেধ করেছেন সে কারণে দাড়ি কাটা, ছাঁটা বা মুণ্ডন করা হারাম।
সঙ্গত কারণে দাড়ির প্রতি যত্ন নেয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি তা আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ তাতে কোনও সন্দেহ নাই। তাই মুসলিম হিসেবে আদর্শ ব্যক্তিত্ব, সুস্থতা ও সৌন্দর্য রক্ষার স্বার্থে দাড়ির প্রতি যত্ন নেয়ার ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
নিম্নে দাড়ির প্রতি যত্ন নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু আধুনিক টিপস প্রদান করা হল:
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ দাড়ির যত্নে কিছু আধুনিক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো জেনে নেয়া যাক।
তারা বলেছেন, “স্বাস্থ্য বজায় রাখতে চুলের মতো দাড়িরও যত্নের প্রয়োজন। দাড়িতে তেল দিন। পশ্চিমা দেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিয়ার্ড অয়েল পাওয়া যায়। যেমন:
◈ ইউক্যালিপটাস তেল:
বাজারে ইউক্যালিপটাস তেল সহজেই কিনতে পারবেন। এই তেল অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাস। দাড়ি দ্রুত বড় হতেও সাহায্য করে। ছয় চা চামচ অলিভ অয়েলের সঙ্গে ২-৩ ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অয়েল ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর সেটা দাড়িতে হালকা হাতে মাসাজ করে লাগিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
◈ নারকেল তেল:
বাড়িতে যদি খাঁটি নারকেল তেল পাওয়া যায়, তার বিকল্প নেই। একটা ছোট বোতলে নারকেল তেল ভর্তি করুন। তাতে ১০ ফোঁটা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে রাখুন। রোজ রাতে শোয়ার সময় দাড়িতে প্রয়োজনমত লাগিয়ে নিন। পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন।
◈ টি ট্রি অয়েল:
খুব ভাল ময়শ্চারাইজার। গন্ধটাও খুব সুন্দর। দু’ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অয়েলের সঙ্গে দু’ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে রাখুন। রোজ স্নানের ১৫ মিনিট আগে ভাল করে দাড়িতে লাগিয়ে রাখুন।
◈ সাইট্রাস অয়েল:
২০ মিলিলিটার আমন্ড অয়েলের সঙ্গে, পাঁচ মিলিলিটার জোজোবা অয়েল মিশিয়ে নিন। তাতে ২-৩ ফোঁটা সাইট্রাস অয়েল ভাল করে মিশিয়ে নিন। দাড়ির জন্য এটাও খুব উপকারী। দিনের যে কোনও সময়ে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দাড়ির পাশাপাশি ত্বককেও উজ্জ্বল করে এই তেলগুলো।
দাড়ি পরিষ্কারে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সপ্তাহে ২-৩বার শ্যাম্পু করুন আপনার দাড়িতে। শুধু তাই না, কন্ডিশনারও দিতে পারেন। দাড়ি ধোয়ার পরে অবশ্যই ভালো করে মুছে নিন। দাড়ি নিয়মিত আঁচড়ে নিতেও ভুলবেন না।
[সূত্র: somoynews.tv]
▬▬▬▬◈◯◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল৷
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব৷