ইসলামের দৃষ্টিতে কোনও হিন্দু বা বিধর্মীকে ঘর বা দোকান ভাড়া দেওয়ার বিধান

প্রশ্ন: কোন হিন্দু বা বিধর্মীকে কি বসবাসের জন্য ঘর ভাড়া দেওয়া জায়েজ? কারণ তারা ঘরে শিরক ও নানা ধরণের হারাম কার্যক্রম করে থাকে।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬

উত্তর: হ্যাঁ, বসবাস করার উদ্দেশ্যে যে কোন হিন্দু বা অমুসলিমকে (যে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত নয়) ঘর ভাড়া দেওয়ায় কোন আপত্তি নেই। এই উদ্দেশ্যে ঘর ভাড়া নেওয়ার পরে সে যদি ঘরের মধ্যে মূর্তি পূজা করে, দেব-দেবীর ছবি বা ক্রুশ ঝুলায় তাহলে এ কারণে ভাড়া দাতা গুনাগার হবে না। কারণ সে এই উদ্দেশ্যে ঘর ভাড়া দেয়নি।
◆ ইমাম সারাখসি [ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আস সারাখসি, মৃত্যু: ৭৮৩] বলেন,
ولا بأس بأن يؤاجر المسلم دارا من الذمي ليسكنها ، فإن شرب فيها الخمر أو عبد فيها الصليب أو أدخل فيها الخنازير لم يلحق المسلم إثم في شيء من ذلك ، لأنه لم يؤاجرها لذلك ، والمعصية في فعل المستأجر ، فلا إثم على رب الدار في ذلك ” انتهى من “المبسوط” (16/39
“কোন জিম্মি তথা জিজিয়া প্রদানের শর্তে মুসলিম সরকারের অধীনে বসবাসকারী অমুসলিমকে কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি বসবাসের জন্য ঘর ভাড়া দেয় তাতে কোন সমস্যা নেই। অতঃপর সে যদি ঘরের মধ্যে মদ পান করে বা ক্রুশ পূজা করে অথবা ঘরে শুয়োর প্রবেশ করায় তাহলে এগুলোর কারণে মুসলিম ব্যক্তির কোন গুনাহ হবে না। কারণ সে তাকে এ উদ্দেশ্যে ঘর ভাড়া দেয়নি। যে ঘর ভাড়া নিয়েছে তার কাজের মধ্যে আল্লাহর নাফরমানি রয়েছে। অতএব বাড়ির মালিকের উপরে এর গুনাহ বর্তাবে না [আল‌ মাবসুত ১৬/৩৯-সারাখসি]
তবে নিঃসন্দেহে উত্তম হলো, বাড়ি, দোকান ইত্যাদি বিক্রয় বা ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া যে সেখানে শরিয়ত বিরোধী বা হারাম কাজ করবে না বলে আশা করা যায়।

❒ হারাম কাজের উদ্দেশ্যে কাউকে ঘর বা কোনও স্থান ভাড়া দেওয়া জায়েজ নাই:
হারাম কাজের উদ্দেশ্যে কারো নিকট ঘর বা দোকান বিক্রয় করা বা তা ভাড়া দেওয়া জায়েজ নয়। যেমন: মদের বার তৈরি, মন্দির বা গির্জা হিসেবে ব্যবহার ইত্যাদি।
ইবনে কুদামা বলেন,
ولا يجوز للرجل إجارة داره لمن يتخذها كنيسة، أو بيعة، أو يتخذها لبيع الخمر أو القمار. ا.هـ من المغني
“কারও জন্য তার ঘরকে গির্জা তৈরি, মদ বিক্রয় বা জুয়া খেলার উদ্দেশ্যে ভাড়া দেওয়া বা বিক্রয় করা জায়েজ নেই। [আল মুগনি-ইবনে কুদামা] কেননা তা হারাম কাজে সহায়তার শামিল- যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
“তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” [সূরা মায়িদা: ২]

সুতরাং ঘর ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক চেষ্টা করতে হবে, কোন দ্বীনদার-ভালো মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়া, এমন কাউকে পাওয়া না গেলে সাধারণ মুসলিম‌ (যে হয়তো কিছু পাপাচারও করে) তাকে ঘর ভাড়া দেওয়া, এমন কাউকে না পাওয়া গেলে তুলনামূলক সৎ মানসিকতা সম্পন্ন যেকোনো অমুসলিমকে ঘর ভাড়া দেওয়া জায়েজ-যদি না সে হারবি তথা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।