প্রশ্ন: প্রত্যেক ফরয সালাতের পর (একবার করে) সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করব না কি কেবল সূরা নাস ও ফালাক এ দুটি সূরা পড়ব? কারণে কিছু হাদীসে দেখলাম, কেবল সূরা ফালাক ও নাস পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। এ সব হাদীসে সুরা ইখলাস পড়ার কথা আসে নি। আশা করি বিষয়টি ক্লিয়ার করবেন।
উত্তর:
পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের পরে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস একবার করে এবং সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়ার কথা একাধিক সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়ছে। যেমন নিম্নোক্ত হাদীস সমূহ দেখুন:
♻ ১ম হাদীস:
عَنْ مُعَاذِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ خُبَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ خَرَجْنَا فِي لَيْلَةٍ مَطِيرَةٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيدَةٍ نَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي لَنَا – قَالَ – فَأَدْرَكْتُهُ فَقَالَ ” قُلْ ” . فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا ثُمَّ قَالَ ” قُلْ ” . فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا . قَالَ ” قُلْ ” . قُلْتُ مَا أَقُولُ قَالَ ” قُلْ : هوَ اللَّهُ أَحَدٌ وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِي وَتُصْبِحُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ ”
আবদুল্লাহ ইবন খুবায়ব তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ এক বর্ষণমুখর রাতে গভীর অন্ধকারে আমাদের জন্য দু’আ করার উদ্দেশ্যে আমারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তালাশ করতে বের হলাম। এক স্থানে গিয়ে আমি তাঁকে পেলাম।
তখন তিনি বললেনঃ বল।
আমি কিছুই বললাম না।
তিনি আবার বললেনঃ বল।
আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি আমাকে বললেনঃ বল। আমি বললামঃ কি বলব?
তিনি বললেনঃ “সকাল-সন্ধ্যায় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ এবং মুআওওয়াযাতায়ন (কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউযু বিরাব্বিন নাস) তিন বার পাঠ করবে; তবে তা সব কিছুর ক্ষেত্রে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।”
[তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৫৭৫ [আল মাদানী প্রকাশনী] হাদীসটির সনদ হাসান, তা’লীকুর রাগীব ১/২২৪, আল কালিমুত তাইয়্যিব ১৯/৭]
♻ দ্বিতীয় হাদীস:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ أَقْرَأَ بِالْمُعَوِّذَاتِ دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ
‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে প্রত্যেক সলাতের পর মুআওয়াযাত তথা আশ্রয় প্রার্থনার সূরাগুলো পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সূনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫২৩, সহিহ হাদিস)
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, “উক্ত হাদীসে ‘মুআওয়াযাত তথা আশ্রয় প্রার্থনার সূরাগুলো’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তিনটি সূরা। সূরা নাস ও ফালাকের সাথে সূরা ইখলাসকেও শামিল করা হয়েছে তাগলীব এর ভিত্তিতে কেননা, এতে আল্লাহ তাআলা গুনাগুণ বর্ণিত হয়েছে। যদিও তাতে আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে আসে নি।”
উল্লেখ্য যে, সুনান তিরমিযীতে মুআওয়াযাতাইন (আশ্রয় প্রার্থনার দুটি সূরা তথা সূরা নাস ও ফালাক) পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তা সনদগতভাবে দুর্বল।
♻ তৃতীয় হাদীস:
উকবা বিন আমের রা. হবে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
قل هو الله أحد ، وقل أعوذ برب الفلق ، وقل أعوذ برب الناس ، تعوذ بهن ، فإنه لم يتعوذ بمثلهن ، اقرأ المعوذات دبر كل صلاة ” فذكرهن
“তুমি পাঠ করো, ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’, ‘কুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক’ এবং ‘কুল আঊযু বিরাব্বিন নাস’ এ সূরাগুলো দ্বারা (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থন করো। কেননা এই সূরাগুলোর মত অন্য কিছু দ্বারা (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থনা করা যায় না। তুমি মুআওয়ায়াযাত বা আশ্রয় প্রার্থনার সূরাগুলো প্রত্যেক ফরয সালাতের পাঠ করো। তারপর তিনি উক্ত তিনটি সূরা উল্লেখ করলেন।”
(সুনান আবুদ দাউদ, তিরমিয, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ, ইবনে খুযায়মা ও ইবনে হিব্বান প্রমূখ। দেখুন ফাতহুল বারী, ৯/৬২)
উপরোক্ত হাদীস সমূহের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে এবং পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালতের পর একবার করে এ তিনটি সূরা তথা সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা মুস্তাহাব। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬●●●▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব